ফ্রান্স: ০ (৫)
পর্তুগাল: ০ (৩)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহারাজ… একী সাজে…! বিধ্বস্ত, হতাশাগ্রস্ত, নিষ্প্রভ। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর এই ‘সাজ’ যেন অসহনীয়। যে লোকটা বছরের পর বছর ফুটবল বিশ্বকে স্রেফ শাসন করে গিয়েছেন নিজের অধ্যাবসায় আর ঔদ্ধত্যের জোরে, সেই লোকটার বিদায় হয়তো আরেকটু রাজকীয় হতে পারত। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস বলা হোক বা ফুটবল বিধাতার লেখনী, সিআর সেভেনকে ইউরো কাপের মঞ্চ ছাড়তে হল পরাজিত নায়ক হয়েই। তাও টাই-ব্রেকারে ফ্রান্সের কাছে হেরে। আগের ম্যাচে তিন তিনটি পেনাল্টি বাঁচিয়ে নজির গড়েছেন যে দিয়েগো কোস্তা, কোয়ার্টার ফাইনালে তিনিও বাঁচাতে পারলেন না পর্তুগালকে। শেষ আটেই ২০২৪ ইউরো (Euro Cup 2024) অভিযান শেষ হল পর্তুগিজদের। সেই সঙ্গে সম্ভবত শেষ হয়ে গেল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর (Cristiano Ronaldo) দীর্ঘ ইউরো সফরও।
শুক্রবারের রাতের কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইটা দুদলের জন্য দুরকম ছিল। শেষ আটের লড়াইয়ে নামার সময় হয়তো ফ্রান্সের অধিকাংশ ফুটবলারের মাথায় ঘুরছিল দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ভিটেমাটি হারানোর সম্ভাব্য আতঙ্ক। আসলে ফ্রান্সে বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে মেরিন লে পেনরা ক্ষমতায় এলে ফ্রান্স ছাড়তে হবে অ-ফরাসি কোটি কোটি মানুষকে। কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলাররা চিন্তিত নিজেদের পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আর পর্তুগাল এই ম্যাচটা খেলতে নেমেছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর জন্য। ফুটবলের যুগাবতারের শেষটা যেন হয় হাসিমুখে, সেটা নিশ্চিত করতে নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে দেওয়ার শপথ নিয়েছিলেন পেপে, ব্রুনো ফার্নান্ডেজরা।
কিন্তু মাঠের বাইরে শপথ নেওয়া আর মাঠের ভিতরে সেটা পূরণ করে দেখানো সম্ভবত এক নয়। সেটা বোঝা গেল এই হেভিওয়েট দু দলের লড়াইয়ের প্রথমার্ধে। হামবুর্গে দুই দল গোটা প্রথমার্ধ যেন স্রেফ একে অপরকে মেপেই গেল। লড়াইটা আটকে গেল মাঝমাঠেই। না ফ্রান্স, না পর্তুগাল, ফাইনাল থার্ডে সেই মানের সৃষ্টিশীলতা উপহার দিতে পারল না কোনও দলই। নিষ্প্রভ দেখাল রোনাল্ডোকে। আর এমবাপেকে দেখে নির্লিপ্ত মনে হল। তিনি যেন নিজের সেরাটা ফেলে এসেছেন প্যারিসেই। গুরু বনাম চ্যালার যে লড়াই ফুটবল বিশ্ব দেখতে চেয়েছিল, সেটা প্রথমার্ধে অন্তত সেভাবে দেখা গেল না। নিট ফল প্রথমার্ধে সেভাবে বেগই পেতে হল না দুদলের গোলরক্ষককে।
তবে প্রথমার্ধের বস্তুত একঘেয়ে, ঘুমপাড়ানি ফুটবল দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে বদলে গেল। দুদলের মধ্যেই যেন হঠাৎ প্রাণসঞ্চার হল। বিশেষ করে পর্তুগাল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পর্তুগিজদের অনেক বেশি আগ্রাসী এবং আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। ম্যাচের বয়স তখন ঘণ্টাখানেক, পর পর গোটা দুই ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন পর্তুগালের ব্রুনো ফার্নান্ডেজ। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। সুযোগ একটা এসেছিল রোনাল্ডর কাছেও। কিন্তু তাঁর শট আটকে দেন ফ্রান্সের গোলরক্ষক মাইক মেনিয়ঁ। এর পর অবশ্য খেলার গতি আবার বদলে যায়। এবার দাপট শুরু হয় ফ্রান্সের। ম্যাচের ৬৬ মিনিট এবং ৭১ মিনিটে দুটি জলের মতো সহজ সুযোগ নষ্ট করেন ফরাসি ফরওয়ার্ডরা। প্রথমটি নষ্ট করেন কালোমুয়ানি আর দ্বিতীয়টি কামাভিঙ্গা। দু দলের ফরওয়ার্ডরা এই সহজগুলি সুযোগ মিস না করলে হয়তো নির্ধারিত সময়েই খেলার ফল বেরোতে পারত। কিন্তু তেমনটা হয়নি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে কোনও দল গোলমুখ খুলতে না পারায় খেলা গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু ৯০ মিনিটে যেটা হয়নি, সেটা হল না ১২০ মিনিটেও। কোনও দলই গোলমুখ খুলতে পারল না। খেলা গড়াল টাইব্রেকারে। পেনাল্টি শুটআউটে ফ্রান্স জিতল ৫-৩ গোলে। পর্তুগালের হয়ে পেনাল্টি মিস করে বসলেন জোয়াও ফেলিক্স। সেমিফাইনালে স্পেনের মুখোমুখি হবেন ফরাসিরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.