দুলাল দে: করোনার জের। ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ উদযাপন পিছিয়ে যেতে বসেছে আরও এক বছর। মানে লাল-হলুদের শতবর্ষকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেখানে ২০২১ সালেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিক সমস্যায় তা পিছিয়ে যেতে চলেছে ২০২২ পর্যন্ত। যার ফলে শতবর্ষের ইস্টবেঙ্গলকে ঘিরে জাতীয় পুরস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষের তথ্যচিত্র কবে মুক্তি পাবে তা নিয়ে ঘোর অন্ধকার তৈরি হয়েছে।
১৯২০-তে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিষ্ঠা হলেও ২০১৯ এর ২৮ জুলাই কুমারটুলি পার্কের পদযাত্রা দিয়েই লাল-হলুদ কর্তারা শতবর্ষ উদযাপন শুরু করে দেন। যারপর ১ আগস্ট নেতাজি ইন্ডোরে কপিল দেব, সুনীল ছেত্রী, বাইচুং ভুটিয়াকে হাজির করানোর পর ১৩ আগস্ট মজিদ বাসকারকে হাজির করেন লাল-হলুদ কর্তারা। যে ঘটনাকে সমর্থকরা মনে করছেন, শতবর্ষ উদযাপনে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সেরা পাওনা। সেই শেষ। তারপর থেকে শতবর্ষ উদযাপন নিয়ে নতুন করে আর কোনও অনুষ্ঠানই করেননি লাল-হলুদ কর্তারা। এর পিছনে আর্থিক অভাব প্রধান কারণ হলেও, কলকাতা লিগ-সহ আই লিগেও দল যেহেতু ভাল খেলতে পারেনি, মরশুম জুড়ে তাই চাপে থেকেছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। এর মাঝেই বিক্ষিপ্ত ভাবে কথা হয়েছে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচ করা নিয়েও। তারজন্য বিভিন্ন স্পনসরের সঙ্গে আলোচনাতেও বসেছিলেন লাল-হলুদ কর্তারা।
কিন্তু ক্লাবের আর্থিক দাবি শুনে শেষ পর্যন্ত কোনও স্পনসরই আর ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচ করার জন্য এগিয়ে আসেনি। এরপরেই আসে বলিউড তারকা সলমন খানকে নিয়ে অনুষ্ঠান করার ভাবনা। পাশাপাশি অরিজিৎ সিংয়ের অনুষ্ঠান করার ভাবনাও হয়। কিন্তু দু’ক্ষেত্রেই আর্থিক সমস্যায় পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয় ইস্টবেঙ্গল। ফলে এই মরশুমে শতবর্ষ নিয়ে নতুন করে আর কোনও অনুষ্ঠানই করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। ঠিক হয়, সামনের মরশুমে শতবর্ষ নিয়ে ফের নতুন করে পরিকল্পনা করা হবে। কিন্তু করোনার প্রভাবে এমন আর্থিক চাপ তৈরি হচ্ছে যে, ২০২১ এ আদৌ কোনও অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে কিনা, সেটাই বুঝতে পারছেন না ক্লাব কর্তারা। ফলে সরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত না নিলেও ঘরোয়া আলোচনায় ক্লাব কর্তারা ঠিক করেছেন, শতবর্ষ অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেবেন ২০২২ পর্যন্ত। এক্ষেত্রে ক্লাব কর্তাদের যুক্তি হল, শতবর্ষ পালন ২০২১ এর পরিবর্তে ২০২২ পর্যন্ত নিয়ে গেল কোনও সমস্যা নেই। ক্লাব কর্তারা আশাবাদী ২০২২ এর মধ্যে ক্লাবের আর্থিক সমস্যা ঠিক সমাধান করে ফেলতে পারবে।
এর পাশাপাশি স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে আসছে, তাহলে এত প্রচার করে প্রখ্যাত পরিচালক গৌতম ঘোষকে দিয়ে শুরু করা ক্লাবের উপর তথ্যচিত্রর ভবিষ্যৎ কী? কবে দিনের আলো দেখবে এই তথ্যচিত্র? সত্যি বলতে কী, পরিচালক নিজেও জানেন না। গৌতম ঘোষও অপেক্ষায় রয়েছেন, ক্লাব কর্তাদের ফোনের জন্য। লাল হলুদের শতবর্ষর উপর ক্লাব কর্তাদের ওয়ান লাইনার শুনিয়ে তথ্যচিত্রর কাজ শুরু করেন গৌতম ঘোষ। তারজন্য কিছু অগ্রিমও দেওয়া হয় তাঁকে। ১ আগস্ট এবং ১৩ আগস্ট নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দুটি অনুষ্ঠানেই তথ্যচিত্রটির টিজার দেখানো হয়। তারপর থেকেই অদ্ভুত কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিক ছিল পরের কিস্তির টাকা দিয়ে নভেম্বর থেকেই ফের শুরু হবে তথ্যচিত্রর কাজ। কিন্তু পরিকল্পনা ভাবনার স্তরেই থেকে গিয়েছে। বাস্তবের রূপ আর পায়নি। সেরকম এখনও দিনের আলো দেখতে পারেনি, ক্লাবের শতবর্ষের উপর তৈরি অ্যালমানাক। তবে অনেক চেষ্টা চরিত্রর পর সেই অ্যালামানাক ছাপার জন্য এখন ছাপাখানায় গিয়েছে।
কিন্তু তথ্যচিত্রর ভবিষ্যৎ কী? পরিচালক গৌতম ঘোষ বললেন, “করোনার জন্য সারা পৃথিবীর যা অবস্থা, তাতে এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরির কোনও উপায় নেই। তবে একদিন না একদিন ঠিক মুক্তি পাবে। শুধু ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কেন, করোনার জন্য সারা বিশ্বেই আর্থিক দৈন্যতা দেখা দেবে। পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। আশা করছি, ২০২১ এ এই তথ্যচিত্রর কাজ ঠিকই শেষ করতে পারব।’’তথ্যচিত্র ঘিরে পরবর্তী পরিকল্পনাও শুরু করে দিয়েছেন তিনি। বললেন, “যে ভাবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব নিয়ে বড় ক্যানভাসে স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছিলাম, এখন ঠিক করেছি, একটু কাট ছাট করে স্ক্রিপ্টটা ছোট করে ফেলব।” গৌতম ঘোষ জানালেন, মৃত্যুর আগে পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় ২০ মিনিটের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়ে গিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে তৈরি হওয়া তথ্যচিত্রে। পরিচালক বলছিলেন, “পিকের সঙ্গে আমার পরিচয় প্রায় ৩০ বছর ধরে। তাই সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় অনেক পুরোন গল্প উঠে আসে। যখন তথ্যচিত্রটি মুক্তি পাবে, সবাই দেখতে পারবেন।” কিন্তু কবে দেখতে পারবেন লাল-হলুদ সমর্থকরা? এর উত্তর এই মুহূর্তে কেউই দিতে পারবেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.