কৃশানু মজুমদার: ক্রোয়েশিয়ায় (Croatia) শীত পড়েছে। বইছে ঠান্ডা বাতাস। কিন্তু বিশ্বকাপের ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া (Brazil vs Croatia) আগুনে ম্যাচ উত্তাপ ছড়াচ্ছে জাগ্রেবে। শীতের শহরের উষ্ণতা বাড়ছে। মেগা-ম্যাচের উত্তাপ গায়ে মেখে আইএসএল খেলে যাওয়া ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার মাতো গ্রিজিচ (Mato Grgic) সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বলছেন, ”ক্রোয়েশিয়ায় ঠান্ডা পড়লেও ব্রাজিলের সঙ্গে আমাদের ম্যাচ ইতিমধ্যেই উষ্ণতা বাড়াতে শুরু করে দিয়েছে। ম্যাচ কখন শুরু হবে, সেই অপেক্ষায় আমরা। ব্রাজিলের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনাল আমাদের। সবাই উত্তেজিত। গতবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে আমরা দ্বিতীয় হয়েছিলাম। এখনও পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়া বেশ ভালই ফুটবল খেলেছে কাতারে। আমরা যদি কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেও যাই, তাহলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ ইতিমধ্যেই আমরা বিশ্বের সেরা আটটি দলের মধ্যে রয়েছি। এই রেজাল্টও খারাপ নয়। তাই না?”
প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড ও মুম্বই সিটি এফসি-র হয়ে খেলা ডিফেন্ডার। এদেশ থেকে খেলে দেশে ফেরার পরে ক্রোয়েশিয়ার অনেক ফুটবলারই তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন আইএসএলের কথা। মেগা টুর্নামেন্টের ভূয়সী প্রশংসা করে গ্রিজিচ বলছেন, ”বন্ধুদের আমি বলেছি, অন্তত একবার হলেও আইএসএল খেলা উচিত। দারুণ পরিকাঠামো, সব অর্থেই দারুণ ব্যবস্থা।”
২০১৮-১৯ মরশুমে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল। গ্রিজিচ বলছেন, ”সেবারই প্রথম বার শেষ চারে জায়গা পেয়েছিল নর্থ-ইস্ট। তবে আমাদের ভাগ্য সহায় ছিল না। অনেকে চোট পেয়েছিল। সবাইকে পেলে আমরা ফাইনাল খেলতেই পারতাম।” মুম্বই সিটি এফসি-র হয়ে খেলেও ফাইনাল খেলা হয়নি মাতোর। তবে তার জন্য আক্ষেপ নেই তাঁর মনে। মাতো গ্রিজিচ বলছেন, ”ফুটবলে আফশোস বলে কিছু হয় না। গুয়াহাটির দর্শক, স্টেডিয়ামের কথা আজও আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল।” বুট জোড়া এখন তিনি তুলে রেখেছেন। ভারতে আরও একবার আসার স্বপ্ন দেখেন তিনি। চেনা শহরগুলোর ধুলো মাখা রাস্তায় ঘুরতে চান জাগ্রেবের বাসিন্দা মাতো। খুঁজে পেতে চান নিজেকে। এই প্রতিবেদককে জিজ্ঞাসা করছিলেন শহর কলকাতা ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত কিনা। জাগ্রেব তৈরি হচ্ছে বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য। ক্রোয়েশিয়ার ৪০ লক্ষ মানুষ মডরিচ-পেরিসিচদের জন্য গলা ফাটাবেন। গ্রিজিচ তাকিয়ে থাকবেন বন্ধু মার্সেলো ব্রোজোভিচের দিকে।একসময়ে একই ক্লাবে খেলতেন দু’ জন। সেই সময়ে গ্রিজিচই ছিলেন অধিনায়ক। তিনি বলছেন, ”ব্রোজোভিচের বয়স তখন খুব কম। প্রায় এক যুগ আগের কথা। এখনও আমার সঙ্গে ওর যোগাযোগ রয়েছে। খুব কাছ থেকে দেখেছি ব্রোজোভিচকে। কঠিন পরিশ্রম করত। আজ যে জায়গায় পৌঁছেছে, তার সব কৃতিত্বই ব্রোজোভিচের।”
শুক্রবার জীবনের অন্যতম কঠিন ম্যাচে নামছেন ব্রোজোভিচ-লুকা মডরিচরা। কেমন হবে সেই ম্যাচ? গ্রিজিচ বলছেন, ”নিঃসন্দেহে কঠিন ম্যাচ। ব্রাজিলের আক্রমণভাগ দারুণ শক্তিশালী। ব্যাক লাইনও দারুণ। ব্রাজিলের ফুটবলারদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া লক্ষ্য করছি। দারুণ মেজাজে রয়েছে নেইমাররা। গোল করছে, আনন্দ করছে, গোল করে মাঠের মধ্যেই নাচছে। এগুলোই বুঝিয়ে দিচ্ছে খোলা মেজাজে রয়েছে ব্রাজিল। এখনও পর্যন্ত কাতারে দারুণ ফুটবল তুলে ধরছে ওরা।”
কিন্তু ব্রাজিলীয়দের গোল উদযাপন নিয়ে তো দুনিয়াজুড়ে সমালোচনা হচ্ছে। প্রাক্তন ফুটবলাররা বলছেন, গোল করে নাচ আসলে প্রতিপক্ষকে অসম্মান করা। কোয়ার্টার ফাইনালেও যদি নাচেন নেইমাররা? গ্রিজিচ হাসছেন। বলছেন, ”আমার তো খুবই রাগ হবে। তবে সেটা গোল খাওয়ার জন্য। ব্রাজিলিয়ানরা তো আনন্দ করতেই ভালবাসে। ওরা হুল্লোড় করে, গান গায়, নাচে।” এই কারণেই দুনিয়া জুড়ে ব্রাজিলের ভক্তের সংখ্যা অগুনতি।
শক্তিধর ব্রাজিলকে থামানোর জন্যই কি রক্ষণাত্মক নীতি গ্রহণ করবে ক্রোয়েশিয়া? গ্রিজিচ বলছেন, ”ব্রাজিল ফেভারিট ঠিক কথাই। কিন্তু ফুটবলের কথা কে বলতে পারে আগেভাগে! আমার মনে হয় ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ক্রোয়েশিয়া ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলবে না। কারণ রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে ব্রাজিলকে ৯০ মিনিট আটকে রাখা যাবে না। ব্রাজিলকে থামাতে হলে, বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মডরিচ, কোভাচিচ, ব্রোজোভিচদের বেশি করে বল নিয়ে খেলতে হবে। বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখলে ব্রাজিল নার্ভাস হয়ে পড়বে। নেইমাররা আক্রমণ করতে পছন্দ করে। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে বল না থাকলে ব্রাজিলিয়ানরা তা কাড়ার চেষ্টা করবে, বল দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। রক্ষণাত্মক ফুটবল না খেলে ক্রোয়েশিয়া বরং নিজেদের স্বাভাবিক খেলাই তুলে ধরুক। আক্রমণ শানাক, গোল করার চেষ্টা করুক। তবে সারাক্ষণ তো আর একভাবে খেলে যাওয়া সম্ভব নয়। কখনও আক্রমণে যেতে হবে, কখনও আবার রক্ষণাত্মক নীতি গ্রহণ করতে হবে।”
নক আউট পর্বে ক্রোয়েশিয়া-জাপান ম্যাচ গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। স্পেন-মরক্কো ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়েছিল পেনাল্টি শুট আউটে। গ্রিজিচ বলছেন, ”ম্যাচে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ট্যাকটিকাল লড়াইও হবে। তবে একটা গোল পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। ফুটবলে সবই সম্ভব। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলও শক্তিধর দেশকে হারাতে পারে। ব্রাজিল ফেভারিট হলেও আমরা পিছিয়ে নেই। মডরিচ, কোভাচিচ, ব্রোজোভিড, পেরিসিচ, এরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ এবং দক্ষতাসম্পন্ন।” গোল করার লোকের অভাব নেই তিতের ব্রাজিলে। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার গেমচেঞ্জার কে হতে পারেন? গ্রিজিচের কথায়, ”ক্রোয়েশিয়ার লিগের কথা অনেকেই জানেন না। লেভায়া ও পেটকোভিচ ক্রোয়েশিয়া লিগে খেলে। আমাদের হয়ে গেমচেঞ্জার হতেই পারে ওরা।”
শুক্র-সন্ধ্যার প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেবে একটি দল। আরেকটি দল পৌঁছে যাবে শেষ চারে। হাসি-কান্না মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে কাতারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.