দুলাল দে: ডার্বি ম্যাচে তিনি খেলবেন কি না, জানা নেই। এখনও দলের সঙ্গে প্র্যাকটিসেই নামেননি। কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের ডার্বির আপাত যে তালিকা, এখনও পর্যন্ত সেই তালিকার ধারে কাছেও নেই তাঁর নাম। তবুও ডার্বির আগে প্রয়াত সচিব পল্টু দাসের জন্মদিন উপলক্ষে ইস্টবেঙ্গলের ‘স্পোর্টস ডে’-তে আনোয়ার আলিকে ঘিরে সমর্থকদের আবেগের যে বিস্ফোরণ ঘটল, তাতে বহু তারকার উপস্থিতিতেও অনুষ্ঠানটা আনোয়ারময় হয়ে উঠল। আর শেষ লগ্নে মাস্টারস্ট্রোকটা দিলেন ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার। ‘অর্জুন।
লাল-হলুদ জার্সিতে তিন তিনটে আইলিগ জয়ী। আশিয়ান কাপের অন্যতম স্তম্ভ, লাল-হলুদের সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার দীপক মণ্ডলের হাত দিয়ে ইস্টবেঙ্গলে সরকারিভাবে বরণ করে নেওয়া হল মোহনবাগান থেকে ছিনিয়ে আনা আনোয়ার আলিকে। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস আনোয়ারের হাতে তুলে দিলেন ৪ নম্বর জার্সি। যা ইস্টবেঙ্গলে খেলার সময় দীপক মণ্ডল পরতেন।
কয়েকদিনের ব্যবধানেই দু’দুটো অনুষ্ঠান। ক্লাবের প্রতিষ্ঠা দিবসের পর পরই ‘স্পোর্টস ডে’। যেখানে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগেই ক্লাবের মাঠে ম্যাচ খেললেন প্রাক্তন ফুটবলাররা। যেখানে আলভিটো ডি’কুনহারা হারিয়ে দিলেন অসীম বিশ্বাসদের। ম্যাচের একমাত্র গোল এসেছে সেই আলভিটোর পা থেকেই। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে গোলকিপার সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়ের মাথার উপর দিয়ে বল জালে ফেলে দেন লাল-হলুদের প্রাক্তন এই তারকা ফুটবলার।
অনুষ্ঠান শেষের দু’ঘন্টা আগের থেকেই ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রের পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে মঞ্চের পিছনে বসে রইলেন আনোয়ার। সমর্থকদের কাছে খবর ছিল, এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেন তিনি। কিন্তু শুরুতেই কর্তারা সেই চমক ভাঙতে চাননি। ফলে দু’ঘন্টা ধরে মঞ্চের পিছনে বসেই ক্লাবের স্পোর্টস ডে ঘিরে যাবতীয় অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ পেলেন না। শুধুই শুনলেন। মঞ্চে ঘোষিকা শর্মিষ্ঠা গোস্বামী চট্টোপাধ্যায় এক এক করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের পুরস্কার বিজয়ীদের মঞ্চে ডেকে নিলেন।
বিশেষ ভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হল দু’জন কর্তাকে। যাঁরা দীর্ঘদিন সভাপতি এবং সচিব থাকার পর এবারই সরে দাঁড়িয়েছেন। প্রাক্তন সভাপতি ডাঃ প্রণব দাশগুপ্ত এবং প্রাক্তন সচিব কল্যাণ মজুমদারকে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে দু’জনেই এদিন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কারণ, এই দুই কর্তার সময়েই যেরকম আশিয়ান কাপ এসেছে, সেরকম এক মরশুমে পাঁচটি ট্রফি যেতার রেকর্ডও রয়েছে। এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘একটা সময় ইস্টবেঙ্গলের ট্রফি রাখার জন্য ঘরের সমস্যা হত। তবে মাঝে কয়েকটা দিন ট্রফির খড়া চলছে। আশা করছি, সেই খড়া কাটিয়ে ইস্টবেঙ্গল আবার সব ট্রফি জিতবে। সব ম্যাচ জিতবে।’ এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইস্টবেঙ্গল সভাপতি মুরারীলাল লোহিয়া, সহ-সভাপতি রাহুল টোডিও।
ইস্টবেঙ্গল ফুটবল দলের ইনভেস্টর ইমামীর কর্নধার আদিত্য আগরওয়ালের হাতে ক্লাবের আজীবন সাম্মানিক সদস্যপদ তুলে দেওয়া হয়। বক্তব্য রাখতে গিয়ে আদিত্য আগরওয়াল বলেন, ‘ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গেই আগেই যুক্ত হয়েছি। এবার পাকাপাকি ভাবে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গেলাম।’ এদিন পল্টু দাস স্মারক বক্তৃতা দেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তবে চমক অবশ্যই ছিল লিয়েন্ডার পেজকে মঞ্চে নিয়ে এসে সংবর্ধনা দেওয়া। আগেই ইস্টবেঙ্গলের ভারত গৌরব সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন লিয়েন্ডার।
এদিন ফের সংবর্ধনা দেওয়ার কারণ, সদ্য টেনিসের হল অফ ফ্রেমে সম্মানিত হওয়া। গৌতম ভট্টাচার্য তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারও নেন। যেখানে তিনি শুধু খেলায় নয়, জীবনের ক্ষেত্রেও শারীরিক ফিটনেসের পাশাপাশি মেন্টাল ফিটনেস ঠিক রাখার কথা বলেন। শেষে মঞ্চে যখন আনোয়ারকে ডেকে নেওয়া হল, নিজের গলায় থাকা লাল-হলুদ উত্তরীয় আনোয়ারকে পরিয়ে দিলেন লিয়েন্ডার পেজ। স্বাভাবিকবাবেই উচ্ছ্বসিত আনোয়ার বললেন, ‘মোহনবাগানে খেলেছি। কিন্তু আমাকে ঘিরে সমর্থকদের এরকম উচ্ছ্বাস দেখিনি। চেষ্টা করব পারফরম্যান্স দিয়ে সমর্থকদের মন জয় করতে। সঙ্গে ডার্বিতেও আমরাই জিতব।’ ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে তখন সমর্থকদের গলায় কোরাস বাজছে, ‘আনোয়ার..আনোয়ার..আনোয়ার..।’
অনুষ্ঠান স্থল তখন ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র না যুবভারতী বোঝা দায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.