Advertisement
Advertisement
Qatar World Cup

‘আমি বিশ্বকাপ জিতলেও সমালোচনা থামবে না’, সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্ফোরক রোনাল্ডো

সমালোচনা সত্বেও তাঁর রেকর্ড কেউ মুছে ফেলতে পারবে না, হুংকার সিআরসেভেনের।

Christiano Ronaldo slams criticism ahead of Qatar World Cup | Sangbad Pratidin
Published by: Anwesha Adhikary
  • Posted:November 22, 2022 11:28 am
  • Updated:November 22, 2022 12:29 pm  

দুলাল দে: পুরো ব্যাপারটা তখনও ঠিকভাবে হজম হয়নি সংবাদমাধ্যমের। সত্যিই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো তো? আল শাহনিয়ায় পর্তুগাল শিবিরের মিডিয়া সেন্টারে বসে গল্প শোনাচ্ছিলেন ও’গ্লোবোর সাংবাদিক এডমার। “আমাদের জন্য কাজ করা এখন রীতিমতো কঠিন হয়ে গিয়েছে। আগে ব্রাজিল দলের সবকিছু সবার আগে আমরা ব্রেক করতাম। এখন আমাদের ব্রেক করার আগে নিজের ইনস্টাতে সবকিছু পোস্ট করে দেন নেমার। ফুটবলারদের যাবতীয় আপডেট এখন তাঁদের ইনস্টাতেই পাওয়া যায়। সেই জন্যই আর সাংবাদিক সম্মেলনে আসতে চান না।”

সাংবাদিক সম্মেলনে এলে পাল্টা প্রশ্ন ধেয়ে আসতে পারে। ব্যক্তিগত ইনস্টাতে জানিয়ে দিলে, শুধু নিজের মতটাই প্রকাশ করা যায়। ফলে প্রথাগত সাংবাদিক সম্মেলনের বাইরে কেউ আলাদা করে বসতেই চান না। কিন্তু এদিন সেই সব নিয়ম-কানুন, ধ্যানধারণা বদলে দিলেন রোনাল্ডো। পর্তুগালের মিডিয়া অফিসার অ্যান্তোনিও আগের দিনই জানিয়ে দিয়েছিলেন, সাংবাদিক সম্মেলনে থাকতে হলে তাঁকে আগে মেল করে কনফার্ম করতে হবে। তারপরই নিরাপত্তার বজ্রআঁটুনি পেরিয়ে পর্তুগাল শিবিরের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি মিলবে। একদিন আগেই পর্তুগাল শিবির থেকে সরকারিভাবে শুধু জানানো হয়েছিল, স্থানীয় সময় সকাল দশটায় সাংবাদিক সম্মেলন। কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে কে থাকবেন, জানানো হয়নি। দোহায় পা দিয়ে দলের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন। এরকম নয় যে, ম্যাচের আগের দিনের কোচ-অধিনায়কের প্রথামাফিক সাংবাদিক সম্মেলন। ফলে এসব ক্ষেত্রে যা হয়, যে কোনও একজন ফুটবলার পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

পর্তুগিজ সাংবাদিকদের বাইরে আমরা যে ক’জন অন্যান্য দেশের সাংবাদিকরা বসে আছি, ধরেই নিয়েছি সাদামাটা একটা সাংবাদিক সম্মেলন হবে। কিন্তু হঠাৎই সবাইকে অবাক করে সাংবাদিক সম্মেলনে চলে এলেন খোদ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো! এমন একটা সময় তিনি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন যখন সারা বিশ্ব অপেক্ষা করে আছে ম্যাঞ্চেস্টার বিতর্কের পরবর্তী অংশ তাঁর মুখ থেকে শুনতে। আর স্বাভাবিকভাবেই শুরুতেই সংবাদমাধ্যম থেকে প্রশ্ন উড়ে এল ম্যাঞ্চেস্টার বিতর্ক নিয়ে। আর তাতে যা উত্তর দিলেন, তা একমাত্র রোনাল্ডোর পক্ষেই দেওয়া সম্ভব। “আমাকে নিয়ে পৃথিবীর কোথায়, কে, কী মনে করল, তা নিয়ে আমার কিছু এসে যায় না। আমি এসব নিয়ে ভাবিও না।”

[আরও পড়ুন: কাতারে বাবা জর্জের স্মৃতি উসকে দিলেন ছেলে টিমোথি, বেল লিখলেন নতুন রূপকথা]

বৃহস্পতিবার ঘানার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে পর্তুগাল। তার আগে শুধুই ম্যাঞ্চেস্টার পর্ব নয়, ব্রুনো ফার্নান্ডেজ আর ক্যানসেলোর সঙ্গে তাঁর ‘শৈত‌্য’ নিয়েও বিতর্ক বেড়েছে। এই প্রসঙ্গেও এদিন শুধুই হেসেছেন সিআর সেভেন। ঠোঁটের কোণে হাসি এনে রোনাল্ডো বলেন, “কেন এগুলো নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে জানি না। তবে যা হচ্ছে সবটাই আমার জন্য ভীষণই দুর্ভাগ্যজনক। আমার সঙ্গে ফার্নান্ডেজের যে ফুটেজ দেখা যাচ্ছে, তা সঠিক বক্তব্য প্রকাশ করছে না। ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভাল। ওর বিমান দেরিতে পৌঁছয়। আর তাই মজা করে বলেছিলাম, বিমান যখন দেরি করল, তখন বোটে চলে আসতে পারতে। ব্যস, এটুকুই। আর তা নিয়েও বিতর্ক! ক্যানসেলোর ক্ষেত্রেও তো তাই। প্র্যাকটিসের মধ্যে ঘাড় ধরে ওকে বলেছিলাম, তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো। সময় হয়ে গিয়েছে। এই নিয়েই বিতর্ক! সত্যিই আমার সম্পর্কে যে যা খুশি ভাবুক, আমার উত্তর দেওয়ার কোনও আগ্রহ নেই।”

কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর আগেই তাঁকে নিয়ে যেভাবে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা কি বিশ্বকাপে পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে না? এক পর্তুগিজ সাংবাদিক প্রশ্নটা সব ছুঁড়ে দিয়েছেন, সিআর সেভেন সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নটি লুফে নিয়ে তাঁকে কথা শেষ করতে না দিলেন না। পাল্টা প্রশ্ন করে ওঠেন, “আপনার কি মনে হয়, কাতার থেকে বিশ্বকাপটা জিতে ফিরলেই আমাকে নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক শেষ হয়ে যাবে? তা হলে শুনে রাখুন, বিশ্বকাপ জিতলেও শুরু হয়ে যাবে নতুন বিতর্ক। তখন প্রশ্ন তোলা হবে, আমিই কি সেরা ফুটবলার? বিশ্বকাপ জিতলেও সমালোচনা চলতেই থাকবে। কারণ, এই পৃথিবীতে কেউ আমাকে বেশি পছন্দ করে। কেউ কম। জীবনের মতো। কারও লাল পছন্দ, কারও কালো। কারও সাদা। আপনার কিছু করার নেই। এই সব নিয়েই জীবনে চলতে হবে।”

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মাঝে মধ্যেই দার্শনিক হয়ে পড়ছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা। বিশ্বকাপের মঞ্চে তাঁর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, হাজার বিতর্কের মাঝেও নিজেকে কীভাবে ঠিক রাখতে হয়, তার পূর্ণ ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন তিনি। বললেন, “দিনের পর দিন আমার ফ্যান, পরিবার এবং অবশ্যই আমার নিজের জন্য ভাল পারফরম্যান্স করে গোল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এটা ঠিক যে, এবারের বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যেই এখানে এসেছি। আপনারা হয়তো বলবেন, আমি উচ্চাকাঙ্ক্ষী। স্বীকার করছি, আমি উচ্চাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু এরপরেও আমি যদি আর একটা টুর্নামেন্টেও না জিতি, বিশ্বাস করুন, মানসিকভাবে আমি একটুও ভেঙে পড়ব না। কারণ, আমি জানি সারা জীবন ধরে আমি কী সংগ্রহ করেছি। আমি জানি, আমার সাফল্যের মুহূর্তগুলিকে। যত সমালোচনাই করুন, আমাকে কিন্তু রেকর্ডের ইতিহাস বই থেকে কিছুতেই মুছে ফেলতে পারবেন না।’

আল শাহনিয়ার মিডিয়া সেন্টারে রোনাল্ডো যখন এক নাগাড়ে নিজের জীবনের কথা বলে চলেছেন, পুরো সংবাদমাধ্যম মন্ত্রমুগ্ধের মতো চুপ করে শুনে যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, মানসিকভাবে কতটা ক্ষত নিয়ে তিনি এই বিশ্বকাপটি খেলতে এসেছেন। হেসে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার সেলফে যদি একটা বিশ্বকাপের ট্রফি থাকে, খুব একটা খারাপ লাগবে না। কী বলেন আপনারা..?” কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টার পর্ব? এবার নিজেকে সামলে নিয়ে রোনাল্ডো বললেন, “দেখুন, সব কিছুই সময়। কেউ ঠিক লিখল। কেউ ভুল। ৩৭ বছর ৮ মাসে এসে আমাকে আর এসব বিচলিত করে না। জীবনে আমার অনেক ভাল মুহূর্ত আছে। তবে এটা সত্যি, বিশ্বকাপ আমার জন্য সত্যিই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।” এরপর আর এক মুহূর্ত দাঁড়াননি তিনি। যেভাবে এসেছিলেন। বক্তব্য রেখে সেভাবেই দ্রুত চলে গেলেন। পর্তুগালের ছোট্ট মিডিয়া সেন্টারটিতে তখনও পিন পড়লে আওয়াজ শোনা যাবে। টানা প্রায় এক ঘণ্টা ফুটবল, না জীবনের পাঠ, কোনটা দিয়ে গেলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো?

[আরও পড়ুন:‘তিনবার ফাইনালে উঠেও ব্যর্থ, প্রকৃত চোকার্স ডাচরা, ওদের নিয়ে আশাবাদী নই’, বলছেন মনোরঞ্জন]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement