আলাপন সাহা: মোহনবাগান কোচ কিবু ভিকুনা যেখানে মরশুমের প্রথম ম্যাচ নিয়ে প্রচণ্ড সতর্ক, মহামেডান কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য সেখানে ধর্মসংকটে। টিম জিতলে সুব্রত খুশি হবেন। আবার মোহনবাগান হারলে দুঃখ পাবেন। বৃহস্পতিবার ক্লাবে বসে সুব্রত বলছিলেন, “কী বলি বলুন তো? অদ্ভুত একটা পরিস্থিতির মধ্যে আমি দাঁড়িয়ে। চাইব আমার টিম জিতুক। আবার মোহনবাগানের হারও মেনে নিতে পারব না।”
শুধু কোচদের কথা কেন বলছি, দুই শিবিরেও অদ্ভুত বৈপরীত্য। মোহনবাগান যেখানে গোছানো, তুলনায় মহামেডান অগোছালো। তীর্থঙ্কর সরকার, ইমরান ফারুক, হীরা মণ্ডলের মতো দু’তিনজন পরিচিত মুখ। ধারে-ভারে মোহনবাগান যে কয়েকশো গুণ এগিয়ে সেটা বিচার করতে ফুটবল পণ্ডিত হতে হবে না। চার বিদেশি সবুজ-মেরুনে। টিমে প্রচুর অপশন। কোচ ভিকুনা বলছেন, “দলে এত বিকল্প যে কোনও কোচের কাছেই তা মাথাব্যথার।” শোনা গেল, শুক্রবার ফ্রান গঞ্জালেজ হয়তো শুরুতে থাকবেন না। ফ্রান মোরান্ত, বেইতিয়া, চামোরাকে নিয়ে টিম সাজাচ্ছেন ভিকুনা। তবে স্ট্র্যাটেজি নিয়ে একটা শব্দও খরচ করছেন না ভিকুনা। বললেন, “টিম কম্বিনেশন নিয়ে কিছু বলব না। কাকে খেলাব এটা ফুটবলারদেরও বলছি না।” শুরু থেকে না খেললেও গঞ্জালেজ প্রথম আঠায়োর থাকছেন।
মহামেডান কোচের এহেন বিলাসিতার সুযোগ নেই। টিমে চার বিদেশি থাকলেও তিনজনের সই হয়েছে। একজনের আইটিসি আসেনি। তবু আত্মবিশ্বাসী সুব্রত। সেই মেজাজি সুব্রত। বলছেন, “প্রথম ম্যাচে জলে নেমে পড়ছি। জানি হাঙর, কুমির আসবে। সেসব সামলে এগোতে হবে। একটা কথা বলে রাখি, ওদের স্প্যানিশ আছে না কে আছে, সে’সব দেখছি না। ওসব অনেক দেখেছি। খেলাটা হবে মাঠে। মনে রাখবেন মহামেডন বড় টিম। শুক্রবার যদি আমরা হারিয়ে দিই, তাহলে অঘটন হয়েছে প্লিজ বলবেন না।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে দু’টো টিমের প্রেস কনফারেন্স ছিল। কথা ছিল দুই টিমের কোচ-সিনিয়র ফুটবলার আসবেন। কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনের কথা শুনে মহামেডান কোচ জানিয়ে দেন, তিনি যেতে পারবেন না। শুনে কর্তাদের মাথায় হাত। ডুরান্ড ফেডারেশন স্বীকৃত টুর্নামেন্ট। নিয়ম ভাঙলে ক্লাব জরিমানার মুখে পড়বে। তাঁরা কোচকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। লাভ যে কিছু হয়নি, সেটা বিকেলই বোঝা গেল। প্রেস কনফারেন্সে মহামেডান অধিনায়ক কামরান ফারুক বললেন, “বাড়ির কাজের জন্য কোচ আসতে পারেননি।”
মহামেডান কোচের যেখানে চরম ঔদ্ধত্য, কিবু সেখানে শান্ত। এমনিতে বেশি কথা বলেন না। গত একমাসে তাঁকে কেউ মেজাজ হারাতে দেখেছেন, এমন কথা বলা যাবে না। কিবুর মতো ঠান্ডা তাঁর টিমও। কেউ বাড়তি কথা বলছেন না। মাঠে সেরাটা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। মোহনবাগান কোচ সাংবাদিক সম্মেলনে এলেন চামোরাকে নিয়ে। ইংরেজি বোঝেন না। দোভাষীর কাজটা করলেন কিবু নিজেই। ক্লাবের বাকিদের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন। এখানকার পরিবেশও দুর্দান্ত লেগেছে তাঁর। স্প্যানিশ স্ট্রাইকারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নতুন পরিবেশে কতটা মানিয়ে নিতে পেরেছেন? বললেন, “পুরোপুরি মানিয়ে নিয়েছি। আমি খুশি। টিম-টিমমেট সবাই ভাল।” আর প্র্যাকটিসে যা সব গোল-টোল করছেন, সেটা সমর্থকদের আরও নিশ্চিন্ত করবে। তবে চামোরার কাছে টিম আগে। বললেন, “আমার কাছে টিমই গুরুত্বপূর্ণ টিম। টিমের পারফরম্যান্স। ভাল হলে আর কি চাই।”
মহামেডান সম্পর্কেও কিবু খোঁজখবর নিয়েছেন। শুনেছেন ওরাও ভারতীয় ফুটবলে এক ঐতিহাসিক ক্লাব। দলে চার বিদেশি আছে। তাঁদের নিয়ে রীতিমতো হোমওয়ার্ক করেই যে নামছেন কিবু, সেটা বোঝা গেল। এসবের বাইরে খবর বলতে একটা। ধনচন্দ্র সিংকে অধিনায়ক ঘোষণা করে দিলেন ভিকুনা। একইসঙ্গে বললেন, তাঁর টিমে আরও তিন-চারজন লিডার আছে। মরশুমের প্রথম ম্যাচে নামার আগে টিম মোহনবাগান কতটা সুখী পরিবার, বোঝা গেল?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.