ফাইল ছবি
স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে জয়ে ফিরল দল। গত দু’টো ম্যাচে ড্র করার পর একরাশ অস্বস্তি গ্রাস করে ফেলেছিল এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan) শিবিরকে। সেই জায়গায় রয় কৃষ্ণ (Roy Krishna), ডেভিড উইলিয়ামসদের না খেলিয়ে তিন পয়েন্ট পাওয়া নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের। তারচেয়েও বড় কথা প্রথম চারে ঢোকা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। বাকি আছে শুধু লিগের শীর্ষে যাওয়া।
এসবের জন্য কোচ জুয়ান ফেরান্দো (Juan Ferrando) দলের প্রত্যেকের পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি। বিশেষ করে মনবীর, লিস্টন কোলাসো, সন্দেশ জিঙ্ঘানদের (Sandesh Jhingan) জন্য গর্ববোধ করছেন স্প্যানিশ কোচ। “কোভিড, কোয়রান্টাইন, নিয়মিত প্র্যাকটিস না হওয়া, সব মিলিয়ে পুরো দলে বিস্তর সমস্যা। তাসত্ত্বেও ছেলেরা যা খেলছে তা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। ছেলেদের দৃঢ় মানসিকতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখে আমি মুগ্ধ। আমি তো আরও কঠিন পরিস্থিতির সামনে পড়েছি। দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছি ডিসেম্বরে। প্রি-সিজনে ছিলাম না।” বেঙ্গালুরু ম্যাচের পর জানিয়ে দেন কোচ জুয়ান ফেরান্দো। ডিফেন্সের খেলায় এতদিন বেশ ফঁাকফোকর ধরা পড়ছিল। কিন্তু বেঙ্গালুরু ম্যাচে ডিফেন্স লাইনও বুক চিতিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। তবু ফেরান্দো মনে করছেন, রক্ষণকে আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। তাঁর প্রশ্ন, “৬-৭টা শট বেঙ্গালুরু নিয়েছিল আমাদের গোল লক্ষ্য করে। কেন হবে? বিপক্ষকে এতগুলো শট মারতে দেওয়া কোনওমতে উচিত হয়নি।”
এটিকে মোহনবাগানের পরবর্তী ম্যাচ বৃহস্পতিবার। প্রতিপক্ষ চেন্নাইয়িন এফসি। বর্তমান চেন্নাইয়িন লিগ টেবলে রয়েছে অষ্টম স্থানে। পরের ম্যাচ প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ফেরান্দো। তাই তো বলে দিলেন স্প্যানিশ কোচ, “পরের পরীক্ষায় বসার জন্য হাতে পাচ্ছি মাত্র দু’দিন। বেঙ্গালুরুকে হারাতে পেরেছি বলে সমর্থকরা খুশি হয়েছেন। কিন্তু আমাদের এদিকে নজর দিলে চলবে না। নিজেদের কাজে মনোনিবেশ করা খুব জরুরি।” পরের ম্যাচে কি ডেভিড উইলিয়ামস বা হুগো বুমোসকে প্রথম একাদশে দেখা যাবে? প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ফেরান্দো জানিয়ে দিলেন, এই ব্যাপারে বলার মতো সময় এখনও আসেনি।
“সময় আছে। তাই এখন থেকে এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়া ঠিক হবে না। তবে এটুকু বলতে পারি, কেরল ম্যাচে ডেভিড উইলিয়ামসকে ৪৫ মিনিট খেলিয়ে তেমন ভাল ফল পাওয়া যায়নি। হুগোকে বেঙ্গালুরু ম্যাচে তেমন কাজে লাগাতে পারলাম না। তাই খেলার কিছুক্ষণের মধ্যে তুলে নিতে বাধ্য হই। এখন আর এসব ভেবে লাভ নেই। বরং আমাকে ভাবতে হচ্ছে, মনবীর, লিস্টন, দীপক, কিয়ান, গিলদের নিয়ে। মনে রাখবেন এরাও কিন্তু দারুণ খেলছে। দলকে দারুণ ভাবে সাহায্য করছে। তাই এখন এদের নিয়ে ভাবছি।” জানিয়ে দিলেন ফেরান্দো।
সোমবার পুরো দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন প্র্যাকটিসে। ফেরান্দো অনুশীলনের ফাঁকে প্রত্যেককে বুঝিয়ে দিয়েছেন, লিগ শীর্ষে যেতে গেলে বাকি দু’টো ম্যাচ জিততে হবে। তারপর বোঝা যাবে দল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। একটাই স্বস্তি, ডিফেন্ডাররা তাঁর মান রেখেছেন। বিশেষ করে সন্দেশ জিঙ্ঘান আবার ফিরে এসেছেন স্বমহিমায়। বেঙ্গালুরু ম্যাচে সেরার পুরস্কার পাওয়া সন্দেশ অবশ্য জানিয়ে দিলেন, “গোল না খাওয়ার জন্য আমার একার কৃতিত্ব কখনও নয়। পুরো দল নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স তুলে ধরেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তবে ভাল লাগছে তিরির সঙ্গে বোঝাপড়া পুরনো জায়গায় ফিরে এসেছে।”
মনবীর ও লিস্টনের গোলকে ভূয়সী প্রশংসা করে সন্দেশ বলেন, “রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামসরা ভাল স্ট্রাইকার। তারা ছিল না। তাসত্ত্বেও লিস্টন, মনবীররা গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিল। তাই যারা মাঠে ছিল সকলেই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।” ম্যাচের সেরার পুরস্কার তিনি উৎসর্গ করেছেন স্ত্রী, পরিবারের সঙ্গে দলের সতীর্থদের। তবে সন্দেশ মেনে নিচ্ছেন, ফিটনেস লেভেলে এখনও ভাল জায়গায় আসতে পারেননি।
“ফিটনেস লেভেলে এখনও সেরা জায়গায় আসতে পারিনি। ম্যাচের সেরা হওয়ার জন্য নিশ্চয় ভাল লাগছে। তবে লিগ ও শিল্ড না পেলে এসবের কোনও গুরুত্ব থাকবে না। এই দু’টো আমাদের পেতে হবে। জানি কাজটা খুব কঠিন।” জানিয়ে দিয়েছেন সন্দেশ জিঙ্ঘান। অপর গোলদাতা মনবীর মনে করছেন, নিজের গোলের চেয়ে দল জেতায় তিনি আরও খুশি হয়েছেন। “গোলটা দেওয়ার পর বুঝে গিয়েছিলাম, তিন পয়েন্ট এই ম্যাচ থেকে আসছে। প্রথমার্ধে সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে তখনই আমরা তিন পয়েন্টের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যেতাম। গত দু’টো ম্যাচে আমরা চার পয়েন্ট নষ্ট করেছি। তাই এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পাওয়া খুব জরুরি ছিল। বিশ্বাস করুন, প্রথম চার নয়, আমাদের একটাই লক্ষ্য লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। কোচ আমাদের বলে দিয়েছেন, অন্যদের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। এখন আমাদের জেতার জন্য খেলে যেতে হবে।” জানিয়ে দিলেন মনবীর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.