কেন তৈরি হল এমন পরিস্থিতি? ফাইল চিত্র
প্রসূন বিশ্বাস: ছয় বাঙালি ফুটবলারের স্বপ্নভঙ্গ!
বাংলার ছয় তরুণ ফুটবলারকে স্পেনে (Spain) গিয়ে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ করে দেওয়ার কথা ছিল গত সেপ্টেম্বরে। বাংলার ছয় সম্ভাবনাময় ফুটবলারের একুশ দিনের স্পেন সফরটির আয়োজক ছিল আইএফএ ও বাংলা নাটক ডট কম। স্পেনের ক্লাবে সই করার সুযোগ ছিল বলে জানানো হয়েছিল এই দুই সংস্থার পক্ষ থেকে। বছর ঘুরলেও আইএফএ-র ঘোষণা মতো সারা বাংলা থেকে বাছাই করা সেই ছয় ফুটবলার দেশের গন্ডি টপকে বিদেশের মাটিতে পা রাখতে পারেনি। জানা গিয়েছে, এই বিদেশ সফরটি আপাতত বাতিল হয়ে গিয়েছে।
গত মে মাসে আইএফএ (IFA) ও বাংলা নাটক ডট কম যৌথভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিল, সারা বাংলা থেকে ট্রায়াল নিয়ে তারা ছয় জন প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারকে তুলে এনেছিল তারা। যাদেরকে স্প্যানিশ ক্লাব সিএফ মন্ট্রিল ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে একুশ দিনের ট্রায়ালে পাঠানোর ব্যবস্থা করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। স্পেনের ট্রায়ালে যদি স্প্যানিশ কোচেদের পছন্দ হয়ে যায় এই প্রতিশ্রুতিমান ছয় তরুণকে তাহলে স্পেনের পঞ্চম ডিভিশনে খেলার সুযোগ পাবে বলে কথা দেওয়া হয়েছিল। কেন বছর ঘুরলেও স্পেনের মাটিতে পা রাখতে পারে নি বাংলার এই ছয় প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার। কেন এমন পরিস্থিতি?
আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত বলছেন, এই ছয় জনের মধ্যে পাঁচ জনেরই ভিসা প্রথম দফায় বাতিল করে দিয়েছে স্পেনের দূতাবাস। আর একজন সময়মতো পাসপোর্ট তৈরি করতে পারেনি। তিনি বলেন, “এই ছয়জনের মধ্যে পাঁচ জনের ভিসা বাতিল হয়ে গিয়েছে। একজন সময়মতো পাসপোর্ট করতে পারেনি । এখানে আমাদের কী করার আছে।”
ছয় ফুটবলারের স্পেন না যাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই আইএফএ-র অন্দরেই প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। আইএফএ-র সহ সভাপতি সৌরভ পাল বলেন, “কেন ঘটা করে সাংবাদিক সম্মেলনের পর যেতে পারল না ছেলেগুলো, তারও কোনও তথ্য কারও কাছে নেই। যদি কোনও টেকনিক্যাল সমস্যা থাকে তাহলে সেটা আইএফএ-র জানানো উচিত। এতে ভাবমুর্তি খারাপ হচ্ছে বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থার। কেন আইএফএ এমন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়?” এই ছয় ফুটবলার হলেন নদিয়ার প্রেমাংশু ঠাকুর, দেবজিৎ রাউত, বিশাল সূত্রধর। পুরুলিয়ার মহেশ্বর সিং সর্দার, বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমির অরিজিৎ বিশ্বাস ও ইউএক্সেল স্পোর্টস ভেঞ্চারের অনিকেত মণ্ডল।
এই ছয় ফুটবলারকে বাছাই করেছিলেন যে কজন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাঙালি কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। এই ছয় ফুটবলারের মধ্যে পাঁচ জনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম আমরা। শুধু ফুটবলাররাই নয়, এই ছয় ফুটবলারের অভিভাবকরাও ভেঙে পড়েছেন। পুরুলিয়ার বলরামপুরের বাসিন্দা বছর ষোলোর স্ট্রাইকার মহেশ্বর সিং সর্দারের মা যমুনা সর্দার বলেন, “ছেলে বিদেশ যাবে বলে অনেক কষ্ট করে ভালো জুতো, বুট, জামা কিনে দিয়েছিলাম। ওর বাবা জোগালির কাজ করে। এই কেনার জন্য হাজার ছয়েক টাকা জোগাড় করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল। এখন বলছে, বিদেশ যাওয়া হবে না।”
নদিয়ার গোলকিপার দেবজিৎ রাউতের বাবা আশিস রাউত বলেন, “প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছে ছেলে। আমার কাছেও বেদনাদায়ক। স্পেন যাবে বলে চোট পাওয়ার ভয়ে এবছর কলকাতা লিগে খেলতে দিলাম না। এখন দেখছি, ভুল করলাম। সব জায়গায় ওরা কথা শুনছে।” আরেক সুযোগ পাওয়া ফুটবলার প্রেমাংশু ঠাকুর বলছে, “মা লোকের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালায়। খবরের কাগজে পড়েছে সবাই আমাদের স্পেন যাওয়ার খবর, এখন সবাই জিজ্ঞাসা করছে, কবে যাবি। শুনেছি, আমাদের এই সফর বাতিল হয়েছে। এখন প্রতিবেশীদের কথাগুলো শুনতে হচ্ছে।”
আরেক ফুটবলার বিশাল সূত্রধর অবশ্য যেতে পারেনি সময়মতো পাসপোর্ট জমা দিতে না পারায়। আরেক ফুটবলার অরিজিৎ বিশ্বাসও এই সফর না হওয়ায় যথেষ্টই হতাশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.