স্টাফ রিপোর্টার: চুক্তির জট খোলার জন্য এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোর্টে বল ফেলে দিলেন লাল-হলুদ কর্তারা। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে ‘খেলা হবে’ দিবসের প্রকল্প উদ্বোধনে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) কর্তাদের উদ্দেশ্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “একজন পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব নিয়ে প্রতি বছর পঞ্চাশ কোটি টাকা দেবে। এটা তো মুখের কথা নয়।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই পাঁচ বছরের প্রসঙ্গ তুলে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা এদিন কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেন, মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হবে, ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্টের (Shree Cement) সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করে দিতে।” কিন্তু তারপর? ইস্টবেঙ্গল কর্তারা বলছেন, “পাঁচ বছর পর দু’পক্ষই পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনায় বসে ঠিক করবে, এই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না। পারফরম্যান্স খারাপ হলে, চুক্তি শেষ।” সেক্ষেত্রে কি শ্রী সিমেন্টের ৭৬ শতাংশ শেয়ার ফিরে পেতে কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে? ইস্টবেঙ্গল কর্তারা বলছেন, “চুক্তি তো পাঁচ বছরের। তারপর চুক্তি হলে নতুন করে হবে। না হলে চুক্তির মেয়াদ শেষ। তাই কোনও পক্ষই কোনও রকম দাবি জানাতে পারে না।”
এই মর্মেই এদিন ক্লাবের সভাপতি ডাঃ প্রণব দাশগুপ্ত লিখিত বিবৃতিতে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাকে সম্পূর্ণ রূপে মান্যতা ও মর্যাদা দিয়ে ক্লাব এবং লগ্নিকারী সংস্থার মধ্যে আসন্ন ৫ বছরের জন্য চুক্তি সম্পাদনের বিষয়কে ক্লাব স্বাগত জানাচ্ছে।” এর সঙ্গে ক্লাবের গঠনতন্ত্র রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মর সুরক্ষা নিয়েও আলোচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময় চেয়েছেন ইস্টবেঙ্গল সভাপতি। ইস্টবেঙ্গলের এই দাবি শুনে শ্রী সিমেন্টের কর্ণধার হরিমোহন বাঙ্গুর (Hari Mohan Bangur) শুরুতে হেসে উঠলেন। এদিন, মঙ্গলবার প্রস্তাবিত সিমেন্ট প্রকল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে তাঁর মিটিংয়ের কথা থাকলেও, তা হয়নি। জানালেন, দু’একদিনের মধ্যেই তা হবে। আর ইস্টবেঙ্গলের এই চিঠি প্রসঙ্গে বললেন, “স্পষ্ট করে বলছি, চুক্তি মতো না চললে, আর এক টাকাও আমি ইস্টবেঙ্গলের পিছনে বিনিয়োগ করব না। একটা কথা পরিষ্কার জেনে রাখুন। আমি কখনও ইস্টবেঙ্গল ক্লাব জোর করে নিতে চাইনি। মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধেই নিয়েছি। যদি সমস্যা হয়, ইস্টবেঙ্গলের যা কিছু আছে, সব কিছু ফেরত নিয়ে নিক। আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যে টাকাটা আমি বিনিয়োগ করেছি, সেই টাকাটা আমাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। এর বাইরে আমার আর কোনও সিদ্ধান্ত নেই।”
গত কয়েকদিন ধরে ক্লাবের প্রাক্তন সচিব পার্থ সেনগুপ্তর মধ্যস্থতায় লোগো, সদস্যদের অধিকার, এক্সিট ক্লজ (Exit Clause) সহ মোট চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারপর শ্রী সিমেন্টের পক্ষ থেকে সেই চারটি বিষয়ে অনেকটাই ছাড় দিয়ে নতুন করে চুক্তিপত্র ক্লাবে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তবু জট খুলল না। মিটিংয়ের পর কার্যকরী কমিটির এক সদস্য ফোন করে ফের নতুন পয়েন্ট নিয়ে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ করলে, সঙ্গে সঙ্গে তা ফিরিয়ে দেন পার্থবাবু। পরে বলেন, “একটা কোম্পানি পাঁচ—ছ’ বছরে ৩০০ কোটি টাকা খরচের পর বলব, আপনি এবার আসুন! আমি কি পাগল যে, এরকম প্রস্তাব শ্রী সিমেন্টকে দেব!” ইস্টবেঙ্গল কর্তারা এখন লোগো, সদস্যদের অধিকার ছেড়ে দিয়ে শুধুই ‘এক্সিট ক্লজ’ নিয়ে ফোকাস করছেন। দাবি একটাই, চুক্তি ছিন্ন হলে, পুরো শেয়ার সহ স্পোর্টিং রাইটস ফিরে পাওয়ার জন্য কোনওভাবেই আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রী যদি শ্রী সিমেন্টকে এই শর্তে রাজি করিয়ে দিতে পারেন, তাহলে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব চুক্তিপত্রে এখনই সই করে দেবে। না হলে কী হবে, কেউ জানে না। তবে শ্রী সিমেন্ট কর্ণধার হরিমোহন বাঙ্গুরও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “ইস্টবেঙ্গলের এই অবাস্তব দাবি মানার কোনও সম্ভাবনাই নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.