দুলাল দে: কিছুটা অভিযোগ। কিছুটা পরামর্শ দিয়ে ফেডারেশন সেক্রেটারি জেনারেল সাজি প্রভাকরণকে চিঠি দিয়েছেন ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ওড়িশার অভিজিৎ পাল। ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে গেলে হয়তো এতটা হইচই হত না। কিন্তু একটি, দুটি নয়, একেবারে ৩৭টি রাজ্য সংস্থাকে এই চিঠির কপি পাঠিয়ে দিয়েছেন অভিজৎবাবু। আর এই চিঠির ঢেউয়ে ভারতীয় ফুটবল এতটাই আন্দোলিত যে, তড়িঘড়ি করে পাঁচ সদস্যর ‘পর্যবেক্ষক’-এর নাম ঘোষণা করতে হয়েছে ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে। পাঁচ সদস্যের পর্যবেক্ষক কমিটি গড়া হলেও কল্যাণ চৌবে সার্কুলারে লিখেছেন, সেক্রেটারি জেনারেল সাজি প্রভাকরণের সঙ্গে আলোচনা করেই পুরো ব্যাপারটা দেখভাল করতে হবে। আর এই পাঁচ সদস্যর পর্যবেক্ষক কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন অভিজিৎ পালও।
কার্যকরী কমিটিতে থাকলেও পাশাপাশি ফিনান্স কমিটিতেও রয়েছেন অভিজিৎ পাল। ফলে ফেডারেশন সচিবকে একাধিক আর্থিক প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি অর্থ সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রশ্নও তুলে দিয়েছেন, যা নিয়েই বিতর্ক। ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন হল, ফেডারেশন সচিবকে চিঠি দিয়ে তিনি এই প্রশ্নগুলি তুলতেই পারতেন। কিন্তু ৩৭টি রাজ্য সংস্থার কাছেও কেন এই চিঠির কপি পাঠিয়ে দিলেন, সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না।
ইদানীং ফেডারেশনের বেশ কিছু স্টাফকে চাকরি থেকে সরানো যেরকম হয়েছে, সেরকম বেশ কিছু নতুন স্টাফকে ফেডারেশনে চাকরি দিয়ে নিয়েও আসা হয়েছে। সম্প্রতি সরানো হয়েছে ‘অর্থকরী বিভাগ’-এর প্রধান মনোজ গুপ্তাকে। আর তারপরেই অভিজিৎ পালের এই চিঠি। যেখানে তিনি খোদ সাজি প্রভাকরণকেই চিঠি দিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমরা যখন (নতুন কমিটি) কাজ শুরু করেছিলাম, সিদ্ধান্ত হয়েছিল, স্টাফের সংখ্যা কমানো হবে। তারপর বেশ কিছু স্টাফ ছেড়ে দিয়েছেন। কাউকে আবার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন দেখছি, প্রচুর নতুন স্টাফকে নিয়োগ করা হয়েছে। সত্যিই কি আমাদের এত স্টাফের দরকার রয়েছে?’
এর পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘নতুন স্টাফদের নেওয়ার এই পদ্ধতি কি সত্যিই সব কিছু প্রথা মেনে হয়েছে? কারণ, ফিনান্স কমিটির কেউ এ বিষয়ে কিছু জানেন না। এমনকী যাঁদের নেওয়া হয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে আমরা কেউই কিছু জানি না। একই সঙ্গে আমরা জানতে চাই, এই সিদ্ধান্তে আমরা আর্থিকভাবে কতটা সুবিধে পাব?’ এর পাশাপাশি এই মুহূর্তে ফেডারেশনের ফিনান্স কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ফেডারেশন সচিবকে প্রস্তাব দিয়েছেন, ভবিষ্যতে কাউকে ফেডারেশনের চাকরিতে নিয়োগ করা হলে তা যেন ফিনান্স কমিটি থেকে অনুমোদন নিয়ে করা হয়।
এর পাশাপাশি অর্থকরী বিষয়ে আরও বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন ওড়িশার প্রতিনিধি। তাতে সিনিয়র দল-সহ আরও বিভিন্ন খাতে কত খরচ করা উচিত তা নিয়ে বিস্তর পরামর্শ দিয়ে চিঠি লিখেছেন তিনি। অভিজৎ পালের এই চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততার সঙ্গে মিটিং ডাকা হয় ফেডারেশনে। যে মিটিংয়ে অভিজিৎ পাল, হ্যারিস, বালি, তেতে-সহ ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবে এবং সেক্রেটারি জেনারেল সাজি প্রভাকরণও ছিলেন। শুরুতে সবার সামনেই সব কিছু আলোচনা শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর অবশ্য বলা হয়ে, এই আলোচনাটা শুধুই ফেডারেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে হলেই ভাল হয়। এরপর স্বাভাবিকভাবেই সাজি প্রভাকরণ আর সেই আলোচনায় ছিলেন না। তারপরই বৃহস্পতিবার সার্কুলার দিয়ে পাঁচ সদস্যর পর্যবেক্ষক কমিটির নাম জানিয়ে দেন কল্যাণ চৌবে। এই পর্যবেক্ষক কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে, এনএ হ্যারিসকে। ডেপুটি চেয়ারম্যান হয়েছেন অভিজৎ পাল। বাকি তিন সদস্য হলেন, তেতে, মুলরাজ এবং বিজয় বালি। একই সঙ্গে সাজি প্রভাকরণের সঙ্গে আলোচনা করে কোন কোন বিষয়গুলি এখন থেকে পর্যবেক্ষক কমিটি দেখবে, তা নিয়েও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাজেট, ফিনান্স টেন্ডার, পুরনো স্টাফদের সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নতুন স্টাফ নেওয়া, অফিস সংস্কার থেকে শুরু করে নতুন কোনও প্রজেক্ট এলে তার হিসেব এমনকী ক্লাব ফুটবলের আয়োজন সব কিছু এখন থেকে দেখবে এই পাঁচ সদস্যর পর্যবেক্ষক কমিটি। তবে অবশ্যই সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করে। এই প্রসঙ্গে অভিজিৎ পালকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “এর মধ্যে কোনও লুকোছাপা নেই। প্রকাশ্যেই চিঠি দিয়েছি। আর আমাদের মধ্যে কোনও বিভেদও নেই। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে ফুটবলের উন্নতির জন্য লড়াই করব। এই চিঠি নিয়ে সাজি প্রভাকরণ এবং কল্যাণ চৌবের সঙ্গেও আমাদের সবার আলোচনা হয়েছে।”
কিন্তু পাঁচ সদস্যর কমিটি কেন গঠন করতে হল? অভিজিৎ পাল বললেন, “খেয়াল করে দেখুন, পাঁচটি অঞ্চল থেকে পাঁচজনকে নেওয়া হয়েছে। এত ফুটবলের বিভিন্ন দিক নিয়ে সবাই নজর দিতে পারবে। এতে ফুটবলেরই ভাল হবে।” ওড়িশার প্রতিনিধি যাই বলুন, তাঁর এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতির পর্যবেক্ষক কমিটি গঠন নিয়ে কিন্তু ফুটবলের রাজধানী সরগরম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.