সুভাষ ভৌমিক: বিধি বাম হলে যা হয়! কর্ণের চাকাও তখন গ্রাস করে মেদিনী। না হলে কুরুক্ষেত্রে কর্ণকে কে হারাত? তেমনই, প্রাক-শতবর্ষে, ২০১৯–এর ১ আগস্ট, আসন্ন শতবর্ষ (Centenary Year) উদযাপন যেভাবে শুরু করেছিল ইস্টবেঙ্গল, কোভিড–১৯ (Corona) তাকে ছন্নছাড়া করে দিয়ে গেল। না হলে, এবার ২০২০–র ১ আগস্টে তো কলকাতা (Kolkata) ভেসে যেত লাল–হলুদ সুনামিতে। অগণিত সমর্থকের (Supporters) আকাশচুম্বী প্রত্যাশা যে ক্লাবকে টেনে নিয়ে এসেছে এই শতবর্ষে, বিশ্বজুড়ে তাঁরা ঠিকই পালন করবেন তাঁদের প্রিয়তম ক্লাবের শতবর্ষ, সেটা আমি নিশ্চিত। যে জাঁকজমক আমরা দেখেছিলাম গতবার, এবার পরিকল্পনা ছিল তাকেও ছাপিয়ে যাওয়ার। অতিমারীর কারণে তা মাঠে মারা গেল। কিন্তু কিছু করার নেই। সবসময় সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা ঠিক কতটা আবেগপ্রবণ, বহুবারই খেলতে খেলতে বুঝেছি। আরও বেশি করে বুঝেছিলাম ২০০৩ সালে আশিয়ান কাপ (Asian Cup) জয় করে কলকাতায় ফেরার দিন জনসমুদ্র দেখে। সূর্য চক্রবর্তী, পূর্ণ দাস, পরিতোষ চক্রবর্তী, রাখাল মজুমদার হয়ে লক্ষ্মীনারায়ণ, মুর্গেশ, আপ্পারাও, আমেদ খান, বেঙ্কটেশ– কত তারকা, সেই শুরুর সময় থেকেই! এমনকী, সেই যুগের বিদেশিরাও কিংবদন্তি! ফ্রেড পাগসলে, মাসুদ ফকরি। ইস্টবেঙ্গলকে (East Bengal) ফুটবল মাঠে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তঁারা, সাতের দশকে সেখানেও নতুন মাত্রা। তারপর তো নতুন সহস্রাব্দে এসেও জয়যাত্রা অব্যাহত!
লাল–হলুদের প্রিয় সমর্থকদের বলছি, ধৈর্য ধরুন। প্রবাদেই আছে, সবুরে মেওয়া ফলে। কথার কথা নয়। জনজীবন বিপর্যস্ত এখন। অযথা তাড়াহুড়ো মানেই বিপদ ডেকে আনা। নিজের জন্য, সবার জন্য। এমন অতিমারী আমাদের জীবনে কখনও আসেনি। তাই তো মাঠের লড়াইটাকেই টেনে নিয়ে যেতে হবে তুলনায় অনেক বড় জীবনের মাঠে। আমি নিশ্চিত, এই কালো মেঘ ঠিক কেটে যাবে। আবার দেখতে পাব লাল–হলুদের সোনালি রেখা। আপাতত কিছু দিন থাকা যাক সেই মেঘ কেটে যাওয়ার অপেক্ষায়।
২০২০–তে হল না। উৎসব করতে দিল না করোনা। ২০২১–এর ১ অাগস্ট ১০১–তম জন্মদিন উদ্যাপনের সময়, জীবিত সব ফুটবলারকে এক ছাতার তলায় এনে আরও বড় অনুষ্ঠান করেই পালিত হবে, এমন কিছু হবে যা এখন হয়ত অনেকেই ভাবতেই পারছি না! আমি তো এই আশাতেই আছি, থাকবও! ইস্টবেঙ্গল আমার কাছে নিছক ক্লাব নয়। বরং একটা ধর্ম। ‘ইস্টবেঙ্গলিয়ান’ যে ধর্মের নাম। এই সময়ে যখন বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দা, তখন চলুন, আমরা যারা এই ধর্মের অনুগ্রাহী তারা এগিয়ে আসি, ক্লাবের আর্থিক দায়ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে ধর্মের রক্ষা করি!
আরও একটা কথা। ‘আইএসএল’ নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। বেশিরভাগই খেদোক্তি ও বক্রোক্তির চর্বিতচর্বণ। আমি বলি কি, ‘ISL’–এর জন্য ইস্টবেঙ্গলের অপেক্ষায় থাকার দরকার নেই। বরং ‘ISL’–ই অপেক্ষায় থাকুক ইস্টবেঙ্গলের জন্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.