দুলাল দে : তাঁর দাবি মতো শেয়ার ছাড়ার ব্যাপারে অনেকটাই এগিয়েছে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। কিন্তু বাকি শর্ত? প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ক্লাব থেকে না পাওয়ায় চুক্তি থমকে রয়েছে। যার সমাধান হওয়া খুবই কঠিন। কেন? ইন্দোনেশিয়া থেকে ফোনে জানালেন বাঙালি শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে আপনার চুক্তির পরিস্থিতিটা এখন ঠিক কী?
প্রসূন: একই। নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র চেয়েছি। সেগুলো না পেলে ইনভেস্টর হিসেবে আমার পক্ষে চুক্তিপত্রে সই করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: কিন্তু এই যে শোনা যাচ্ছে, আপনার সঙ্গে নাকি ইস্টবেঙ্গলের চুক্তি পাঁচ বছরের জন্য প্রায় পাকা। শুধু ঘোষণা বাকি?
প্রসূন: (হাসি) গতকাল আমিও শুনেছি। নথি আদানপ্রদান হল না। চুক্তি পাকা হয়ে গেল? তবে আমি ইস্টবেঙ্গলে ইনভেস্ট করতে চাই। কিন্তু তার জন্যপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাই। শর্ত পূরণ চাই।
প্রশ্ন: শর্ত বলতে ৮০ শতাংশ শেয়ার?
প্রসূন: শুধু শেয়ার কেন? শুরুতে ওরা জানিয়েছিল, মাত্র ৪৯ শতাংশ শেয়ার দেবে। কিন্তু কোয়েসের উদাহরণ দিয়ে বলি, ওরা আই লিগ খেলেই ৭০ শতাংশ শেয়ার নিয়েছিল। তাহলে আমি বছরে অন্তত ৪০ কোটি টাকা দিয়ে মাত্র ৪৯ শতাংশ শেয়ার কেন নেব? শুনে ওরা বলল, ৫১ শতাংশ দেবে। এখন শুনলাম, ওরা ৭০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে রাজি। কিন্তু এত বড় লগ্নির পিছনে এর বাইরেও অনেক শর্ত থাকে।
প্রশ্ন: কী রকম?
প্রসূন: প্রথমে বলা হয়েছিল, এই মরশুমেই আমরা আইএসএল (ISL) খেলব। এবং কোয়েস ইস্টবেঙ্গলের মতো আমার কোম্পানি ‘ইউএসইএল ইস্টবেঙ্গল’ নামে দেশের সেরা লিগ খেলতে পারবে। কিন্তু এখন দেখছি, এই মরশুমে আমাদের আইএসএল খেলা নিয়ে এফএসডিএলে কোনও আলোচনা হয়নি। আইএসএল খেলতে না পারলে এত টাকা শুধু মুখের কথায় কী ভাবে ইনভেস্ট করব? আমি ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের বলেছি, এফএসডিএল থেকে শুধু একটা লাইন লিখে আনুন যে, আমি ইনভেস্ট করলে পরের দিনই আমাদের আইএসএল খেলতে নিয়ে নেবে। কিন্তু সেই কাগজ এখনও পাইনি। দ্বিতীয়ত এখন শুনছি, দেশের এক নম্বর লিগ খেললে আমার কোম্পানির নাম ক্লাবের আগে ব্যবহার করতে পারব না। চুক্তি নিয়ে কথাশুরুর সময় যা যা শুনেছিলাম, এখন দেখছি সব অন্যরকম।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন, ইস্টবেঙ্গলের জন্য কিছু করতে চান?
প্রসূন: এখনও বলছি। যদি আমার থেকে টাকা নেওয়ার কথা হয়, তাহলে হয়তো ২-৩ কোটি এমনিই দিয়ে দিতে পারি। কিন্তু যেখানে বিপুল অঙ্কের লগ্নির প্রশ্ন আসছে, সেখানে আমি একা নই। আমার অনেক সহযোগী টাকা দেবে। আমি ইস্টবেঙ্গলকে ভালবাসি। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় আমার অন্য সহযোগী বন্ধুদের তো সেই টানটা থাকবে না। ওরা ব্যবসা বোঝে। ওরা এত টাকা ইনভেস্ট করার আগে সব বুঝে নেবে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল আগে চাইছে চুক্তিটা করে নিতে। তারপর বলছে, বাকি সব সমাধান হয়ে যাবে। এই জায়গাটাতেই পুরো চুক্তিটা আটকে আছে।
প্রশ্ন: আপনারা কি শুধুই সিনিয়র দল নিতে চাইছেন, নাকি প্রয়োজন মতো জুনিয়র ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামটাও দেখবেন?
প্রসূন: জুনিয়র ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম আমরাই দেখব। অ্যাকাডেমি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। তারও কাগজপত্র চেয়েছি। জানি ওরা দ্রুত চুক্তি চাইছে। আমরাও চাইছি। কিন্তু সব কাগজপত্র যতক্ষণ না পাচ্ছি, এগনো সম্ভব নয়। আমরা কিন্তু এতগুলো টাকা ইনভেস্ট করব আইএসএল খেলার জন্য। আই লিগের জন্য নয়।
প্রশ্ন: আপনারা আইএসএল খেলার জন্য রিলায়েন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন?
প্রসূন: আমরা ব্যবসায়ী। ইন্দোনেশিয়ায় থাকি। ভারতীয় ফুটবলের নিয়মকানুন বুঝি না। দেশের বাইরে বসে দেখেছি, আইএসএল নিয়ে উৎসাহ রয়েছে। তাই ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। ফুটবলের নিয়মকানুনের জন্য ওদের উপরেই ভরসা করেছি। যেমন জানতাম, ইস্টবেঙ্গল এই মরশুম থেকেই আইএসএল খেলছে। কিন্তু এখন দেখছি, সব নিয়মভাল ভাবে জানতে হবে। যদি চুক্তির ব্যপারটা অনেকটা এগিয়ে যায়, তাহলে রিলায়েন্সের সঙ্গে কথা বলে নিতে পারি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.