ফাইল ছবি
যাবতীয় অভিযোগের তির তাঁর দিকে। পুরো মরশুম ভাল খেলে একেবারে শেষ মুহূর্তে সামান্য ভুলে ট্রফি হাতছাড়া। তারপর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় চলছে এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan) গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যকে (Arindam Bhattacharya) ঘিরে। সব জানেন। সব শুনছেন। কিন্তু তিনি চুপ। আইএসএলের (ISL 2020) সেরা গোলকিপার হওয়ার পরেও ট্রফি হাতছাড়া হওয়ার কষ্টে ভেতরটা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তাঁর। তাই সোমবার দুপুরে ঠিক করলেন শুধু সংবাদ প্রতিদিন-এই তাঁর সমস্ত কষ্ট, অভিমান উজাড় করে দিয়ে ফের ক’দিন সব কিছু থেকে দূরে থাকবেন। অরিন্দমের কথা শুনলেন দুলাল দে।
গোয়া থেকে ফিরবেন কবে?
অরিন্দম: হয়তো মঙ্গলবার, না হলে বুধবার। বাড়িতে কিছু কাজ চলছে। তাই ফিরে যেতে হবে।
আইএসএল ফাইনাল হয়ে গিয়েছে একদিন হল। এখন কি পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে?
অরিন্দম: গোয়া ছাড়ার আগে কোচ হাবাস পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন, ফুটবল থেকে কিছুদিন ফোকাস সরিয়ে রাখতে। সামনে এএফসি কাপ। তার আগে ফুটবল নিয়ে ফোকাস অন করতে। ফাইনালের পর এতটা ভেঙে পড়েছি, কারও ফোন ধরছি না। কারও সঙ্গে কথাও বলছি না। কথা বললেই সেই ফাইনালের প্রসঙ্গ আসবেই।
শুনলাম, ফোকাস সরানোর জন্য রয় কৃষ্ণর পরিবার রবিবার আপনাকে বাইরে কোথাও লাঞ্চে নিয়ে গিয়েছিলেন?
অরিন্দম: আসলে রয় কৃষ্ণরা বলছিল, বাইরে কোথাও খেতে যাবে। বেনোলিমের কাছে একটা ভাল রেস্তরাঁয় তাই খেতে নিয়ে গিয়েছিলাম।
কী বলল আপনাকে?
অরিন্দম: ম্যাচ শেষে হোটেলে ফিরে অন্যান্য ফুটবলাররা যা বলেছে, কৃষ্ণও তাই বলল। সামান্য একটা ভুলে যেন ভেঙে না পড়ি।
আপনিও বিশ্বাস করেন যে, ভুল করেছেন।
অরিন্দম: স্বীকার করছি। ভুল হয়েছে। আসলে যখন বলটা আটকাতে এগিয়ে এসেছিলাম, সেকেন্ডের ভগ্নাংশে মনে হয়েছিল, হেডটা যদি ভুল হয়ে যায়! তাই বুক দিয়ে রিসিভ করে জোরে শট মেরে বলটা উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম। আপনারা টিভির সামনে দেখেছেন। আর আমি পুরো অ্যাকশনটার মধ্যে ছিলাম। আমার হাতে ভাবার কোনও সময় ছিল না। একটা সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে হত। কিন্তু বুকে রিসিভটা ভুল হতেই সব শেষ হয়ে গেল। পরে ম্যাচটা টিভিতে দেখে আমারও মনে হয়েছে, বলটা হেড করলে বোধহয় এভাবে সবার চোখে খারাপ হতাম না।
মানে, আপনাকে নিয়ে কোথায় কী লেখা হচ্ছে, সবকিছুই ফলো করছেন?
অরিন্দম: ফোকাস সরানোর চেষ্টা করলেই কি আর সব কিছুর থেকে চোখ সরিয়ে রাখা যায়? কারা কী বলছে, সব কিছুই চোখে পড়ছে।
অথচ এই মরশুমে অনেক ম্যাচে আপনার এই হাত দুটোই অনেক পয়েন্ট দলকে এনে দিয়েছে।
অরিন্দম: কাউকে কিছু বলতে চাই না। যাঁরা যা সমালোচনা করছেন করুন। আইএসএলে আমি কীরকম খেলেছি, নিজের পক্ষে তা নিয়ে একটি শব্দও বলতে চাই না।
সমর্থকদের উপর অভিমান থেকে এরকম বলছেন?
অরিন্দম: সমর্থকদের উদ্দেশে একটা কথাই বলব, আমার ভুলেই সব শেষ, পারলে ক্ষমা করবেন।
প্রথম গোলটার ক্ষেত্রে কী হয়েছিল? সবাই জানতে চায়, পিছন থেকে তিরিকে কোনও কল করেছিলেন?
অরিন্দম: দেখুন, কোনও ডিফেন্ডার যখন বল নিশ্চিত ভাবে ক্লিয়ার করার জন্য হেডে উঠে যায়, তখন আর পিছন থেকে কল করে বিভ্রান্ত করি না। তাতে আরও বেশি ভুল বোঝাবুঝি হয়। দেখলাম, তিরি যদি বলটা মিস করে, পিছন থেকে আমি ধরে নেব। হেডটাও করল। কিন্তু ওটা যে বিপক্ষ স্ট্রাইকারের মতো গোলে প্লেসিং হয়ে যাবে ধারণাই করতে পারিনি। আসলে সময় যখন খারাপ যায়, সব কিছুই খারাপ হয়। তবে কী জানেন, সবাই আমার ভুলটাই দেখছে, রেফারি কী করলেন সেটা কেউ দেখতে পাচ্ছে না।
আপনি তো ঘটনাটার একদম উল্টোদিকে ছিলেন।
অরিন্দম: কিন্তু, কৃষ্ণ, উইলিয়ামসরা তো কাছেই ছিল। যখন অফসাইডের জন্য গোল বাতিল করা হল, সঙ্গে সঙ্গে রেফারির কাছে ছুটে গিয়েছিলাম। রেফারি বললেন, বলটা নাকি শেষ মুহূর্তে কৃষ্ণর পায়ে লেগেছে। তাই অফসাইড। হোটেলে ফিরে অনেকবার ঘটনাটা দেখার পরেও আমরা কৃষ্ণর টাচ খুঁজে পাইনি।
গোল্ডেন গ্লাভস পেলেন। কিন্তু ট্রফি হাতছাড়ার মতো জাতীয় দলের ২৭ জনের দলেও ডাক পেলেন না!
অরিন্দম: দেখুন, এই ব্যাপারে কোচ ভাল বলতে পারবেন। হয়তো আমাকে আরও উন্নতি করতে হবে। গত মরশুমেও একটুর জন্য গোল্ডেন গ্লাভস হাতছাড়া করি। তাতেও কিন্তু ডাক পাইনি। ঠিক করে নিয়েছি, আরও আরও ভাল পারফরম্যান্স করতে হবে।
গোল্ডেন গ্লাভস নেওয়ার জন্য যখন ঘোষণা হল, দেখা গেল শরীরটাকে টেনে টেনে নিয়ে গেলেন!
অরিন্দম: এটা তো আমার ব্যক্তিগত পুরস্কার। ট্রফি হাতছাড়া হওয়ায় পুরো দলটা তখন শোকাচ্ছন্ন। আর আমি তখন ব্যক্তিগত পুরস্কার নিয়ে ভাবব? যেতেই ইচ্ছে করছিল না।
ম্যাচ শেষ সবার আগে কার সঙ্গে কথা হয়েছে?
অরিন্দম: হাবাস। মাঠেই আমার পিঠে হাত দিয়ে বলেছেন, প্রতিটা দিন সেরাটা দিয়েছি। অনুশীলনেও সবার সামনে দায়বদ্ধতার নিদর্শন রেখেছি। একটা সামান্য ভুলে আগের কোনও কিছুই মিথ্যা হয়ে যায় না।
আইএসএলের সেরা সেভ কোনটা বলবেন?
অরিন্দম: আইএসএলের সেরা দশটি সেভের মধ্যে ভালসকিসের সেভটা কিন্তু প্রথমে রয়েছে। সেই সেভটার জন্যই এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যাওয়ার সুযোগটা সামনে এসেছিল। কিন্তু সেটাও হল না।
এরকম পরিস্থিতি আগে কখনও কেরিয়ারে এসেছে?
অরিন্দম: সত্যি, কোনওদিন আসেনি। একদিকে প্রতিযোগিতার সেরা গোলকিপারের সম্মান নেওয়ার জন্য মঞ্চে ডাকছে। আরেকদিকে হেরে গিয়ে মনে হচ্ছে শ্মশানে দাঁড়িয়ে আছি। গত আগস্টে আমার বাবা মারা গিয়েছেন। সেই শোকটা ফের ফিরে এসেছিল শনিবার রাতে। মুহূর্তটা কোনওদিন ভুলব না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.