দুলাল দে: প্রায় ৭৮টির মতো পয়েন্ট উল্লেখ করে রাজ্য সংস্থাগুলির পাশাপাশি ফিফাকেও (FIFA) ফেডারেশনের নির্বাচনবিধি জমা দিল সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত তিন সদস্যর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কমিটি। যা সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) জমা পড়বে ১৫ জুলাই। আর যার শুনানি হওয়ার কথা ২১ জুলাই।
এই পর্যন্ত পড়ে যদি মনে হয়, ভারতীয় ফুটবলের (Indian Football) চলমান সমস্যা মিটতে চলেছে, তাহলে ভুল ভাবছেন। সমস্যা মেটার বদলে বরং সব কিছু ঘেঁটে ‘ঘ’ হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। কারণ, সিওএ (COA) দ্বারা প্রেরিত প্রায় ৭৮টি পয়েন্টের মধ্যে অন্তত ২৫টি পয়েন্টে একমত হতে পারছে না রাজ্য সংস্থাগুলি। ফলে ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে যে শুনানির দিন ধার্য হয়েছে, সেদিন আইনজীবী দিয়ে পাল্টা সওয়াল করবে রাজ্য সংস্থাগুলি। এক্ষেত্রে রাজ্য সংস্থাগুলির হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী মানেকা গুরুস্বামী। অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে শুধু সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা সওয়ালের পরিকল্পনাই নয়, তাঁদের পাঠানো সংবিধানের ২৫টি পয়েন্টের বিরোধিতার কারণ ব্যাখ্যা করে ফিফাকেও তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য সংস্থাগুলি। অর্থাৎ, একদিকে সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে থাকা।
পাশাপাশি আবার নতুন সংবিধান নিয়ে ফিফা কী মতামত দিচ্ছে, সেদিকেও নজর থাকবে সবার। কারণ, সময় গড়িয়ে ১৫ সেপ্টম্বরের মধ্যে নির্বাচন করে নতুন কমিটি গঠন না হলে নিশ্চিতভাবেই নেমে আসবে ফিফার নির্বাসন। নতুন সংবিধানের দিকে লক্ষ্য রাখছে এফএসডিএলও। অ্যাডমিনিস্ট্রেটররা যে সংবিধান বিধি তৈরি করেছেন, তাতে আছে আইএসএল এরপর থেকে নিয়ন্ত্রণ করবে এআইএফএফ। অথচ ফেডারেশনের সঙ্গে বিপুল আর্থিক চুক্তির শর্তই হচ্ছে, আইএসএল সম্পূর্ণ ভাবে এফএসডিএলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ফলে নতুন নিয়মে ফেডারেশন চুক্তিভঙ্গ করলে, তারাও পাল্টা আদালতে যাবে।
নির্বাচনের নিয়মবিধির অন্যতম শর্ত দেওয়া হয়েছে, রাজ্য সংস্থার একজন প্রতিনিধির পাশাপাশি সেই রাজ্যের দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলার সভাপতি নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এই নিয়ম পাশ হলে বাংলা থেকে সম্ভবত সেই সুযোগ পাবেন সুব্রত পাল। যদিও তিনিই যে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন, তার প্রমাণও সুব্রতকেই দিতে হবে। কিন্তু রাজ্য সংস্থাগুলি বলছে, ফিফা এরকম ব্যক্তিগত ভোট কখনও অনুমোদন করে না। অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের প্রস্তাবে আছে, ১২জনের কার্যকরী কমিটিতে ৫ জন ফুটবলার থাকবেন। তারমধ্যে দু’জন মহিলা ফুটবলার। কিন্তু এই পাঁচজন ফুটবলার কার্যকরী কমিটিতে কীভাবে নির্বাচিত হবেন, তা নিয়েও যথেষ্ট সমস্যা। সহ সভাপতির পদটাই বিলোপ করা হচ্ছে। ফলে এই পয়েন্টগুলি রাজ্য সংস্থার কর্তারা কিছুতেই মানবেন না।
প্রস্তাবে রয়েছে, যিনি ফেডারেশনের পদাধিকারীর হবেন, তাঁকে রাজ্য সংস্থার পদ ছাড়তে হবে। তিনি যদি রাজ্য সংস্থার কোনও পদেই না থাকেন, তাহলে পরের টার্মে ফেডারেশনের ভোটে দাঁড়াবেন কী করে? ফলে এই পয়েন্টও মানছে না রাজ্য সংস্থাগুলি। এর পাশাপাশি বলা হয়েছে, ক্রিকেটের মতো ফেডারেশনের নিয়ম প্রয়োগ হবে রাজ্য সংস্থার পাশাপাশি রাজ্য সংস্থার অনুমোদিত ক্লাবগুলিতেও। অর্থাৎ, ফেডারেশনে কুলিং অফ প্রথা চালু হলে, তা মানতে হবে রাজ্য সংস্থার পাশাপাশি ক্লাবগুলিকেও। এই প্রস্তাবেরও তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে ফিফায়।
স্পোর্টস কোড অনুযায়ী এতদিন ফেডারেশন সভাপতি তিনটে টার্ম এবং কোষাধ্যক্ষ দুটো টার্মের বেশি থাকতে পারতেন না। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আগে যারা দীর্ঘদিন সহ সভাপতি ছিলেন, তাঁরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এই প্রস্তাবও মানছে না রাজ্য সংস্থাগুলি। তাদের বক্তব্য, নতুন নিয়ম এখন চালু হলে, এখন থেকেই মানা হবে। তা আগে কেন প্রয়োগ হবে? রাজ্য সংস্থার একজন কর্তা বললেন, “এখন ভোটার কার্ড দেখিয়ে নির্বাচন হয়। এটাই নিয়ম। জ্যোতি বসুর সময়ে ভোটার কার্ড ছাড়াই ভোট হত। ভোটার কার্ডের নিয়ম চালু হওয়ার পর, আগের ভোটগুলি কি বাতিল করা হবে?”
এরকম ২৫টি পয়েন্ট নিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং রাজ্য সংস্থাগুলির মধ্যে প্রবল মতানৈক্য। একটা সময় মনে হচ্ছিল, সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচনবিধি জমা দেওয়ার আগেই হয়তো টেবিলের আলোচনায়, দু’পক্ষই এক জায়গায় এসে যাবে। কিন্তু দেখা গেল, আদতে তা হল না। উল্টে সুপ্রিম কোর্টের পাশাপাশি ফিফাতেও লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। এখন দেখার কোথাকার জল গিয়ে কোথায় দাঁড়ায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.