ইস্টবেঙ্গলের ঘরে ডুরান্ড কাপ দেখতে চাইছেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যান।
সব্যসাচী বাগচী: খাতায়-কলমে তিনি অনেক বছর আগে থেকেই ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) ক্লাবের কাছে প্রাক্তন। তবে সব হিসেব তো আর খাতায়-কলমে হয় না। স্বর্গীয় মান্না দে-র সেই বিখ্যাত গানের লাইন ধরে লিখতেই হয়, ‘যদি হৃদয়ে লেখ নাম। সে নাম রয়ে যাবে।’ ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের (Trevor James Morgan) ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক তাই। সেটা ২০১০ সাল। লাল-হলুদের হাল ফেরাতে এই সাহেব কোচের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল দলের দায়িত্ব। ব্যস বাকিটা ইতিহাস। টোলগে, পেন, রবিং সিং, মেহতাব হোসেন, নওবা, ভাসুমদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন মনে রাখার মতো লড়াকু দল। আই লিগ না পেলেও, দু’বার ক্লাবে ফেডারেশন কাপ এনে দিয়েছেন। এহেন মর্গ্যানের হৃদয়ে এখনও ইস্টবেঙ্গল রয়ে গিয়েছে। আর তাই তো মরশুমের দ্বিতীয় ডার্বির আগে প্রিয় দলকেই এগিয়ে রাখলেন সাহেব কোচ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের (Mohun Bagan) বিরুদ্ধে ডুরান্ড কাপের মেগা ফাইনালে (Durand Cup Final 2023) নামার আগে সংবাদ প্রতিদিন.ইন-কে অস্ট্রেলিয়া থেকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন।
প্রশ্ন: মরশুমের দ্বিতীয় ডার্বি। সেটাও আবার ডুরান্ড কাপের ফাইনাল। ইস্টবেঙ্গল কি এগিয়ে থাকবে?
মর্গ্যান: কলকাতায় থাকার সময় অনেকের মুখে শুনেছি ডার্বি ফিফটি-ফিফটি। তবে এই প্রথমবার আমার মনে হচ্ছে এই ডার্বিটা ৬০-৪০। এবং আমার ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে শুরু করবে। কারণ এই ডুরান্ডের প্রথম ডার্বিতে আমরা কিন্তু চাপের মুখে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম।
প্রশ্ন: মোহনবাগানের তারকার সমারোহ। জুয়ান ফেরান্দোর কাছে একাধিক অস্ত্র। তবুও আপনি ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে রাখছেন?
মর্গ্যান: হ্যাঁ এগিয়ে রাখছি। এর পিছনে যেমন আবেগ আছে। তেমনই আছে যুক্তি। অনেকে আমার মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি করতে পারেন। তবে প্রথম ডার্বি দেখে আমার মনে হয়েছিল মোহনবাগান জয়ের ব্যাপারে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিল। ভেবেছিল ইস্টবেঙ্গলকে হেলায় হারিয়ে দেবে। আর সেখানেই মোহনবাগান ভুল করেছিল। সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। ফাইনালে অবশ্য অনেকেই মোহনবাগানকে ফেভারিট হিসেবে ধরে নিয়েছে। তবে আমার মনে হয় এই ডার্বিতেও গ্যালারিতে মশাল জ্বলবে।
প্রশ্ন: আপনার মতে ফাইনালের সম্ভাব্য স্কোরলাইন?
মর্গ্যান: আমার ধারণা ইস্টবেঙ্গল ৩-০ ব্যবধানে ফাইনাল জিতবে।
প্রশ্ন: আপনি প্রথমবার এসেই ইস্টবেঙ্গলকে বদলে দিয়েছিলেন। কার্লেস কুয়াদ্রাতও কি লাল-হলুদের সেই পুরনো ইতিহাস ফিরিয়ে আনতে পারবেন?
মর্গ্যান: খুব অল্প সময়ের মধ্যে কার্লেস কুয়াদ্রাত কলকাতার বুকে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। মনে রাখবেন ডুরান্ড কাপ কিন্তু প্রি-সিজন চলছে। এমন সময় প্রতিটা দলের মধ্যে ঠিকমতো বোঝাপড়া গড়েই ওঠে না। সেখানে দাপটের সঙ্গে ডার্বি জয়ের সঙ্গে পিছিয়ে থেকেও নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডকে হারিয়ে দেওয়া। একটা দল একজোট হয়ে খেললে তবেই এমন সাফল্য আসে। এখানেও সেটাই হচ্ছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে কুয়াদ্রাতের জন্যই। তবে ওকে এবং ফুটবলারদের আরও সময় দিতে হবে। কয়েকটা ম্যাচ হারলে কিংবা খারাপ ফল হলে কোচ-ফুটবলারদের মুন্ডুপাত করলে চলবে না। এই বিষয়ে ক্লাব কর্তা ও সমর্থকদের বড় ভূমিকা নিতে হবে।
প্রশ্ন: নন্দকুমার প্রথম ডার্বিতে নায়ক ছিলেন। কেমন লেগেছিল ওঁর পারফরম্যান্স?
মর্গ্যান: শুধু প্রথম ডার্বি নয়, নর্থ-ইস্টের বিরুদ্ধেও নন্দকুমার দারুণ পারফরম্যান্স করেছে। ভবিষ্যতে ওর মধ্যে বড় স্ট্রাইকার হওয়ার সব গুন আছে। তবে সেইজন্য নন্দকুমারকে আরও ধারাবাহিক হতে হবে। সঙ্গে বজায় রাখতে হবে নিয়মানুবর্তিতা।
প্রশ্ন: গত আইএসএল-এ ইস্টবেঙ্গল ব্যর্থ হলেও ক্লেটন সিলভা দারুণ ফর্মে ছিলেন। আপনি কোচ হলে ব্রাজিলীয়কে ব্যবহার করতেন?
মর্গ্যান: অবশ্যই ক্লেটনকে ব্যবহার করা উচিত। তবে ওর ফিটনেস কোন পর্যায়ে আছে সেটা এত দূর থেকে আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তবে পুরো ফিট থাকলে ক্লেটন নামিয়ে দেওয়া উচিত। আমার ধারণা ক্লেটনও এই ম্যাচটা খেলতে মুখিয়ে আছে।
প্রশ্ন: আপনি ফাইনাল দেখবেন?
মর্গ্যান: ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে কোনও ম্যাচ পুরোটা দেখিনি। এই ম্যাচটাও দেখব কিনা বলতে পারছি না। প্রচণ্ড টেনশন হয়।
প্রশ্ন: সমর্থকদের উদ্দেশে আপনার বার্তা?
মর্গ্যান: বার্তা খুব সহজ। ধৈর্য ধরুন। ভাল ফল মাথায় তুলে নাচুন। তবে ফল খারাপ হলে আগের মতো গালমন্দ করতে যাবেন না। আমার দ্বিতীয় দফায় দুটি ব্যাপার খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। আশাকরি কার্লেস কুয়াদ্রাতকে তেমন অপমান সহ্য করতে হবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.