শেষ মুহূর্তের গোলের পর মেরিনো।
স্পেন: ২ (ওলমো ৫১’, মেরিনো ১১৯’)
জার্মানি: ১ (উইর্টজ ৮৯’)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুটো দলই একঝাঁক নতুন তারকায় ভরা। গতি আর স্কিলে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে প্রতিপক্ষকে। আসলে কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেন (Spain Football) আর জার্মানির দেখা হয়ে গেলেও বলা হচ্ছিল এটাই ইউরোর (Euro Cup 2024) সবচেয়ে হেভিওয়েট ম্যাচ। আর লড়াইটা শুধু দেশের নয়। স্পেনের রিয়াল-বার্সেলোনায় যাঁরা একই দলে খেলেন, তাঁরাই আজ মুখোমুখি ইউরোর মঞ্চে। সেই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় পেল স্পেন। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে মেরিনোর গোলে জার্মানিকে (Germany Football) হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেল লা রোখারা।
ক্লাব ফুটবলের উত্তেজনাই কি দেখা গেল ম্যাচের ৮ মিনিটে? তখন সদ্য খেলার রাশ ধরতে শুরু করেছে স্পেন। দুই উইং দিয়ে ইয়ামাল-নিকোর অশ্বমেধের ঘোড়া তখনও ছোটেনি। অন্যদিকে সানে-মুসিয়ালারাও ফুল ফোটানোর সুযোগ পাননি। সেই সময় টনি ক্রুজের ট্যাকেলে ছিটকে পড়লেন পেদ্রি। ফুটবলভক্তদের এক মুহূর্তের জন্য হলেও মনে পড়তে পারে রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার দুই তারকার লড়াইয়ের কথা। আর সেই আঘাত এতটাই গুরুতর যে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হল স্পেনের ২১ বছরের তারকাকে। তাতেই বা থামল কই? খানিক পরে গোলমুখী আক্রমণ সামলাতে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখলেন রুডিগার। কোথাও যেন খেই হারিয়ে গেল স্পেনের। তাতেও অবশ্য আক্রমণ চালিয়ে গিয়েছিল লা রোখারা। উলটো দিকে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন জার্মানির কাই হাভার্ৎজও।
অবস্থা বদলাতে দ্বিতীয়ার্ধে দুদলই একাধিক বদল করে। আর তার ফলও চলে এসেছিল হাতে-নাতে। ৪৭ মিনিটে ইয়ামালের বল ধরে প্রায় ফাঁকা গোল পেয়ে গিয়েছিলেন মোরাতা। কিন্তু স্পেনের অধিনায়ক বল পাঠিয়ে দিলেন বারের উপর দিয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত গোল এনে দিলেন দানি ওলমো। যিনি বদলে হিসেবে নেমেছিলেন আহত পেদ্রির জায়গায়। এবারও কারিগর সেই ইয়ামাল। এই নিয়ে ইউরোয় তার তিনটে অ্যাসিস্ট হয়ে গেল। বাঁদিক থেকে বল ধরে অনেকটা জায়গা তৈরি করলেন। যখন তিনি লো ক্রস রাখছেন, তখন জার্মানির ডিফেন্ডাররা কেউ জায়গাতেই নেই। পিছন থেকে এসে নিঁখুত প্লেসিংয়ে জালে বল জড়িয়ে দিলেন ওলমো।
গোল খাওয়ার পরই যেন ঘুম ভাঙল জার্মানদের। একের পর এক আক্রমণ চলল স্পেনের গোল লক্ষ্য করে। কিন্তু কখনও কুকুরেয়াদের বেপরোয়া ডিফেন্ডিং, কখনও গোলকিপার উনাই সিমনের হাত রক্ষাকর্তা হয়ে উঠল। ফুলক্রুগের শট ফিরল বারে লেগে। আর একাধিক সুযোগ মিস করলেন হাভার্ৎজ। উনাই সিমনকে সামনে পেয়েও বল তুলে দিলেন বারের উপরে। কিন্তু হারার আগে যে হার মানতে নেই, তা ফের প্রমাণ করলো জার্মানি। ম্যাচের বয়স তখন ৮৯ মিনিট। ক্রমাগত আক্রমণ সামলাতে সামলাতে বেসামাল স্পেনের রক্ষণ। সেই সময় আঘাত হানলেন ফ্লোরিয়ান উইর্টজ। অনেকটা লাফিয়ে তাঁকে বল নামিয়ে দিয়েছিলেন কিমিচ। সেখান থেকে এক ঝটকায় গোলের মুখ খুলে ফেললেন উইর্টজ।
🇪🇸 Spain are into the final 4!#EURO2024 | #ESPGER pic.twitter.com/zas6BBey0P
— UEFA EURO 2024 (@EURO2024) July 5, 2024
নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হল ১-১ স্কোরে। ততক্ষণে নিকো-ইয়ামালদের তুলে নিয়েছিল স্পেন। ফলে তাঁদের আক্রমণ আর দানা বাঁধল না। সেই সুযোগে একের পর এক আক্রমণ তুলে আনলেন ক্রুজরা। উইর্টজের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। নাকচ হয় জার্মানির তরফ থেকে একটি পেনাল্টির আবেদনও। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতেই পারে। পেনাল্টি দিলে ওখানেই হয়তো ম্যাচটা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু নাটক তখনও বাকি ছিল। ধরেই নেওয়া হচ্ছিল ম্যাচ গড়াবে অতিরিক্ত সময়ে। কে জানত, ১১৯ মিনিটে জ্বলে উঠবেন পরিবর্ত হিসেবে নামা মেরিনো। দানি ওলমোর ক্রস থেকে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে জড়িয়ে দিলেন তিনি। দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না ন্যয়ারের। মুসিয়ালাকে আটকাতে গিয়ে লাল কার্ড দেখলেন দানি কার্ভাহাল। তাতেও সেমিফাইনালে উঠে গেল স্পেন। আর ঘরের মাঠে স্বপ্নভঙ্গই অপেক্ষা করে রইল ক্রুজদের জন্য। যিনি এদিনই জার্মানির জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন। হয়তো এর পর ধীরে ধীরে বিদায় নেবেন ন্যয়ার, মুলাররাও। এদিন শুধু জার্মানি বিদায় নিল না, একটা যুগ সমাপ্ত হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়ে গেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.