দুলাল দে: মাস দু’য়েক আগে এখানেই ডার্বি দেখার জন্য পঞ্চাশ-ষাট হাজার লোকের আসার কথার ছিল।
কিন্তু এ কী অবস্থা আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় যুবভারতীর! আমফানের তাণ্ডব পরিচিত যুবভারতীর এমন হাল করে ছেড়েছে, দেখলে কষ্টই হবে! ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ? চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, কয়েক লক্ষ তো হবেই!
ভিআইপি গেট দিয়ে ঢুকে ডানদিকে চোখ পড়বে, গাছগুলো সারিবদ্ধভাবে মাথা নুইয়ে পড়ে রয়েছে। আর বাঁদিকে? সেদিকে তাকালে নিজের চোখকে বিশ্বাস করাই কঠিন। দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন। যুবভারতীর কম্পাউন্ডে প্রথম প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে দু’দুটো সুউচ্চ বাতিস্তম্ভকে এমনভাবে মাটি থেকে উপড়ে আছাড় মেরে ফেলেছে শক্তিশালী আমফান। যা শুধু অবিশ্বাস্য নয়, চূড়ান্ত অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
শুক্রবার দপুরে যুবভারতী সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, ফেন্সিং ভেঙে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাতিস্তম্ভ দুটো। যার এক একটিতে ফ্লাডলাইট রয়েছে বারোটি করে। বুধবার রাতের সাইক্লোনে যা ভেঙেচুড়ে একশেষ। বাতিস্তম্ভগুলো মাঝামাঝি পর্যায় থেকে ভাঙার কোনও চিহ্নমাত্র নেই। ঢালাই করে পোঁতা ছিল মানুষ সমান উচ্চতায় মাটির নিচে। আমফান এতটাই শক্তিশালী মাটি উপড়ে বাতিস্তম্ভগুলোকে ফেলে দিয়েছে মাঠের মধ্যে।
প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডকে বাঁদিকে রেখে মূল স্টেডিয়ামের গেট দিয়ে মাঠের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে আরও সমস্যা। যুবভারতীর যে টানেল দিয়ে ফুটবলাররা মাঠে নামেন, সেই টানেল জলমগ্ন। কোমর সমান জল। ফলে এদিন যখন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস যুবভারতীর ক্ষয়ক্ষতির পরিদর্শনে গেলেন, মাঠে যেতে পারলেন না টানেল দিয়ে। যেতে হল ঘুর পথে। সেখানে গিয়েও বিপত্তি। মাথা তুলতেই দেখলেন পুরো স্টেডিয়ামের ছাউনির অনেকটাই উড়ে গিয়েছে। যা নতুনভাবে তৈরি হয়েছিল তিনবছর আগে অনূর্ধ্ব ১৭ ছেলেদের ফুটবল বিশ্বকাপের সময়। শুধু কি ছাউনি? সুদৃশ্য প্রেসবক্সে কাঁচের দেওয়ালও ভেঙে গিয়েছে। যা দেখে ক্রীড়ামন্ত্রীর মাথায় হাত। পিডব্লুডির ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে চললেন ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে। প্রথম যুবভারতীর প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড। তারপর স্টেডিয়ামের ভিতর। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করার পর দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করতে বসে গেলেন স্টেডিয়ামেই। যেখানে প্রত্যেককে নির্দেশ দিলেন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট দিতে।
পরে ক্রীড়ামন্ত্রী বলছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত প্রিয় জায়গা হল এই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। অনেক স্বপ্ন নিয়ে উনি এই স্টেডিয়ামকে আধুনিকভাবে সাজিয়ে আন্তর্জাতিক মানের করে তুলেছিলেন। সেই স্টেডিয়ামের এইরকম অবস্থা দেখে কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে কবে আর কে পেরেছে। নতুন করে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে মেরামত করে পুরোনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুতই কাজ শুরু করে দেব। সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের বলা হচ্ছে, দ্রুত আমাক রিপোর্ট পাঠাতে।’’ স্বপ্নের যুবভারতীকে আবারও মোহময়ী রূপে ফেরানোর কাজে কিন্তু নেমে পড়লেন অরূপ।
এদিকে, ইডেনেরও একই অবস্থা। ‘জি’ এবং ‘এইচ’ ব্লকের ফাইবারের ছাদ জায়গায় জায়গায় নেই। আমফান আস্ফালনে উড়ে গিয়েছে। ‘কে’ ও ‘এল’ ব্লকের অ্যালুমিনিয়াম শিট খুলে এসেছে। পড়ে আছে ইডেনেরই চত্বরে। কর্পোরেট বক্সের কাঁচ ভেঙেছে। খুলে গিয়েছে দরজা। সিএবি দেওয়াল আর ইন্ডোরের মাঝামাঝি পড়ে গিয়েছে গাছ। সল্টলেকের যুবভারতী স্টেডিয়াম কিংবা বাকি শহরের মতো ব্যাপক হারে ইডেনের ক্ষতি করতে পারেনি ভয়াল ঘূর্ণিঝড় আমফান। কিন্তু একেবারে নিঃশর্ত মুক্তিও দেয়নি। এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা, সেটা বুঝতে ইঞ্জিনিয়ার ডাকছে সিএবি। শুক্রবার ইডেন সহ ময়দানের বাদবাকি ক্লাব তাঁবু ঘুরে দেখেন সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া এবং যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাস। সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত। সে মাঠের ছাউনি ওলটপালট করে দিয়ে গিয়েছে আমফান। যদিও সিএবি কর্তাদের মনে হচ্ছে, যা হয়েছে, কয়েক লক্ষ টাকা খরচে মিটিয়ে দেওয়া যাবে। সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া বললেন, “ক্ষতি কতটা কী হয়েছে আমরা ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে আসছি। তবে খুব বেশি কিছু হয়নি।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.