Advertisement
Advertisement

Breaking News

পেলেকে দেখতে আবেগের বিস্ফোরণ স্যান্টোসে, চোখের জলে সম্রাটকে শ্রদ্ধা জানালেন বন্ধু ম্যানুয়েল

পেলের শেষ ইচ্ছে ছিল, তাঁর শেষযাত্রায় কখনওই যেন শোকের আবহ না থাকে।

Emotions poured in Santos Club as Pele's close friend Manuel broke down in tears । Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:January 3, 2023 12:15 pm
  • Updated:January 3, 2023 12:15 pm  

ডগলাস ডি সিলভা: একটা বছর স্যান্টোসে খেলেছিলাম। পেলের (Pele) ছেলে এডিনহো (Edinho) আমার খুব কাছের বন্ধুর একজন। স্বাভাবিকভাবেই মনে হচ্ছে এই সময় সাওপাওলোতে বসে থাকাটা ঠিক হবে না। পেলের শেষকৃত্যর সাক্ষী থাকার জন্য স্যান্টোসে চলে এসেছি।

অবশ্য এই মুহূর্তে স্যান্টোসে (Santos) সোজা গাড়ি করে যাওয়াটা খুবই সমস্যার। এমনিতে সাওপাওলোর যে অঞ্চলে আমি থাকি, সাধারণভাবে গেলে গাড়িতে ২ ঘণ্টাতেই স্যান্টোস পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু এদিন সাওপাওলো থেকে শোভাযাত্রা করে পেলের কফিন স্যান্টোস পৌঁছনোর পর, পুরো পরিস্থিতিটাই বদলে গিয়েছে। সাওপাওলো-স্যান্টোস যাওয়ার রাস্তাটায় শুধুই গাড়ির জ্যাম। 

Advertisement

[আরও পড়ুন: জোড়া ক্যানসারে আক্রান্ত নাভ্রাতিলোভা, ‘লড়াই করে ফিরব’, বার্তা টেনিস কিংবদন্তির]

 

পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে সমুদ্রতটে ঘেরা স্যান্টোসে পৌঁছতে বোঝার সুবিধার জন্য কয়েকটি চ্যানেলে ভাগ করা আছে রাস্তাগুলো।যেমন, সাওপাওলো থেকে স্যান্টোসের রাস্তাটা চ্যানেল টু। যে রাস্তায় পেলেন মা ডোনা সেলেস্তা থাকেন, সেটা চ্যানেল সিক্স। আর স্যান্টোস স্টেডিয়াম থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে চ্যানেল ‘ওয়ান’ রাস্তা দিয়ে মঙ্গলবার পেলের কফিন এগিয়ে যাবে সমাধিস্থল ‘নেকরোপোল ইকিউমেনিকা’-র দিকে।

যাঁরা এদিন স্যান্টোসে আসতে পারেননি, তাঁরা সবাই সকাল থেকে টিভির সামনে বসে পেলের শেষ যাত্রা লাইভ দেখছেন। পেলে যেদিন মারা গেলেন, সেদিন থেকেই ব্রাজিলের সব চ্যানেলের অনু্ষ্ঠান বন্ধ করে শুধুই পেলের খবর চলছে। আজকেই যেমন দেখছিলাম, স্যান্টোসের স্টেডিয়ামে মাঠের মাঝখানে পেলের কফিন যখন রাখা হল, ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে পেলের ছেলে এডিনহো। আর পেলের কফিন সমেত গাড়িটি যখন স্যান্টোসে ঢুকছে, তখন গাড়ির মধ্যে আমাদের সিবিএফ প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই বসে আছেন, আর কেউ নন স্বয়ং ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনো। ফিফা প্রেসিডেন্ট সম্ভবত মঙ্গলবার পেলের কফিন সমাধিস্থ হওয়া পর্যন্তই স্যান্টোসে থাকবেন। ধীরে ধীরে ব্রাজিলের প্রাক্তন ফুটবলাররাও এদিন ১৬হাজার আসন বিশিষ্ট স্যান্টোসে স্টেডিয়ামে হাজির হয়ে গিয়েছেন পেলেকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। টিভিতেই দেখছিলাম, চেন্নাইয়ের হয়ে আইএসএল খেলে যাওয়া এলানো মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে পেলের কফিনে।

কফিন নিয়ে যে গাড়ি স্যান্টোসের স্টেডিয়ামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, সেই গাড়িতেই ইনফান্তিনোর পাশে বসে চোখের জল মুছছিলেন বৃদ্ধ ম্যানুয়েল। এই ম্যানুয়েল হচ্ছে স্যান্টোসে খেলাকালীন পেলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। স্যান্টোসের হয়ে যখনই বাইরে খেলতে গিয়েছেন ফুটবল সম্রাট, সব সময় পেলের রুমমেট থাকতেন এই ম্যানুয়েল। প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েছেন তিনি। টিভিতেই দেখছিলাম, ইনফান্তিনো বলছেন, ছোটবেলা থেকেই ‘পেলে’ এই নামটাই তাঁর কাছে ভীষণ আবেগের। বলছিলেন, ছোট বেলায় বাবার হাত ধরে পেলেকে নিয়ে তৈরি সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সব ভিভিআইপিরা আসছেন পেলেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। কিন্তু তারজন্য সাধারণ মনুষদের পেলেকে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্যে যাতে কোনও সমস্যা তৈরি না হয়, সেদিকেও সতর্ক নজর রাখা হয়েছে। স্যান্টোস শহরটা ভীষণই ছোট্ট জায়গা। সেখানে পেলের শেষ যাত্রার মতো এত বড় অনুষ্ঠান কীভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে, তা নিয়ে সকলেই কম বেশি চিন্তিত। আসলে যতদূর শোনা যাচ্ছে, সাওপাওলোর হাসপাতালে শেষ মুহূর্তে পেলে না কি তিনটি ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। প্রথম ইচ্ছে হিসেবে জানিয়েছিলেন, তাঁর কফিন যেন স্যান্টোস ক্লাবের মাঠে রাখা হয়। দ্বিতীয় ইচ্ছে ছিল, স্যান্টোস স্টেডিয়ামের পাশে যেখানে তাঁর বাবাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে, সেখানেই তাঁকে যেন সমাধিস্থ করা হয়। আর শেষ ইচ্ছে ছিল, তাঁর শেষ যাত্রায় কখনই যেন শোকের আবহ না থাকে।

পেলে হয়তো চাইতেন না, শোকের মধ্যে দিয়ে তাঁর অন্তিম যাত্রা সম্পন্ন হোক। কিন্তু তিনি তো ফুটবল সম্রাট। সম্রাটের বিদায়ে রাজ্যবাসী তো কাঁদবেই। স্যান্টোস স্টেডিয়ামের ২ নম্বর গেটে ফুল সংগ্রহ করার জন্য স্টল রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষ সেখান থেকে ফুল নিয়ে নির্দিষ্ট গেট দিয়ে ঢুকে পেলেকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আবার স্টেডিয়ামের নির্দিষ্ট গেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। পুরোটাই এদিন চলল সুশৃঙ্খল ভাবে। স্যান্টোসের স্টেডিয়ামে এদিন তিনটে বড় পতাকা পত পত করে উড়ছে। একটি পতাকা পেলের দশ নম্বর জার্সি পরা মুখ নিয়ে।

আরেকটি পতাকায় লেখা আছে. ‘লং লিভ দ্য কিং’। আর শেষের পতাকাটিতে রয়েছে, ‘পেলে ৮২’। মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর ৬ নম্বর চ্যানেলের রাস্তায় যেখানে তাঁর মা সেলেস্তা থাকেন, সেই বাড়ির পাশ দিয়েই নিয়ে যাওয়া হবে পেলের কফিন। তারপর সেই সমাধিস্থল। যা স্যান্টোস স্টেডিয়াম থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে। তবে এদিন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা একটা কথা বলছেন, পেলের মা’ সেলেস্তা, যাঁর এখন ১০০ বছর বয়স। তিনি না কি এখনও জানেন না, তাঁর বিশ্বজোড়া খ্যাতি সমৃদ্ধ তারকা পুত্র, পেলে আর ইহ জগতে নেই। তবুও যখন মঙ্গলবার তাঁর বাড়ির সামনে দিয়ে প্রিয় পুত্রর কফিন যাবে, সেলেস্তা কি একবারও ডুকরে উঠবেন না? 

 

[আরও পড়ুন: লাদেনকে খুঁজে বের করেছিল, বিশ্বকাপের মেডেল পাহারা দিতে সেই কুকুরই কিনলেন মার্টিনেজ]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement