ইতালি-৩ সুইজারল্যান্ড-০
(লোকাটেলি-২, ইমমোবিলে)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইতালির (Italy) কোচ রবার্তো ম্যানচিনিকে বলা হচ্ছে ‘রেনেসাঁ-ম্যান’। তাঁর হাত ধরেই অন্ধকার থেকে আলোর পথে আজুরিরা। ২০১৮ বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি পাওলো রোসির দেশ। তখন বড় দুঃসময় ইতালির ফুটবলে। কঠিন সময়ে ইতালির রিমোট কন্ট্রোল হাতে তুলে নিয়েছিলেন ম্যানচিনি। সিনিয়র প্লেয়ার বুফোঁ, আন্দ্রিয়া বারজাগলি, ডি রোসিরা জুতো জোড়া তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তখন। দলে নেই কোনও তারকা। নিন্দুকদের নখ-দাঁতে রক্তাক্ত ইতালির ফুটবল। এরকমই এক সময়ে ম্যানচিনি দলের দায়িত্ব নেন।
তার পরের ঘটনা ইতিহাস। ৫৬ বছর বয়সি কোচের হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়ায় ইতালি। নবজাগরণ ঘটে সে দেশের ফুটবলে। ইউরোর (Euro Cup 2021) যোগ্যতা অর্জন পর্বের খেলায় টানা ১০টা ম্যাচ জিতে মূলপর্বে খেলতে এসেছেন চিয়েলিনি, বোনুচ্চিরা। ইউরো কাপের মঞ্চেও ফুল ফোটাচ্ছেন ম্যানচিনির (Roberto Mancini) ছেলেরা। প্রথম ম্যাচে তুরস্ককে উড়িয়ে দেওয়ার পরে দ্বিতীয় ম্যাচেও অপ্রতিরোধ্য ইতালি। সুইজারল্যান্ডকে (Switzerland) ০-৩ গোলে হারিয়ে নক আউট পর্বে পৌঁছে গেল চারবারের বিশ্বসেরারা। জোড়া গোল করে জয়ের নায়ক লোকাটেলি। সুইসদের হারানোর ফলে এখনও পর্যন্ত টানা ২৯টি ম্যাচে অপরাজিত ইতালি।
এই ইতালি সব অর্থেই বদলে যাওয়া একটা দল। ইতালির ফুটবল উচ্চারণ করলেই ফুটবলপ্রেমীদের চোখে ভেসে ওঠে জমাটি ডিফেন্স। সেই ডিফেন্স ভেদ করা রীতিমতো কঠিন ছিল। কিন্তু এই ইতালি রক্ষণ-আক্রমণে সিদ্ধহস্ত। এই দলে নেই একটা রবার্তো বাজ্জিও বা দেল পিয়েরো বা আন্দ্রিয়া পিরলো। কিন্তু ম্যানচিনির দক্ষ হাতে পড়ে একটা দল হয়ে উঠেছে ইতালি। আর এটাই এই দলটার মূল শক্তি। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে আক্রমণের মালা গাঁথছে। দুটো উইং ধরে পাখির মতো উড়ছেন বেরারদি, ইনসিনিয়ে। এই উইং ধরে দৌড়েই সুইজারল্যান্ডের গোল মুখে হাঙরের হাঁ তৈরি করলেন বেরারদি। ডান দিক থেকে তাঁর ঠিকানা লেখা গড়ানে পাস খুঁজে পায় লোকাটেলিকে। বলটা কেবল জালে জড়ানো ছাড়া লোকাটেলির আর কিছুই করার ছিল না। ম্যাচের বয়স তখন ২৬ মিনিট।
তার মিনিট দুয়েক আগেই চোটের জন্য মাঠ ছেড়েছেন অধিনায়ক চিয়েলিনি। ভাগ্যদেবী তাঁর প্রতি সদয় হলে স্কোর লাইনে তাঁরও নাম দেখা যেত। ২০ মিনিটে ইনসিনিয়ের কর্নার থেকে গোলও করে ফেলেছিলেন দীঘল চেহারার এই ডিফেন্ডার। কিন্তু হেড করার সময় বল তাঁর হাতে লাগায় রেফারি সেই যাত্রায় গোল বাতিল করে দেন। চোটের জন্য চিয়েলিনি মাঠ ছাড়লেও সমস্যায় পড়তে হয়নি ইতালিকে। তাদের রক্ষণ ভাঙা সম্ভব হয়নি সুইসদের পক্ষে।
সুইজারল্যান্ডের কোচ পেটকোভিচ হাতের তালুর মতো চেনেন ইতালির ফুটবল। যে মাঠে ইতালি-সুইজারল্যান্ডের খেলা হল, সেই স্টাদিও অলিম্পিকো লাজিও-র ঘরের মাঠ। একটা সময়ে পেটকোভিচ লাজিওর কোচ ছিলেন। এই মাঠের নাড়িনক্ষত্র তাঁর জানা। তবুও হার মানতে হল তাঁকে। বন্যার জলের মতো নীল জার্সিধারীদের আক্রমণ আছড়ে পড়ল দুই অর্ধেই। আর তাতেই ভেসে গেলেন শাকিরি-রডরিগেজরা।
প্রথম হাফে এক গোলে পিছিয়ে থাকায় অনেকেই মনে করেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে রং ছড়াবে সুইজারল্যান্ড। কিন্তু ৫২ মিনিটে লোকাটেলির বাঁ পা স্তব্ধ করে দেয় সুইসদের। বক্সের বাইরে থেকে কামান দাগা শটে সুইজারল্যান্ডের জাল কাঁপান ইতালির ৫ নম্বর জার্সিধারী। ৮৯ মিনিটে ইমমোবিলে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেন। গোলের সংখ্যা বাড়াতেই পারত ইতালি। গোলের সুযোগ নষ্ট করায় আরও হৃষ্টপুষ্ট দেখায়নি স্কোরলাইন। অবশ্য গোল নষ্ট নিয়ে নিশ্চয় ভাববেন না ম্যানচিনি। তাঁর লক্ষ্য ইউরো কাপ।
কোনও প্রতিযোগিতায় শুধুমাত্র অংশ নেওয়ার বান্দা নন ম্যানচিনি। ইতালি কোচের বয়স তখন মাত্র ৯। একটা টেবল টেনিস টুর্নামেন্টে হেরে যাওয়ায় হাতের ব্যাট ছুড়ে মেরেছিলেন। সেটা গিয়ে আছড়ে পড়েছিল তাঁরই এক আত্মীয়ের মাথায়। জিততে চান তিনি। সেই মন্ত্র ইনসিনিয়ে-লোকাটেলিদের মনের ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন অভিজ্ঞ কোচ। সেটাই দেখা যাচ্ছে এবারের ইউরোয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.