দুলাল দে: ইস্টবেঙ্গল ক্লাব (East Bengal Club) কিংবা শ্রী সিমেন্ট কর্তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শেষে পরিস্থিতি কী হবে, সেটা সম্পূর্নই অন্য ব্যাপার। কিন্তু তার আগেই পুরনো ইস্যুতে বড় সড় সমস্যার মেঘ ছেয়ে যেতে পারে লাল-হলুদে। কোয়েস ইস্টবেঙ্গলের সময়কার ফুটবলার এবং সহকারি কোচের বেতনের ইস্যুতে প্রায় ৪ কোটি টাকার জরিমানা ফিফা অথবা ক্যাশের (কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টস) থেকে আসতে চলেছে লাল-হলুদে। সে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে শ্রী সিমেন্ট থাকুক, কিংবা তারা সরে গিয়ে ভবিষ্যতে অন্য কেউ আসুক, আর্থিক জরিমানাটা কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ঘাড়েই আসতে চলেছে। সময় মতো বিপুল আর্থিক জরিমানা না দিতে পারলে, সেক্ষেত্রে বিদেশি ফুটবলার সই করানোর ক্ষেত্রে ফিফার নিষেধাজ্ঞার আওতায় চলে আসবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব।
কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসির সময়কার কিছু ফুটবলার এবং সহকারি কোচের বেতন নিয়ে সমস্যাটা অনেকদিন ধরেই চলছে। এদিকে, যাবতীয় হিসেবপত্র বুঝিয়ে দিয়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি ছিন্ন করে দেড় বছর আগেই চলে গেছে কোয়েস। ফলে ইস্টবেঙ্গল ফুটবল দলের আর্থিক কোনও দায়ভার নিতে তারা আর রাজি নয়। ক্লাব চুক্তিতে সই না করায়, নতুন ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্টও কোয়েসের সময়ের ফুটবলারদের বেতনের কোনও দায়ভার নেবে না। অথচ কোয়েসের থেকে শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল এফসি নামকরণের সময় পুরনো সব আর্থিক দায়ভার নেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল তারা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন ইনভেস্টর নতুন করে আর কোনও আর্থিক বিনিয়োগ করতে রাজি নয়। ফলে বিদেশি ফুটবলার সই করানো নিয়ে কিন্তু খুব শীঘ্রই মারাত্মক একটা সমস্যার মুখোমুখি হতে চলেছে লাল-হলুদ।
কোয়েসের সময়কার ফুটবলার, কোচেদের বকেয়া বেতনের ব্যপারটা শুরুতে ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছেই ছিল। সেই সূত্রে সবার বেতন মিটিয়ে দেওয়ার জন্য ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে চিঠিও পাঠায় ফিফা। কিন্তু ক্লাবের পক্ষে সম্ভব ছিল না, কোয়েসের সময়কার সেই বিপুর বকেয়া অর্থ মেটানোর। ফলে পুরো ব্যপারটা এখন চলে গিয়েছে ক্যাশের অধীনে।
যে কোনও ক্রীড়াবিদ তাঁর ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে অখুশি হলে সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য ক্যাশের কাছে আবেদন করতেই পারেন। ক্যাশ হচ্ছে-স্পোর্টসের সঙ্গে যুক্ত যে কোনও পক্ষের চূড়ান্ত আবেদনের জায়গা। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব আর কোয়েসের ফুটবলারদের মধ্যে ব্যাপারটাও এখন ক্যাশ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। যেখানে ইতিমধ্যে আইনজীবির মাধ্যমে সওয়ালও করেছে ক্লাব। ফলে আসা করা যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেও ক্যাশের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও চলে আসবে। আর সেক্ষেত্রে যদি তাই হয়, তাহলে সত্যিই খারাপ খবর আসতে চলেছে ক্লাবের জন্য। কারণ, কে ইনভেস্টর থাকবে, আর কে চলে যাবে সেটা বড় ব্যাপার নয়। শাস্তিটা কিন্তু নেমে আসবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের উপর।
এদিকে, যদি শেষ পর্যন্ত শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ছেড়ে চলে যায়, তাহলে কিন্তু যে অবস্থায় তারা ক্লাবের দায়িত্ব নিয়েছিল, ঠিক সেই অবস্থায় ক্লাবের দায়িত্ব ছাড়বে। অর্থাৎ তাদেরও দল চালাতে গিয়ে বাজারে যে আর্থিক দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে, কোয়েসের মতো তারাও চাপিয়ে দেবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের উপর। যা পরবর্তী ইনভেস্টরকে বহন করতে হবে। গত মরশুমে দল চালাতে গিয়ে যা শোনা যাচ্ছে, তাতে নাকি বিভিন্ন ক্ষতি পূরণ আর বেতন দিতে গিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে। যদি তারা চলে যায়, তাহলে এই ৫০ কোটি টাকার বকেয়া অবশ্যই ক্লাবের উপর চাপাবে না। চাপাবে সেটাই যেটা বছর শেষে আর্থিক ব্যালান্স শিটে লোন হিসেবে থাকবে। সেক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে আর্থিক পরিমাণটা না কি ২০ থেকে ২২ কোটির মতো। আর সমস্যা মেটানোর জন্য এই মুহূর্তে তারা কাউকে ধরাধর করতেও চাইছেন না। এক্ষেত্রে ইনভেস্টরের বক্তব্য হল, তারা নিজের ইচ্ছেতে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। তাহলে কেন থাকার জন্যই বা দরবার করতে যাবেন। শর্ত মেটালে আছেন, নাহলে নেই। বলটা তারা ফেলে দিতে চাইছেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কোর্টে।
তবে এই মুহূর্তে উভয় পক্ষে যা চলছে, সেটা পুরোটাই স্নায়ুর লড়াই। কে আগে ভেঙে পড়ে সেটাই দেখার। তবে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, প্রথম বছরে আইএসএলের স্বাদ পাওয়া শ্রীসিমেন্ট কিছুতেই ইস্টবেঙ্গলকে ছেড়ে দিয়ে যাবে না। আবার ইস্টবেঙ্গল কর্তারাও এই করোনা অধ্যুষিত সময়ে শ্রী সিমেন্ট-সহ মতো ধনী ইনভেস্টরকে ছেড়ে দেবে না। তাই আলাপ আলোচনায় শেষ মুহূর্তে একটা পথ ঠিক বেরোবেই। কিন্তু তার আগে ক্যাশ যদি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে বড় সড় আর্থিক জরিমানা করে বসে, কেউ জানে না কি হবে। ফিফা তাহলে বিদেশি ফুটবলার সই করানোই বন্ধ করে দেবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.