স্টাফ রিপোর্টার: বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুতে বোর্ড মিটিংয়ের আগে কোয়েসের বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র পেয়ে গেলেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। যা নিয়ে সুপার কাপ এবং আইএসএল খেলার ইস্যুর পাশাপাশি প্র্যাকটিস মাঠ নিয়েও সরব হবেন লাল-হলুদ কর্তারা।
ইস্টবেঙ্গল মাঠ প্র্যাকটিসের উপযুক্ত নয় বলে প্রথম দিন থেকে যুবভারতীতে প্র্যাকটিস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কোচ আলেজান্দ্রো। তা নিয়ে কম ক্ষোভ হয়নি। সুধীর কর্মকার থেকে শুরু করে বাইচুং ভুটিয়া, ইস্টবেঙ্গল মাঠে খেলেই বড় হয়েছেন। তা হলে এবার আই লিগের রানার্স দলে এমন কাঁরা ছিলেন, যাঁরা ক্লাব মাঠে প্র্যাকটিস করতে পারবেন না? এরকম আবহাওয়ার মধ্যেই মঙ্গলবার প্র্যাকটিস মাঠ নিয়ে কোয়েস আর ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের মধ্যে বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।
যুবভারতীর প্র্যাকটিস মাঠ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় সাইয়ের মাঠে প্র্যাকটিস করার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার বিকেলে সাই কর্তৃপক্ষ মাঠ বুকিং বাতিল করে দেওয়ায় তড়িঘড়ি দু’দিনের জন্য রবীন্দ্র সরোবরে প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা হয়। এখানেই প্রশ্ন। কথায় কথায় পেশাদারিত্বের নমুনা পেশ করা কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসি, মাঠ বুক করার আগে রবীন্দ্র সরোবরে গিয়ে দেখলেন না, মাঠ প্র্যাকটিসের যোগ্য কী না? মঙ্গলবার সকালে ৯টায় প্র্যাকটিস থাকলেও ফুটবলাররা হাজির হয়ে যান আটটায়। কোচ আসেন অনেক পরে। মাঠ দেখে চোখ কপালে ওঠে ফুটবলারদের। গোটা মাঠ চোরকাঁটায় ভর্তি। অসমান। এখানে-ওখানে গর্ত। দেখেই বোঝা যায়, বহুদিন মাঠের যত্ন নেওয়া হয়নি। এরই মাঝে দল নিয়ে মাঠে এলেন কোচ। তবে, ভিতরে ঢুকলেন দুই সহকারী মারিও আর কার্লোসকে নিয়ে।
মাঠ দেখেই তাঁরা অবাক। বিরক্ত। কার্লোস আর আলেজান্দ্রো মোবাইলে মাঠের ছবি তুললেন। পরে কোয়েস কর্তাদের মাঠের ছবি মেল করবেন বলে। এই সময় আলেজান্দ্রোর বিরক্তি দেখে মাঠের পাশে থাকা ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলতে শুরু করেন। সেদিকে নজর পড়তে বিরক্ত আলেজান্দ্রো মিডিয়া ম্যানেজারকে নির্দেশ দিলেন, ফটোগ্রাফারদের বের করে দিতে। অন্যান্যদিন প্র্যাকটিস শুরুর প্রথম পনেরো মিনিট ফটোগ্রাফারদের মাঠে থাকার অনুমতি দেন। এদিন মাঠ দেখে বুঝে যান, এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে। তাই প্র্যকটিস শুরুর আগেই সংবাদ মাধ্যমকে মাঠ থেকে বের করে দিতে চাইলেন। তারপর মাঠ ঘুরে মোবাইলে ছবি তুলে সহকারীদের নিয়ে আলোচনায় বসে গেলেন।
এরই মাঝে ক্লাবের দুই প্রতিনিধির কাছেও পৌঁছে গিয়েছে খবর। বিরক্ত আলেজান্দ্রো যখন বেরিয়ে এলেন, তখন ক্লাবের দুই প্রতিনিধি বলেন, “এই মাঠের থেকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের নিজস্ব মাঠের অবস্থা ভাল। সেখানে প্র্যাকটিস করা যায়। শুনে চটে যান কোচ। নিজেদের মধ্যে একদফা আলোচনা করে জানান, আজকের মতো প্র্যাকটিস বাতিল। এ খবর ততক্ষনে ছড়িয়ে পড়েছে।ফের প্রশ্ন ওঠে কোয়েস কর্তারা রবীন্দ্র সরোবরে প্র্যাকটিস করতে পারলে নিজেদের মাঠে নয় কেন? তাহলে কী ঠিক করাই রয়েছে, ক্লাবের মাঠে প্র্যাকটিস হবে না? কোয়েসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হকির জন্য ক্লাবের মাঠ পাওয়া যাবে না। ক্লাব এ কথা উড়িয়ে দিয়ে বলছে, পুরোটাই ভুল।
প্রেসিডেন্ট একাদশের প্র্যাকটিস হচ্ছে কী করে? কোয়েস কী একবারও বলেছে, ক্লাবের মাঠে প্র্যাকটিস করতে চায়? ক্লাব কর্তারা ঠিক করেছেন, বৃহস্পতিবার বোর্ড মিটিংয়ে এই ব্যাপারটা তুলবেন। ক্লাবের মাঠ তো রবীন্দ্র সরোবরের থেকে ভাল। তাহলে কী কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফ সি ক্লাব মাঠে প্র্যাকটিস করবে না? ক্লাবের অনেকে বলছেন, বোর্ড মিটিংয়ের আগে কর্তারা ভাল মতো অস্ত্র পেয়ে গেলেন। প্র্যাকটিস বাতিল হওয়ার পর বুধবারের জন্য সাইয়ের মাঠ বুক করা হয়েছে। ক্লাব সুপার কাপে খেলবে কী না এখনও ঠিক হয়নি। অথচ সুপার কাপের জন্য ফুটবলারদের নতুন ট্রাভেল টি-শার্ট এদিন চলে এল।
ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার এ ঘটনা শোনার পর বললেন, “দুর্ভাগ্যজনক। আর কী বলা যেতে পারে। সবাই দেখেছে কী হয়েছে।” ইস্টবেঙ্গলের দুই প্রতিনিধি ক্লাবের মাঠে প্র্যাকটিস করানোর প্রস্তাবে আলেজান্দ্রোর রেগে যাওয়া নিয়ে ইস্টবেঙ্গল কর্তা বললেন, “কোচ পেইড স্টাফ। ক্লাবের প্রতিনিধি যদি প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষার্থে কিছু বললে কোচ রেগে গেলে কিছু বলার নেই। কোচ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে নন।’’ সব মিলিয়ে কোয়েস আর ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে যে লড়াই চলছে, এদিন মাঠকে কেন্দ্র করে তা আরও বাড়ল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.