দুলাল দে, দোহা: কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর আর্জেন্টিনা (Argentina) শিবিরে গেলে সংবাদমাধ্যমের এখন একটাই জিজ্ঞাসা, স্কালোনি কি নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ডি’মারিয়াকে (Angel Di Maria) শুরু থেকেই খেলাতে পারবেন?
আগেরদিন ডি’মারিয়া প্র্যাকটিসে যোগ দিলেও বল নিয়ে প্র্যাকটিস করেননি। তবে পুরো দলটার সঙ্গেই ফিজিকাল ট্রেনিংয়ে ছিলেন। আর তাতেই আশঙ্কা হয়েছিল, এদিন সংবাদমাধ্যমকে কিছুতেই প্র্যাকটিস দেখতে দেবেন না আর্জেন্টিনা কোচ। আর হলও তাই। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর মাঠের সামনে আজ সংবাদ মাধ্যমের জন্য বড় করে ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড। তবে ভিতর থেকে তবুও যা টুকরো টাকরা তথ্য ভেসে এল, সেটা শুনলে আর্জেন্টিনা সমর্থকরা খুশিই হবেন। সব ঠিকঠাক চললে, কোয়ার্টার ফাইনালের শুরু থেকেই হয়তো খেলবেন ডি’মারিয়া। তিনি খেললে বাদ পড়বেন পাপু গোমেজ।
আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বক্সের উপর লটরো মার্টিনেজকে একের পর এক বল সাজিয়ে দেওয়ার পরও যেভাবে গোল নষ্ট করে গিয়েছেন, তারপর অন্য কোচ হলে লটরো মার্টিনেজকে প্রথম দলে রাখার কথাই ভাবতেন না। কিন্তু লিওনেল স্কালোনি যে একটু অন্যধারার কোচ। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে যদি দলে অ্যাটাকারের সংখ্যা বাড়াতে চান, তাহলে ইন্টার মিলান স্ট্রাইকারকে না কি খেলানোর কথাও ভাবছেন।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্জেন্টিনার প্র্যাকটিস মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে সে দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা বলছিলেন, নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই খেলতে পারেন লটরো মার্টিনেজকে। কারণ, স্কালোনি না কি একজন অতিরিক্ত স্ট্রাইকার নিয়ে খেলতে চান। সেক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে স্ট্রাইকারে খেলবেন লটারো মার্টিনেজ। মেসি খেলবেন দুই স্ট্রাইকারে একটু পিছন থেকে উইথড্রনে।
বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে লটারো মার্টিনেজ দিনের পর দিন সুযোগ পেয়েও কেন এরকম গোল মিস করছেন, তা নিয়ে অবশ্য একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাঁর এজেন্ট আলেজান্দ্রো কামাচোকে। স্থানীয় এক রেডিও ষ্টেশনকে বলেছেন, গোড়ালিতে একটা চোট নিয়ে খেলতে হচ্ছে বলেই নিজের সেরাটা দিতে পারছেন না ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার। তবে লটারো নাকি পুরোপুরি চোটমুক্ত হওয়ার সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এজেন্টের বিশ্বাস, চোটটা সারিয়ে তুললেই গোলের বন্যা বইয়ে দেবেন এই আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার। তবে তাঁর পাস থেকে একের পর এক গোল নষ্ট করলেও কিন্তু লটরো মার্টিনেজের উপর এখনও ভরসা রেখেছেন স্বয়ং লিওনেল মেসি। তবে প্রথম দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে আলভেরেজের সঙ্গে লটারোর একটা অঘোষিত যুদ্ধ কিন্তু চলছেই। আর যার সুফল পাচ্ছে আর্জেন্টিনা দল।
তবে মেসি কিন্তু সত্যিই দারুণ মুডে আছেন। পুরো ফুটবল কেরিয়ারে প্রচুর ব্যক্তিগত পুরস্কার জিতেছেন। কিন্তু ভালমতোই জানেন, এই শেষে বেলায় যদি বিশ্বকাপটা না জিততে পারেন, তাহলে যত বড় ফুটবলারই হোন না কেন, চিরটাকাল থেকে যেতে হবে মারাদোনা নামক এক মহামানবের ছায়ায়। আর তাই ভীষণভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন সময়ের চাকাটাকে ঘোরানোর জন্য। বিশ্বকাপ নিয়ে তিনি এতটাই ফোকাসড ছিলেন যে, ১০০০ ম্যাচ খেলতে নামছেন, সেটাও খেয়াল করেননি। ম্যাচ শেষে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় যখন ঘোষক তাঁকে মনে করিয়ে দেন, কিছুটা বিস্মিত হয়েই পড়েন।
তবে ১০০০ ম্যাচ খেলার তিনদিন পরে তাঁর মনে হয়েছে, ফুটবল কেরিয়ারে হাজার ম্যাচ খেলা সত্যিই একটা মাইলস্টোন। আর তিনি সেই অপূর্ব মাইলস্টোনটি ছুঁয়ে ফেলেছেন। আর তাই এদিন কিছুটা আবেগতাড়িত হয়েই তাঁর হাজারতম ম্যাচ খেলা নিয়ে বক্তব্য পোস্ট করেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, এই দীর্ঘ পথ চলায় যাঁরা যাঁরা তাঁকে সাহায্য করেছেন, প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি।
বার্সেলোনায় তাঁর পেশাদার কেরিয়ার শুরু হয় ২০০৪-এ। খেলেছেন ২১ পর্যন্ত। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর দীর্ঘ কেরিয়ারের সবচেয়ে বেশি ৭৭৮ ম্যাচ খেলা বার্সেলোনাতেই। পিএসজিতে এসে এখনও পর্যন্ত ৫৩টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। আর দেশের জার্সিতে মোট ম্যাচ ১৬৯টি। কীভাবে, কখন যে তিনি এত ম্যাচ খেলে ফেলেছেন, সত্যিই বুঝতে পারেননি মেসি। আর তাই তিনি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে বলেছেন, ‘‘কখন যে হাজার ম্যাচ খেলে ফেললাম, সত্যিই বুঝতে পারিনি। তবে একজন পেশাদার ফুটবলার হিসেবে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে আমার যেরকম অনুভূতি হয়েছিল, এখনও ম্যাচ খেলতে নামলে ঠিক একই অনুভূতি হয়। কোনও অনুভূতিই বদল হয়নি।’’
কিন্তু সত্যিই কি তিনি জানতেন না হাজার ম্যাচ খেলে ফেলেছেন? মেসি জানিয়েছেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ খেলতে নামার আগে সত্যিই জানতাম না, হাজারতম ম্যাচ খেলতে নামছি। ম্যাচ খেলার পরই সত্যি সত্যি জানতে পারি। আসলে আমি অতীত নয়, বর্তমান নিয়ে বাঁচি।’’
হুম, এটাই আসল মেসি। আর সেই জন্যই তিনি এই বিশ্বকাপেও ২৩ বছরের এমবাপের সঙ্গে দৌড়চ্ছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.