সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বজয়ের কান্নায় ধুয়ে মুছে গেল আট বছর আগের দুঃসহ এক স্মৃতি গোল করে শূন্যে হৃদয় আঁকেন তিনি। এটাই তাঁর গোল উদযাপনের স্টাইল। ভক্তরা আদর করে ডাকেন, ”ও মারিয়া, ও মারিয়া।”
লুসেইল স্টেডিয়ামের ফাইনালেও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে রবিবার। আবেগাপ্লুত ডি মারিয়া গোল করে শূন্যে হৃদয় আঁকলেন। কাঁদলেন। টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পরে বিশ্বজয়ের পরও ডি মারিয়ার চোখে জল। মারিয়ার আনন্দাশ্রু।
বড় মঞ্চের খেলোয়াড় মারিয়া। ২০০৮ অলিম্পিক গেমসের ফাইনালে গোল ছিল তাঁর। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে মারিয়ার গোলেই জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ফাইনালিসিমা-তেও মারিয়ার নাম ছিল স্কোরলাইনে। বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটির মালিকের নাম অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। ফ্রান্সের রক্ষণভাগকে চিরে দিয়ে মারিয়ার বাঁ পা আলপনা এঁকে দেয়। তার পরেই আবেগের বিস্ফোরণ মারিয়ার। দেখেশুনে মনে হচ্ছিল, তাঁর গলায় জড়িয়ে রয়েছে আবেগের বাষ্প।
আগেও মারিয়ার চোখে জল দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। আট বছর আগের এক ফাইনালের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর ভক্তদের। গোলের সময়ে মারিয়ার কি মনে পড়েনি ব্রাজিলের সেই ফাইনালের কথা!
মারাকানার সেই ফাইনালের আগে তৎকালীন কোচ আলেয়ান্দ্রো সাবেয়ার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন আর্জেন্টাইন উইংগার। পরের দিনের ফাইনালে নামতে চেয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু চোট বড় বালাই। কোয়ার্টার ফাইনালে মারিয়ার থাইয়ের পেশি ছিঁড়ে গিয়েছিল। ইঞ্জেকশন নিচ্ছিলেন, খাচ্ছিলেন যন্ত্রণা উপশমকারী ওষুধ। তাতেও পায়ের ব্যথা কমছিল না। কিন্তু সামনে স্বপ্ন ছোঁয়ার হাতছানি। নিজের ফুটবল জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা, তবুও মাঠে নামতে চেয়েছিলেন তিনি।
ম্যানেজার আলেয়ান্দ্রো সাবেয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল মারিয়ার। খুব ভোরে তাঁর ঘরে গিয়ে মারিয়া বলেছিলেন, ”আমাকে যদি নামান তাহলে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত খেলে যাব।” সাবেয়াকে বলেছিলেন, বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখতে চান একবার। আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে নেমে এসেছিল জলের ধারা।
ফাইনালের জন্য সাবেয়া যখন দল ঘোষণা করলেন, সেই দলে রাখা হয়নি ডি মারিয়াকে। তাঁর পরিবর্তে সাবেয়ার প্রথম একাদশে জায়গা পেয়েছিলেন এনজো পেরেজ। এদিকে যন্ত্রণা কমানোর জন্য ডি মারিয়া ইঞ্জেকশন নিচ্ছিলেন। যদি দ্বিতীয়ার্ধে নামা যায়! কিন্তু সাবেয়ার কাছ থেকে সেই ডাক আর পাননি ডি মারিয়া। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের একেবারে শেষ লগ্নে মারিও গোৎজের গোলে জিতে যায় জার্মানি। স্বপ্ন ভাঙে মেসির। স্বপ্ন ভাঙে মারিয়ারও। তাঁর মনে প্রশ্নের ঝড় উঠেছিল। সাবেয়ার সামনে কেঁদে ফেলায় কি আর্জেন্টাইন কোচ অন্য কিছু মনে করেছিলেন? কোচ কি মনে করেছিলেন ডি মারিয়া নার্ভাস? তিনি তো খেলতেই চেয়েছিলেন।
তাঁর ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ফাইনালের আগে চিঠি পাঠিয়ে বলেছিল, খেলার মতো অবস্থা নেই তোমার। নামতে যেও না মাঠে। সেই সময়েই জোর চর্চা হচ্ছিল জেমস রডরিগেজকে নিয়ে। শোনা যাচ্ছিল বিশ্বকাপের পরেই জেমসকে সই করাবে রিয়াল মাদ্রিদ। আর কলম্বিয়ান তারকাকে নেওয়া হবে ডি মারিয়ার জায়গাতেই। রিয়ালের পাঠানো চিঠি না পড়েই ছিঁড়ে ফেলেছিলেন মারিয়া। জনশ্রুতি এমনটাই বলে।
✅ Juegos Olímpicos 2008
✅ Copa América 2021
✅ Finalissima 2022
✅ Copa Mundial 2022Un verdadero Ángel del gol ⚽ pic.twitter.com/OGxp8xyLjF
— Selección Argentina ⭐⭐⭐ (@Argentina) December 18, 2022
লুসেইল স্টেডিয়ামের শ্বাসরোধকারী ম্যাচটার আগেও নিয়মিত খেলেননি মারিয়া। ফাইনালে স্কালোনি তাঁকে মাঠে পাঠান। লেফট উইংয়ে পাখি হয়ে উড়েছিলেন মারিয়া। ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছিলেন বাঁ পায়ের তারকা। বন্ধু মেসির জন্য পেনাল্টি আদায় করে নেন। ফ্রান্সের চক্রব্যূহ ভেঙে দ্বিতীয় গোলটা করলেন। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁকে তুলে নেওয়ার পরই ফ্রান্সের বুকের উপরে চেপে থাকা পাথরটা সরে যায়। ম্যাচে ফেরেন এমবাপেরা। দিনের শেষে অবশ্য লিও মেসির জন্য অন্য চিত্রনাট্য লিখে রেখেছিলেন ফুটবল-ঈশ্বর। কাপ তাঁর হাতেই। কাঁদছেন ডি মারিয়া। এই কান্না আনন্দের।
বিশ্বজয়ের কান্নার জলে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে আট বছর আগের এক অভিশপ্ত ফাইনালের দুঃসহ স্মৃতি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.