স্টাফ রিপোর্টার: আট বছর পর ঘরোয়া লিগ পাওয়ার দৌড়ে পৌঁছে গেলেও এখনই বিজয় উৎসব শুরু করতে নারাজ মোহনবাগান। কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী বলেই দিলেন, সুবিধেজনক জায়গায় গেলেও তাঁরা ১২ তারিখে কাস্টমস ম্যাচের পর যা করার করবেন।
বৃহস্পতিবার মোহনবাগান টেন্টে ছিল ক্লাবের ডিরেক্টর বোর্ডের সভা। যথারীতি কৌতুহল নিয়ে হাজির ছিলেন কয়েকশো সভ্য-সমর্থক। তবে সকলের নজর ছিল ইস্টবেঙ্গল-পিয়ারলেস ম্যাচের দিকে। অনেকে মোবাইলে লাইভ স্ট্রিমিং দেখছিলেন। টাটকা খবর মূহুর্তের মধে্য ছড়িয়ে পড়ছিল ক্লাব টেন্টে। ক্রোমা গোল দিয়ে প্রথমে পিয়ারলেসকে এগিয়ে দিলেও সবুজ-মেরুন সমর্থকরা ছিলেন নিশ্চুপ। সকলের বক্তব্য ছিল, ঠিক ইস্টবেঙ্গল গোলশোধ করে দেবে। শেষমেশ ম্যাচটা জিতবে লাল-হলুদ জার্সিধারীরাই। কিন্তু খেলার সময় যত গড়ায় ততই যেন উত্তেজনার পারা চড়তে থাকে গঙ্গাপারের তাঁবুতে। অনেকের মনে ধীরে ধীরে হলেও বিশ্বাস জন্মায়, পিয়ারলেস আটকে দিলেও দিতে পারে। কিন্তু কাসিম গোল করতেই যাবতীয় উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়ে। তখন সকলে ধরে নেন, এবার জয় পাওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কিন্তু নরহরি শ্রেষ্ঠা গোল করতেই আবার উল্লাসে মেতে ওঠেন মোহনবাগান সমর্থকরা। তখন খেলা শেষ হতে সময় খুব বেশিও ছিল না। সকলে তখন রেফারি প্রবীর ধরের খেলা শেষের লম্বা বাঁশি বাজার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেই বাঁশি বাজতেই মোহনবাগান টেন্ট জুড়ে শুরু হয়ে যায় হৈ-হুল্লোড়। স্লোগানের সঙ্গে চলতে থাকে প্রবল চিৎকার। যেন মনে হচ্ছিল লিগ জয়ের উৎসব শুরু করে দিয়েছেন মোহনবাগানিরা। ডিরেক্টর বোর্ডের সভা যেহেতু চলছিল তাই ক্লাব টেন্টে ছিলেন সভাপতি টুটু বোস, সচিব অঞ্জন মিত্র, সৃঞ্জয় বোস, দেবাশিস দত্ত, সোহিনি মিত্র-রা। স্বভাবতই তাঁরাও মেতে উঠেন উৎসবে। পরে টুটু বোস উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলছিলেন, “আমাদের মধ্যে যতই ঝগড়া থাকুক ক্লাবের সাফল্যে সকলে এক। ইস্টবেঙ্গল হেরেছে জানতে পেরেই আমি আর অঞ্জন এই বয়সে দু’টো করে সিঙ্গাড়া ও গজা আনন্দে খেয়ে নিই।”
তবে কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী ছিলেন নির্বিকার। ফোনে ধরা হলে তিনি স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, এখন লিগ জয়ের উৎসবে মাততে তিনি নারাজ। “সুবিধেজনক জায়গায় গেলাম ঠিকই। কিন্তু এখন-ই বলার মতো সময় আসেনি। ১২ তারিখে কাস্টমসের সঙ্গে খেলা। ওই ম্যাচের পর ছবিটা হয়তো বোঝা যাবে। এখন অতিরিক্ত উৎসাহ দেখানোর কোনও মানে হয়না।” বলেই ফেললেন মোহনবাগান কোচ। তিনি টিভিতে বসে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ দেখেছেন। তবু প্রতিপক্ষ দলের খেলা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইলেন না শঙ্করলাল। আজ যথারীতি দলের প্র্যাকটিস ডাকা হয়েছে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ময়দান আরও একটি খবরে সরগরম। বড় দলকে হারিয়ে উঠে নিজেই কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন। না, এরকম নজির বোধহয় এর আগে কলকাতা ফুটবলে ছিল না। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেটাই করলেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। কিছুক্ষণ আগেই তাঁর টিম ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে লিগ থেকে ছিটকে দিয়েছে। তারপরই ড্রেসিংরুমে গিয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন, আর কোচ থাকছেন না। কিন্তু হঠাৎ করে কেন এমন সিদ্ধান্ত? ফোনে বিশ্বজিৎ বলছিলেন, “মহামেডান ম্যাচের পর থেকেই কর্তারা আমার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন। বলা হয়েছিল ফুটবলারদের সঙ্গে বসে আমাকে টিম করতে হবে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছিলাম না।” শুধু এটাই নয়, তাঁর দায়িত্ব ছাড়ার পিছনে আরও একটা কারণও ছিল। পাঠচক্র ম্যাচে রহিম নবিকে তুলে নেওয়ার ডাগআউটে বসেই নবি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সিনিয়রদের থেকেও প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছিলেন না। এতসবের পর আর থাকতে চাইছিলেন না। তাই ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েই দায়িত্ব ছাড়লেন বিশ্বজিৎ।
ছবি: শংকর নাগ দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.