স্টাফ রিপোর্টার: ৪১ দিনের ফারাক। ফের মুখোমুখি ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। মহাম্যাচের আগে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে পৌঁছে গিয়েছে। তেতে রয়েছেন লাল-হলুদ, সবুজ-মেরুনের সমর্থকরাও।
প্রথম পর্বের ডার্বি ছিল ইস্টবেঙ্গলের হোম ম্যাচ। এবার আয়োজকের ভূমিকায় মোহনবাগান। তাদের হোম ম্যাচ। হাই ভোল্টেজ ম্যাচের আগে যে শিবিরে আপাতত বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রথমেই চলে আসছে খালিদ জামিলের নাম। মোহনবাগান কোচ কলকাতায় পা রেখেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের হাত ধরে। সেই পর্ব এখন অতীত। কিন্তু পরিসংখ্যান চাপা থাকে না। ইতিহাস বলে, ইস্টবেঙ্গলের কোচ থাকার সময় তিনি একবারও ডার্বি জিততে পারেননি। মোহনবাগানের হয়ে ডার্বির ভাগ্যের চাকা কি ঘুরবে? স্বয়ং মোহনবাগান সমর্থকদেরও এই এক প্রশ্ন। খালিদের পক্ষে একটা ব্যাপার পজিটিভ। মোহনবাগান কোচ হিসাবে শংকরলাল চক্রবর্তী সরে যাওয়ার পর খালিদ দায়িত্ব নিয়েছেন। এবং রাতারাতি বদলে গিয়েছে মোহনবাগান। বেশ কয়েকটি ম্যাচ জিতে তারা এখন চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই ডার্বি হারের প্রসঙ্গ চলে আসছে। খালিদ আগের দিনই ব্যাপারটি নিয়ে বলে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দল যেখানে ভাল ছন্দে আছে সেখানে তিনি নেতিবাচক ভাবতে যাবেন কেন? তবে মানসিক লড়াই তিনি শুরু করে দিয়েছেন অন্তত দিন সাতেক আগে থেকেই। বারবারই সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ইস্টবেঙ্গল অনেক ভাল টিম। অর্থাৎ হাই ভোল্টেজ লড়াইয়ের আগে চাপ প্রতিপক্ষের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়ার পরিকল্পনা।
এদিক সাংবাদিক সম্মেলনে মোহনবাগান কোচ বলছিলেন, “সোনি আমার দলের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার। এই কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। তবে এটাও বলছি, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে আমার কোনও রাগ নেই। এটা একটা নতুন ম্যাচ। সেই মতোই প্রস্তুতি নিয়েছি।” এরপর তিনি জানিয়েছেন, “ডার্বির গুরুত্ব আমি জানি। আর এই ম্যাচ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। না জিতলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। জিততে পারলে চ্যাম্পিয়নশিপের রাস্তা সামনে খুলে যাবে।”
দ্বিতীয় প্রশ্ন, সোনি নর্ডি। প্রথম পর্বের ডার্বিতে যাঁর চোট ছিল। তখনকার মোহনবাগান কোচ তাঁকে নামানোর ঝুঁকি নেননি। কিন্তু সোনি ছন্দে ফিরতেই যাবতীয় হিসেব-নিকেশ বদলে যেতে শুরু করেছে। নেরোকোর বিরুদ্ধে দুরন্ত গোলও করেছেন হাইতির তারকা ফুটবলার। পরিসংখ্যান বলে ডার্বিতে সোনির রেকর্ড বেশ ভাল। সোনি নিশ্চয়ই এসব হিসাব নিয়ে মাঠে নামবেন না। এতদিনে তিনি ভাল করে জেনে গিয়েছেন, ডার্বিতে কবে কী হয় কেউ জানে না। তবে সে যাই হোক, সোনিকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছে মোহনবাগান ফ্যানেরা। প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গল শিবিরের ছবিটা কেমন? লিগ শীর্ষে থাকা চেন্নাইয়ের কাছে হেরেছে তারা। তবে অ্যারোজকে হারিয়ে জয়ের রাস্তায় ফিরতে সমস্যা হয়নি আলেজান্দ্রোর টিমের। ডার্বির আগের দিন ইস্টবেঙ্গল কোচ বলছিলেন, প্রথম পর্বে কী হয়ে, তা তিনি মনে রাখতে চান না। স্প্যানিশ কোচের কাছে এখন সব ম্যাচই ফাইনাল। মহাম্যাচের আগে ইস্টবেঙ্গেলর প্লাস পয়েন্ট স্ট্রাইকার এনরিকের দলে যোগ দেওয়া। চোট সারিয়ে তিনি সুস্থ। কিন্তু এতদিন খেলার মধে্য ছিলেন না। তাঁকে কী খেলানো হবে? ইস্টবেঙ্গল কোচ তা খোলসা না করলেও একটা ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন। এবং সেটা ঠিক হলে ডার্বিতে এনরিকে নামছেন। তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে বলছিলেন, “ও এখন ফিট রয়েছে। ডার্বিতে নামতে সমস্যা নেই।” লাল-হলুদ শিবিরে বাকি বিদেশিদের নিয়ে সমস্যা নেই।
এদিন সকালে সল্টলেকে প্র্যাকটিস করেছে ইস্টবেঙ্গল। মাঝে ক্লোজ ডোর অনুশীলনও হয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেজান্দ্রো বলছিলেন, “ছেলেদের ফোকাস ধরে রাখতেই এটা করতে হয়েছিল। এই ম্যাচ আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ওদের সোনি আছে জানি। ও ভাল ফুটবলার। কিন্তু শুধু ওকে নয়, গোটা মোহনবাগান টিম নিয়েই ভাবতে হচ্ছে এখন।”
[থিম মোহনবাগান, সবুজ-মেরুন পোশাকেই বিয়ে সারলেন শান্তিপুরের সুমন]
দুই দলের সমর্থকরাও পিছিয়ে নেই। স্টেডিয়ামে চমক দেওয়ার ব্যবস্থাও তারা শুরু করে দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে শুরু করেছে প্রতিপক্ষকে খোঁচা দেওয়ার পোস্টও। লিগ টেবলের কী অবস্থা? এটাই, দুই দলের কাছেই রবিবারের ডার্বি বেঁচে থাকার লড়াই। পয়েন্ট নষ্ট মানেই খাদের আরও কিনারে পৌঁছে যাওয়া। ১৩ ম্যাচ খেলে চেন্নাইয়ের পয়েন্ট ৩০। ইস্টবেঙ্গলের সেখানে ১২ ম্যাচে ২২। ডার্বি জিতলে ভাল মতো চ্যাম্পিয়নশিপের রাস্তায় ঢুকে পড়বে তারা। মোহনবাগানের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা প্রায় এক। ইস্টবঙ্গলকে হারালে এক লাফে তারা প্রথম চারের মধে্য ঢুকে পড়তে পারবে। সঙ্গে সোনি নর্ডিরা পেয়ে যাবেন চ্যাম্পিয়নশিপের গন্ধও। এতএব, অপেক্ষা এখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। যুবভারতীয় শেষ হাসি কারা হাসে সেটাই এখন দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.