দুলাল দে: ফেডারেশনের (AIFF) ডামাডোলের মধ্যে স্বস্তিতে নেই ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচও। পরিষ্কার ভাবে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৮ জুন থেকে কলকাতায় এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ড জিততে না পারলে, চাকরি যাবে তাঁর। গ্রুপে রয়েছে হংকং, কাম্বোডিয়া এবং আফগানিস্তান। ঘরের মাঠে এদের হারিয়ে এশিয়ান কাপের ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছতে না পারলে, জাতীয় কোচের পদে আর থাকার সম্ভাবনা নেই স্টিমাচের।
নির্বাচন, সিএজি (CAG) সব মিলিয়ে চারিদিকে যে নানারকম প্রচার শুরু হয়েছে, ফেডারেশন কর্তারা মনে করছেন, এর পিছনে প্রধান কারণই হচ্ছে জাতীয় দলের সাফল্য না পাওয়া। তবে ফেডারেশন নির্বাচন করছে না বলে চারিদিকে যে রব উঠেছে, তা নিয়ে রীতিমতো বিব্রত বোধ করছেন কর্তারা। কারণ, বিষয়টা বিচারাধীন। যতক্ষণ না সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) ফেডারেশনের নির্বাচন নিয়ে কোনও রায় দিচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত নির্বাচন করার অধিকার নেই অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের।
২০১৬’তে নির্বাচন সঠিকভাবে হয়নি বলে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করেন আইনজীবী রাহুল মেহেরা। তবে শুধুই ফুটবল ফেডারেশন নয়। বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের বিরুদ্ধেই স্বচ্ছতার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭-তে দিল্লি হাই কোর্ট প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেশিকে ফেডারেশনের ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ নিয়োগ করে। এতেই সমস্যায় পড়েন ফুটবল ফেডারেশন কর্তারা। কারণ, ফিফা (FIFA) কোনও সংস্থায় ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ নিয়োগ ভালভাবে নেয় না। ফিফার অনুমোদন বতিল হয়ে যেতে পারে ভেবে তড়িঘড়ি করে ফেডারেশন কর্তারা সুপ্রিম কোর্টে ফিফার নিয়ম দেখিয়ে আবেদন করেন। এরপরেই সুপ্রিম কোর্ট এসওয়াই কুরেশি (SY Qureshi) এবং প্রাক্তন জাতীয় গোলকিপার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়কে অম্বুডসম্যান নিয়োগ করে স্পোর্টস কোড অনুযায়ী ফেডারেশনের সংবিধান তৈরি করে মতামত দিতে বলে। একই সঙ্গে জানিয়ে দেয়, যতক্ষণ না নতুন করে নির্বাচন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তরফে কোনও নির্দেশ আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরনো কমিটিই সবকিছু দেখভাল করবে। আর এই সময়ের মধ্যে ফেডারেশনের তরফে কোনও বড় আর্থিক চুক্তিও করা যাবে না। ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য অনুযায়ী তাঁদের রিপোর্ট জমা পড়ে গিয়েছে। কিন্তু কোনও পক্ষ থেকেই ফেডারেশনের কাছে নির্বাচন সংক্রান্ত নিয়মবিধি নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনও নির্দেশ আসেনি। কিছুটা বাধ্য হয়েই ২০২০-তে ফেডারেশনের তরফে নির্বাচন করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চাওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনও নির্দেশ আসেনি। ফলে ফেডারেশন সভাপতি পদে থেকে গিয়েছেন প্রফুল্ল প্যাটেল। ব্যাপারটা যেহেতু পুরোটাই আদালতের বিচারাধীন, তাই নির্বাচন নিয়ে ফেডারেশন কিছুই করতে পারছে না।
এরমধ্যে সিএজির পক্ষ থেকে ফেডারেশনের কাছে ২০১৭-২০২১ পর্যন্ত অডিট রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সঙ্গে জমা দিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ফেডারেশনের জন্য কী কী ক্ষেত্রে অর্থ মঞ্জুর করা হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট। উল্লিখিত আর্থিক বছরের অডিট রিপোর্ট সহ কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন করা যাবতীয় আর্থিক হিসেব সিএজিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন ফেডারেশন কর্তারা। সচিব কুশল দাস (Kusal Das) বললেন, “আমরা সঠিক সময়ে সব কিছু সিএজিকে জমা দিয়ে দিয়েছি। সিএজির এই রিপোর্ট চাওয়াটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা।”
কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় ক্রীড়াসচিব এবং সাইয়ের (SAI) কর্তাদের সঙ্গে বাজেট নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন, কুশল দাস এবং অভিষেক যাদব। সেখানে সিনিয়র জাতীয় দলের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশার কথা বলা হয়। ফেডারেশন কর্তারা বলেন, সাফ জেতার পর সামনে এশিয়ান কাপের (Asian Cup) কোয়ালিফাইং রাউন্ড। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক তখন জুনিয়র ডেভলপমেন্ট নিয়েও প্রশ্ন তোলে। কুশল বাবু বলেন, কোভিড (COVID-19) পরিস্থিতিতে জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম ব্যাহত হয়েছে। এরপরই কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্র আপাতত ৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করা। জানায়, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বাজেট বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ফেডারেশন মনে করছে, ভারতীয় দল এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করলে অনেক সমস্যাই মিটবে। না পারলে, কোচ স্টিমাচের (Igar Stimac) চাকরি যাওয়া নিশ্চিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.