শুভদীপ রায়নন্দী, শিলিগুড়ি: শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও তিনি আদর্শ মানুষ। বরাবরই সাধারণের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। রাজনীতির আঙিনায় পা রাখার পরও সমাজসেবা মূলক কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। কথা হচ্ছে বাইচুং ভুটিয়ার। লকডাউনে ফের দেখা গেল সেই মানবিক বাইচুংকে। এমন সংকটের দিনে এক অসহায় তরুণীর পাশে দাঁড়ালেন ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক।
সিকিমের ডিকচুতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন অথিনা লিম্বা নামের ওই তরুণী। কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হননি তো? এই সন্দেহেই তরুণীকে ঘর থেকে বের করে দেন বাড়ির মালিক। অথিনার হাজার আকুতি-মিনতিও কথা কানে তোলেননি তিনি। মুখের উপর বন্ধ করে দেন বাড়ির দরজা। ফলে তিন-চার ঘণ্টা ঠায় রাস্তায় বসে থাকতে হয় তাঁকে। জ্বর গায়ে দীর্ঘক্ষণ খাবার না খেতে পেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন খবর বাইচুংয়ের কানে যেতেই তৎপর হয়ে ওঠেন। কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে তরুণীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভরতি করেন। চিকিৎসকরা জানান, তরুণীর স্বাভাবিক ফ্লু হয়েছে। করোনার কোনও উপসর্গ নেই।
তরুণীর শরীরে যে করোনার লক্ষণ নেই, তা লিখেও দেন চিকিৎসক। সেই কাগজ অথিনার বাড়ির মালিককে দেখানো হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তরুণীকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি। সাফ জানিয়ে দেন, লকডাউনের পর যেন তরুণী ফেরেন। অগত্যা একটি হোটেলে ঘর ভাড়া করে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করেন কিংবদন্তি ফুটবলার। ওষধুপত্রও জোগাড় করে দেন। সুস্থ হওয়ার পর ফের ভাড়া বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করেন অথিনা। কিন্তু তখনও তাঁকে থাকতে দিতে রাজি হননি মালিক। ফের জানান, লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তরুণীকে থাকার অনুমতি দেবেন না। এরপরই বাইচুং গোটা বিষয়টি জানান প্রধাননগর থানায়। সেখানে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। আপাতত পাহাড়িয়া ভবনে রয়েছেন তরুণী।
গোটা ঘটনার কথা ফেসবুকে তুলে ধরে বাইচুং বলছেন, “বর্তমানে বিভিন্ন জায়গাতেই এমন ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দাদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই বৈষম্যমূলক আচরণ কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আশা করি, প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করবে। তরুণী সুবিচার পাবে।” বাইচুংয়ের এই মানবিক রূপ প্রশংসিত হচ্ছে নেটদুনিয়ায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.