মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য: ডুরান্ড কাপের (Durand Cup) গ্রুপ পর্বের পর এবার ফাইনাল। দোরগোড়ায় আরও একটা বড়ম্যাচ। মরশুমের প্রথম ডার্বির সময় অতিবড় লাল-হলুদ সমর্থকও আশা করেনি যে ম্যাচটা ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) জিতবে। আমি নিজেও আশাবাদী ছিলাম না ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে সেই বড়ম্যাচে মোহনবাগানকে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। এটাই ডার্বির মাহাত্ম্য। পাশাপাশি এটাও স্বীকার করে নিতে চাই, এই ইস্টবেঙ্গল আমায় অবাক করেছে।
আটের দশকে এই চেনা ইস্টবেঙ্গলকে দেখতেই তো আমরা অভ্যস্ত ছিলাম। সেই হার না মানা মনোভাব, একরোখা একটা দল। এবার, ডুরান্ডে ফাইনালে কী হবে? ডার্বিতে ফেভারিট বলে কিছু হয় না। কিন্তু এটুকু বলে রাখি, ফাইনাল একপেশে হবে না। ধারেভারে শক্তিতে মোহনবাগান (Mohunbagan) যতই এগিয়ে থাকুক, এই ইস্টবেঙ্গল কিন্তু ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
দলে ভাল প্লেয়ার থাকলেই ম্যাচ জেতা যায়, এই ধারণায় আমি বিশ্বাস করি না। টিমে প্লেয়ারদের মধ্যে বোঝাপড়াটা থাকতে হবে। শরীরীভাষায় জেতার খিদে থাকতে হবে। হীনম্মন্যতাকে জয় করার লড়াকু মানসিকতা থাকতে হবে। মোহনবাগান ম্যাচে আমি সেগুলো খুঁজে পেয়েছি ইস্টবেঙ্গলের খেলায়। এসব তখনই সম্ভব হয়, যখন একজন কোচ তাঁর দলকে একসূত্রে বাঁধতে পারেন। সেদিক থেকে অবশ্যই কৃতিত্ব প্রাপ্য ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের। দলটার মধ্যে তিনি একটা বন্ডিং তৈরি করতে পেরেছেন। প্রতিটি প্লেয়ার নিজেদের ভূমিকা অনুযায়ী খেলছে। নিজের অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাসের মিশেলে দলটার মধ্যে যে কুয়াদ্রাত হার না মানা মনোভাব ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন তার জ্বলন্ত উদাহরণ ডুরান্ড সেমিফাইনালে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড ম্যাচ।
বিশ্বাস করুন, ০-২-এ পিছিয়ে থাকা অবস্থা থেকে ওইরকমভাবে অবিশ্বাস্য কামব্যাক করবে ইস্টবেঙ্গল। টাইব্রেকারে ম্যাচ জিতে ফাইনালে যাবে, আমি কল্পনাও করিনি। অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম লাল-হলুদের লড়াই দেখে। মনে পড়ে যাচ্ছিল ১৯৮০-র একটা ম্যাচের কথা। সেবার বোম্বেতে (অধুনা মুম্বই) রোভার্স কাপের সেমিফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচ। প্রথমার্ধে ০-২ পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে ২-২ করেছিল ইস্টবেঙ্গল। পরেরদিন রিপ্লেতে আমরা জিতেছিলাম। এই ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাসের ছাপ দেখতে পাচ্ছি।
নন্দকুমার, মহেশ সিং ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলছে। ডিফেন্সে লালচুংনুঙ্গা থেকে হরমনজ্যোত সিং খাবরা ভরসা দিচ্ছে। বিদেশি প্লেয়ারগুলো খুব ভাল। বিশেষ করে সিভেরিও-র কথা বলতেই হবে। ও আসার পর লাল-হলুদের আপফ্রন্ট অনেক বেশি সচল দেখাচ্ছে। এমনকী গতবার যে দলের টপ স্কোরার, সেই ক্লেটন সিলভা প্রথম দলে ঢুকতে পারছে না। বোঝাই যাচ্ছে, দলটার মধ্যে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা আছে। রিজার্ভের প্লেয়াররাও নিজেদের উজাড় করে দিতে তৈরি। এমন মানসিকতা যেকোনও প্রতিপক্ষকে হারানোর আত্মবিশ্বাস তৈরি করে।
আর মোহনবাগান? শেষ ম্যাচে তারা ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারেনি। ডার্বি হারের সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে এই ম্যাচটা জিততে জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেরা একশো শতাংশ ঝাঁপাবে। এমনিতেই মোহনবাগান সেট টিম। তারপর জেসন কামিংসের মতো বিশ্বকাপার, আর্মান্দো সাদিকু সহ বিশ্বমানের বিদেশিদের যোগদানে এবার সবুজ-মেরুন অনেক শক্তিশালী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.