দুলাল দে, মারগাঁও: সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) সঙ্গে এফএসডিএলের ১৫ বছরের চুক্তি হিসেবমতো শেষ হবে ২০২৫ সালে। নিয়মমতো তার পরেই জানা যাবে, ভারতীয় ফুটবল থাকবে কোন কর্পোরেট সংস্থার হাতে। কিন্তু ২০২৫-এর চুক্তির শেষ দিন পর্যন্ত বসে থাকতে রাজি নন এফএসডিএল কর্তারা। ইতিমধ্যেই ফেডারেশন কর্তাদের সঙ্গে এফএসডিএল কর্তাদের এক প্রস্থ কথা হয়ে গিয়েছে চুক্তি নবীকরণ নিয়ে। যদিও পুরোটাই মৌখিকভাবে। তবে এক্ষেত্রে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এফএসডিলকে (FSDL) জানানো হয়েছে, এখনই তাড়াহুড়ো না করে, চুক্তি শেষ হওয়ার ৬ মাস আগে চুক্তি নবীকরণ নিয়ে আলোচনায় বসতে।
তবে ফেডারেশন এবং আইএসএলের সংগঠকদের মধ্যে সম্পর্ক এখন এতটাই মধুর যে, ১৫ বছরের চুক্তি শেষের পরের ১৫ বছরেও যে ভারতীয় ফুটবল রিলায়েন্সের হাতেই থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। খুব বেশি হলে তখন এফএসডিএল আর ফেডারেশনের পক্ষে মুখগুলি বদলে যেতে পারে। এমনিতে ফেডারেশন কর্তারা মনে করেন, জি স্পোর্টসের হাত থেকে ২০১০-এ এফএসডিএল যদি পুরো স্বত্বটা কিনে না নিত, তাহলে অথৈ জলে পড়ত ভারতীয় ফুটবল। জি স্পোর্টসের সঙ্গে চুক্তি থাকাকালীন শেষের দিকে, ফুটবলের পরিকাঠামো তো দূর, আইলিগের ম্যাচগুলিই দেখানো হচ্ছিল না। সেখানে আইএসএলের প্রতিটি ম্যাচ এখন স্টার স্পোর্টসে সরাসরি দেখানো হচ্ছে। আর আইএসএল করতে গিয়ে দেশের ফুটবল পরিকাঠামোটাই বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে এফএসডিএল। আইএসএলকে কেন্দ্র করে সারা দেশ জুড়ে একাধিক দারুণ মাঠ তৈরি হয়ে গিয়েছে। শুধু ম্যাচের জন্য মাঠ নয়। সঙ্গে অনুশীলনের মাঠ। ফেডারেশন কর্তারা মনে করছেন, আইএসএলের জন্য ফুটবলের পরিকাঠামো দ্রুত পরিবর্তন হতেই, দেশের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৭ ফিফা বিশ্বকাপ করা সম্ভব হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী এই মুহূর্তে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে প্রতি বছর ৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে এফএসডিএল। এর বাইরেও আইএসএল চালাতে গিয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য একাধিক খরচ।
কোভিড আবহে (Corona Pandemic) পরপর দু’বছর গোয়ায় আইএসএলের আয়োজন করতে গিয়ে গোয়া ফুটবলের পরিকাঠামোই বদলে দিয়েছে এফএসডিএল। ম্যাচ স্টেডিয়ামগুলির বাইরে অনুশীলনের মাঠের জন্য ১৩টা আধুনিক মানের মাঠ তৈরি করা হয়েছে। যার জন্য এই দু’বছরে এফএসডিএল খরচ করেছে ৭ কোটি টাকা। ফাইনালের আগে উত্তর গোয়ায় ‘পাররা’ বলে যে মাঠে শনিবার কেরালা ব্লাস্টার্স অনুশীলন করল, আইএসএলের আগে সেই মাঠ লাল সুরকির ছিল। আর এখন এফএসডিএল তা এমনভাবে তৈরি করেছে, চারিদিকে ঘাসের মখমল।
এখানেই শেষ নয়। কোভিড আবহে এই দু’বছরে এফএসডিএলের বাজেট আরও নানাভাবে বেড়েছে। বায়োবাবলের সুরক্ষার মধ্যে আইএসএলের কোচ-ফুটবলার-রেফারি-কর্তা সবাইকে রাখতে গিয়ে দু’বছরে খরচ হয়েছে অতিরিক্ত ৪০ কোটি টাকা! ফেডারেশন কর্তারা মনে করছেন, ভারতীয় ফুটবলের জন্য এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ এফএসডিএল ছাড়া আর কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। যে কারণে, বিভিন্ন বয়সের জাতীয় দলগুলিও এখন নিশ্চিন্তে ট্রেনিং করতে পারছে।
আপাতত রোড ম্যাপ ধরে যা ঠিক আছে, তা হল, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫-এ শুধুই আই লিগ থেকে আইএসএলে (ISL 2021-22) দলের উত্তোরণ ঘটবে। ২০২৫-২৬-এ গিয়ে আইএসএলের দলের অবনমন হবে। কিন্তু আই লিগের দল চ্যাম্পিয়ন হয়ে আইএসএলে এসে কীভাবে আর্থিকভাবে অন্য দলগুলির সঙ্গে মানিয়ে নেবে, সেই রাস্তা এখনও ঠিক করতে পারেনি এফএসডিএল। এর মধ্যে তারা চাইছে, আইএসএলকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরতে। যে কারণে, এএফসিও এখন আইএসএলের লিগ চ্যাম্পিয়নকে সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে দিচ্ছে। আর পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে, এফএসডিএল এই মুহূর্তে শুরু করে দিয়েছে ‘ইআইএসএল’। যার ফাইনাল রবিবার আইএসএলের ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যাবে স্টার স্পোর্টসে।
এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে আইএসএলের প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির রিজার্ভ দল নিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ। যদিও নিজেদের রিজার্ভ দল গড়তে না পারায় এই প্রতিযোগিতায় নেই এটিকে মোহনবাগান, এসসি ইস্টবেঙ্গল এবং নর্থ-ইস্ট। নবম দল হিসেবে খেলবে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের দল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.