দুলাল দে, দোহা: কাতার বিশ্বকাপের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স কেন, যদি অতীতের ফ্রান্স-ইংল্যান্ডের (France-England) দ্বৈরথও ধরি, তা হলেও অনেকটা এগিয়ে রয়েছে ইংল্যান্ড। কিন্তু শনিবার আল বায়েত স্টেডিয়ামে ইউরোপের এই দুই ফুটবল শক্তিধর দেশ মুখোমুখি হওয়ার আগে যাবতীয় তথ্য, স্ট্র্যাটেজি এসে আটকে যাচ্ছে শুধুই একটি নামে।
কিলিয়ান এমবাপে (Kylian MbappeKylian Mbappé)। চার ম্যাচে পাঁচ গোল করে ইতিমধ্যেই যিনি বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ত্রাস হয়ে উঠেছেন। তা হলে এমবাপেকে ইংলিশ ডিফেন্ডাররা আটকাবেন কী করে? এই প্রসঙ্গে আজ ফরাসি ডিফেন্ডার উপামেকানো দারুণ একটা উত্তর দিয়েছেন, “একটাই উপায়, ম্যাচের আগের রাতে ডিফেন্ডারদের তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া।”
গত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এমবাপের মোট গোল সংখ্যা এসে থমকে যায় ‘চার’-এ।
আর এই বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে নামার আগেই মোট গোল সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে এখনও পর্যন্ত পাঁচে!
যে রেকর্ড মারাদোনা, মেসি কিংবা রোনাল্ডো, কারও নেই। ’৬৬-র পর বিশ্বকাপ ঘরে ফের ফিরবে কি না, তা নির্ধারণে ইংল্যান্ডের সামনে চিনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে শুধুই এমবাপে।
যতদূর জানা যাচ্ছে, শনিবার ম্যাচে এমবাপেকে আটকানোর ভার কাইল ওয়াকারকে দিতে পারেন ইংল্যান্ড কোচ সাউথগেট। আর তা শুনে রীতিমতো হেসে উঠেছেন ফরাসি মিডফিল্ডার ইউসুফ ফোফানা। সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘এমবাপেকে যদি ওয়াকার আটকাতে পারে, তা হলে ইংল্যান্ডের জন্য অবশ্যই ভাল খবর। তবে ফরাসি লিগের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও সব দলের ডিফেন্ডাররা এই চেষ্টাই করে। কিন্তু এমবাপেকে আটকানো সহজ নয়।’’
তবে কিলিয়ান এমবাপেকে নিয়ে কাতার বিশ্বকাপের ডিফেন্ডারদের মনে যে ত্রাসই তৈরি হোক না কেন, অন্তত ম্যাচের আগেই ইংলিশ ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকার ভয় পেয়ে গিয়ে হেরে বসতে রাজি নন। বরং ফ্রান্স ম্যাচের আগে এমবাপে ইস্যুতে পাল্টা হুঙ্কার ছেড়েছেন তিনিও। “ম্যাচটা আমরা এমবাপের বিরুদ্ধে নয়। খেলব ফান্সের বিরুদ্ধে। ব্যাপারটা এমনভাবে দেখা হচ্ছে, যেন এমবাপের আগে কোনও বড় ফুটবলারের বিরুদ্ধে খেলিনি। খেলার আগে মুখে বড় বড় কথা বলার থেকে মাঠের মধ্যে এমবাপেকে আটকে সবাইকে দেখাতে চাই। আর আমরা ভালভাবে জানি, ম্যাচটা হারলেই বাড়ি ফিরে যেতে হবে আমাদের। কী ভাবছেন, এমবাপে গোল করতে আসবে আর আমি লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখব?” রীতিমতো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এদিন বলছিলেন ইংলিশ ডিফেন্ডার।
ফ্রান্স দলটা রয়েছে দোহার উত্তর দিকে। আর ইংল্যান্ড রয়েছে দক্ষিণে, আল ওয়াকরাতে। দোহাতে অবস্থানগতভাবে যেরকম বিশাল পার্থক্য, সেরকম দু’দলের খেলার স্টাইলেও।
বুধবার প্র্যাকটিসে না আসায় এমবাপেকে নিয়ে রীতিমতো ধোঁয়াশা তৈরি হয়ে গিয়েছিল দোহায়। পুরো দলকে প্র্যাকটিস করাচ্ছেন কোচ দিদিয়ের দেশঁ। কিন্তু কোথায় ফরাসি সুপারস্টার? অথচ তাঁর চোট রয়েছে কি না, তা নিয়েও ফরাসি টিম ম্যানেজমেন্টের তরফে কিছু জানানো হয়নি। তা হলে?
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহা ম্যাচের আগে গতকালের পর এদিনও প্র্যাকটিসে এসে এমবাপে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি তৈরি। অন্তত প্র্যাকটিস দেখে তো মনে হয়নি, তাঁর কোথাও সামান্যতমও চোট রয়েছে। ফলে তাঁকে কেন্দ্র করে পরপর দু’বার বিশ্বকাপ ঘরে তোলার জন্য প্রস্তুত ফরাসি শিবির। হাতে এমবাপে থেকেও ইংল্যান্ড ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় ঘুম উড়েছে বিশ্বজয়ী কোচ দিদিয়ের দেশঁ-র। ভালভাবেই জানেন, এমবাপেকে আটকানোর জন্য নিজের যাবতীয় সৈন্যসামন্ত ব্যবহার করবেন সাউথগেট। আর তাতেই তাঁর চিন্তা। বাঁদিক থেকে এমবাপের দৌড় বন্ধ হয়ে গেলে বক্সের মধ্যে জিরু পর্যন্ত বল পৌঁছবে কী করে? তবে নামটা যেহেতু কিলিয়ান এমবাপে, তাই দেশঁ-র বিশ্বাস, কোনও অস্ত্র ব্যবহার করেই এমবাপেকে আটকাতে পারবেন না সাউথগেট। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে দিদিয়ের দেশঁ বলছিলেন, “জানি, এমবাপেকে আটকানোর জন্য ওরা (সাউথগেট) সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। কিন্তু এমবাপে তো এমবাপেই। তাকে আটকানো অত সহজ নয়।”
তা হলে কি প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড দলকে নিয়ে সামান্যতম ভাবছেন না ফরাসি কোচ? যেখানে ইতিমধ্যে ১২ গোল করে বসে আছে ইংল্যান্ড। আমেরিকা ম্যাচটায় গোলশূন্য ফলাফল বাদ দিলে বাকি তিনটে ম্যাচের প্রতিপক্ষদের করুণ অবস্থা ভাবুন। ইরানকে ৬ গোল। ওয়েলস আর সেনেগালের বিরুদ্ধে ৩ গোল মেরেছে ইংল্যান্ড। যাঁদের গতি আর সেটপিসের মুনশিয়ানার কথা দোহায় সকলের মুখে মুখে ঘুরছে। ইংল্যান্ডের এই গতিকে সামান্য হলেও ভয় পাচ্ছেন ফরাসি কোচও। শনিবারের মহা ম্যাচের প্রস্তুতিতে নামার আগে বলছিলেন, “যে কোনও গতিসম্পন্ন দলের আক্রমণ আটকানো সত্যিই কঠিন। এই বিশ্বকাপে ওদের খেলাগুলি দেখে যা মনে হয়েছে, তাতে বেশিরভাগ গোলগুলি এসেছে দ্রুতগতির আক্রমণ থেকে। আর বিপক্ষ যখন দ্রুতগতির আক্রমণ করে, তখন ডিফেন্ডাররা খুব দ্রুত জায়গায় পৌঁছতে পারে না।”
ইংল্যান্ড কোচ যেরকম এমবাপেকে নিয়ে চিন্তিত, ফরাসি কোচও কি সেরকম ইংল্যান্ডের গতিশীল আক্রমণের কথা ভেবে রাতের ঘুম নষ্ট করছেন? সঙ্গে সঙ্গে দিদিয়ের দেশঁ ইংল্যান্ডের গতিশীল ফুটবলের কথা উড়িয়ে দিয়ে বললেন, “শুধু গতি দিয়ে ফুটবল হয় না কি? গোল করতে গেলে গতির সঙ্গে আরও অনেক কিছু দরকার হয়। আর আমরা সেদিকটায় নজর রাখছি।”
২০১৬-তে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ইংল্যান্ড দলটার ভোল পাল্টে দিয়েছেন গ্যারেথ সাউথগেট। রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের পর দু’বছর আগে ইউরোতে রানার্স। তঁার কোচিংয়ের ভূয়সী প্রশংসা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি নেই। তবু বিশ্বকাপ ঘরে ফেরানোর জন্য সাউথগেটের উপরেই ভরসা রেখেছে ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু বিশ্বকাপ ফের ঘরে ফিরবে কি ফিরবে না, তা নির্ধারণের আগে সবচেয়ে বড় বাধার নাম কিলিয়ান এমবাপে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.