স্পেন – ৫ (সারাবিয়া, আজপিলিকুয়েতা, ফেরান, মোরাতা, মিকেল)
ক্রোয়েশিয়া– ৩ (পেদ্রি-আত্মঘাতী, মিসলাভ, মারিও)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নাটকীয়তায় মোড়া ম্যাচ জিতে নিল স্পেন (Spain)। আট গোলের অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ হল কোপেনহেগেনে। ১২০ মিনিটের শেষে হার মানল লড়াকু ক্রোয়েশিয়া। ক্রোটদের ৩-৫ গোলে হারিয়ে ইউরো কাপের (Euro 2020) কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট জোগাড় করে নিল স্পেন। ‘বুলফাইটিং’য়ের দেশের জয় দেখে গ্যালারিতে আবেগে ভাসলেন সমর্থকরা। প্রেমিকের ঠোঁটে ঠোঁট রাখলেন প্রেমিকা। এমন দুকূল ছাপানো ভালাবাসা যে দেখা যাবে স্পেনীয় দর্শকদের মধ্যে, তার আগাম কল্পনা কি কেউ করতে পেরেছিল!
পারেনি। তা সম্ভবও ছিল না। একসময়ে ৩-১ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল স্পেন। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে চলেছে ক্রোয়েশিয়া (Croatia)। রাশিয়া বি্শ্বকাপের রানার্স আপদের হার তখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। ঠিক সেই সময়েই ফিনিক্স পাখির মতো প্রত্যাবর্তন ক্রোয়েশিয়ার। খেলার ৮৫ মিনিটে মিসলাভ এবং অতিরিক্ত সময়ে মারিওর গোলে এক্সট্রা টাইমে ম্যাচ নিয়ে যান লুকা মডরিচরা। এক্সট্রা টাইমে অবশ্য শেষ হাসি তোলা থাকে স্পেনের জন্য। স্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে পেনাল্টি মিস করায় খুনের হুমকি পাচ্ছিলেন স্প্যানিশ তারকা আলভারো মোরাতা। তাঁর পুরো পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ক্রমাগত উড়ো ফোন আসছিল। সেই মোরাতা মোক্ষম সময়ে গোল করলেন। তাঁর গোলে ৪-৩-এ এগিয়ে যায় এনরিকের দল। ক্রোয়েশিয়ার কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেন মিকেল। এক্সট্রা টাইমের প্রথমার্ধেই ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় স্পেন। দ্বিতীয়ার্ধে ক্রোয়েশিয়া মরিয়া লড়াই চালালেও আর গোল করতে পারেনি। এই ধরনের বিস্ফোরক ম্যাচই তো গ্যালারিতে ছড়িয়ে দেয় আবেগের চোরাস্রোত। সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় সমর্থকদের মধ্যে।
খেলার ২০ মিনিটে গোলকিপার উনাই সিমন মহাভুল করে বসেন। স্পেনীয় ফুটবলে প্রচলিত রয়েছে সিমনের ফুটওয়ার্ক ভাল। ঠিকঠাক পাস বাড়াতে পারেন সতীর্থদের। সুইপার কিপার হিসেবে তাঁকে পছন্দ স্পেনীয় কোচ লুইস এনরিকের। কোচের পছন্দের গোলকিপার সেই সিমনই ২০ মিনিটেই স্পেনীয় সমর্থকদের হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেন। মাঝমাঠের কাছ থেকে ব্যাকপাস করেছিলেন পেদ্রি। বল পা দিয়ে ধরতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন স্পেনের শেষপ্রহরী। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তিনি দেখেন বল জড়িয়ে যাচ্ছে জালে। এরকম গোল উপহার পেলে যে কোনও দলই ম্যাচে জাঁকিয়ে বসে।
ক্রোয়েশিয়াও ভয়ংকর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু ১৮ মিনিটের বেশি গোল ধরে রাখতে পারেনি রাশিয়া বিশ্বকাপের রানার্স আপরা। ৩৮ মিনিটে সারাবিয়া সমতা ফেরান স্পেনের হয়ে। গোলটি হওয়ার আগে একাধিক পাস খেলে ক্রোয়েশিয়ার পেনাল্টি বক্সে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয় স্পেন। যে পাসিং ফুটবলের জন্য বিখ্যাত তাঁরা, সেরকমই পাসের বিচ্ছুরণ ঘটান কোকে-সারাবিয়ারা। দ্বিতীয়ার্ধে হেডে স্পেনকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেন আজপিলিকুয়েতা। খেলার বয়স তখন ৫৭ মিনিট। ৭৬ মিনিটে ফেরান তোরেস ৩-১ করে যান। তখন কে ভেবেছিলেন ক্রোয়েশিয়া সমতা ফিরিয়ে আনবে। এক্সট্রা টাইমে স্পেন দাপট দেখালেও গোল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছিল ক্রোয়েশিয়াও। উনাই সিমন একাধিক বার গোল বাঁচান। ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হলে খলনায়ক বনে যেতে পারতেন সিমন।
[আরও পড়ুন: বেলজিয়ামের কাছে হারের পরই অধিনায়কের আর্মব্যান্ড ছুঁড়ে লাথি রোনাল্ডোর, দেখুন ভিডিও]
জাভি-ইনিয়েস্তারা অবসর নিয়েছেন। নতুন করে নিজেদের তৈরি করছে স্পেন। ঠিক তেমনই ক্রোয়েশিয়া। গতবারের বিশ্বকাপের পরে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন রাকিটিচ, মান্দজুকিচের মতো তারকারা। স্পেনের বিরুদ্ধে নামার আগে করোনার জন্য ছিটকে গিয়েছেন পেরিসিচও। ক্রোয়েশিয়া দলের প্রাণভোমরা ছিলেন একজনই। তিনি লুকা মদ্রিচ। স্কটল্যান্ডকে হারানোর নেপথ্য নায়ক ছিলেন তিনি। এদিন আর পারল না তাঁর দল। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আগেই বিদায় নিয়েছেন। এবার মদ্রিচও ইউরো ছেড়ে চলে গেলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.