অজিদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও ভারতের ম্যাচ জয় অধরা থেকে গেল। ছবি: X হ্যান্ডেল
অস্ট্রেলিয়া: ২ (‘৫০ জ্যাকসন আরভাইন, ‘৭৩ জর্ডন বস)
ভারত: ০
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হার সবসময় হার। সেটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। তবে আবার স্কোরলাইন দেখে সবটা বিচার করাও উচিত নয়। স্কোরলাইন বলছে চলতি এএফসি এশিয়ান কাপে (AFC Asian Cup 2023) ভারতের (Indian Football Team) বিরুদ্ধে ২-০ ব্যবধানে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া (Australia)। কিন্তু যারা ম্যাচটা দেখেছেন, তাঁরা জানেন কতটা মরিয়া লড়াই করেছিল সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) দল। ফিফা (FIFA) র্যাঙ্কিংয়ে ২৫ নম্বরে থাকা অজিদের বিরুদ্ধে কীভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল ইগর স্টিমাচের (Igor Stimac) ছেলেরা।
২০১৫ সালের এএফসি এশিয়ান কাপ জয়ী দলের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াকু ফুটবল অনেকদিন মনে রাখবে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত জ্যাকসন আরভাইন (Jackson Irvine) ও জর্ডন বসের (Jordan Bos) গোলে হার মানল লড়াকু ভারত। আগামী ১৮ জানুয়ারি ভারতের পরবর্তী প্রতিপক্ষ আর একটি শক্তিশালী উজবেকিস্তান (Uzbekistan)।
গোলের দেখা না পেলেও, লড়াই ছিল বিপক্ষের চোখে চোখ রেখে। খেলার প্রথমার্ধে ভারত লড়াই করে গত কাতার বিশ্বকাপে খেলা অস্ট্রেলিয়াকে আটকে দিয়েছিল। গোলের মুখ খুলতে দেয়নি। দুরন্ত খেলেছেন সন্দেশ জিঙ্ঘানের সঙ্গে ভারতের বাকি ডিফেন্ডাররা। মাটি আঁকড়ে তাঁরা লড়াই করেছেন। তবে সুনীল ছেত্রী যদি ম্যাচের ১৬ মিনিটে সহজ গোলের সুযোগ মিস না করতেন, তবে হয়তো ১-০ এগিয়ে থেকে বিরতিতে মাঠ ছাড়তে পারত ইগর স্টিমাচের ছেলেরা।
১৬ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড। বল নিয়ে ডান ফ্ল্যাঙ্কে ছিলেন নিখিল পূজারি। কিন্তু তিনি জায়গা পাল্টে বাঁ-দিকের ফ্ল্যাঙ্ক থেকে আক্রমণে ওঠেন। পাস না বাড়িয়ে তিনি অজি ডিফেন্ডারদের ডজ দিয়ে উপরে উঠে আসেন। এবং তিনি অস্ট্রেলিয়ার বক্সের ভিতরে গোলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুনীলকে লক্ষ্য করে বাতাসে বল ভাসিয়ে। হেডে নিশ্চিত গোল ছিল। কিন্তু সুনীল অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। ফলে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট হয়ে গেল ভারতের।
এর পর থেকে প্রথমার্ধের বাকিটা সময় জুড়ে ছিল অজি স্ট্রাইকারদের সঙ্গে ভারতের ডিফেন্ডারদের লড়াই। মুহুর্মুহু আক্রমণ শানাল অস্ট্রেলিয়া। তবে লাভ হয়নি। প্রথমার্ধে গুরপ্রীত সিং সান্ধু ভালো পারফরম্যান্স করলেও, একটা সময় বড় ভুল করে বসেছিলেন। ২১ মিনিটে গোলকিক বাঁচাতে গিয়ে তিনি সরাসরি অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাঠিয়ে দেন ভারতের তারকা গোলকিপার। মেটকাফ বল পান এবং তিনি সেই বল ধরে গোলে লক্ষ্য করে সজোরে মারেন। তবে সেই শটটি সোজা গুরপ্রীতের কাছেই যায়। তিনি সেভ করেন। ভারত হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বাকিটা সময়ও ভারত লড়াই করে।
কিন্তু শেষরক্ষা হল না। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে দেখা গেল অজিদের। সেই গোল তারা বিরতির ঠিক পরেই পেয়েও গেল। আর অজিদের আটক রাখতে পারল না ভারত। বাঁদিক থেকে একটি ক্রস ভেসে আসলে, গুরপ্রীত এগিয়ে সেভ করতে আসেন। তবে বাঁচাতে পারেননি। প্রথমার্ধের যাবতীয় লড়াই এক মুহূর্তের ভুলে নষ্ট হয়। মার্টিন বয়েলের সেন্টারকে সেভ করার চেষ্টা করেন গুরপ্রীত। বল গ্রিপ করার বদলে পাঞ্চ করেছিলেন। সেই ফিরতি বল চলে যায় সরাসরি জ্যাকসন আরভিনের কাছে। সেই বল ধরেই আরভিন বল জালে জড়ান। ১-০ এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
৭২ মিনিটে ফের গোলের মুখ খোলে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের ৭২ মিনিটে দুই পরিবর্ত ফুটবলারের সৌজন্যে দ্বিতীয় গোল পেল অজিরা। রাইলি ম্যাকগ্রির মাইনাস থেকে আনমার্কড অবস্থায় জর্ডন বসের হালকা টাচে জালে জড়িয়ে গেল বল। নিখিল পুজারির ভুলে ২-০ এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়া রয়েছে ২৫ নম্বরে। ভারত সেখানে ১০২-এ। শুধু র্যাঙ্কিংয়ের তফাৎ নয়, দু’দলের ফুটবলের মান, শারীরিক দক্ষতা, প্রতিভা সবেতেই আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আর সেই কথা মাথায় রেখেও এশিয়ান কাপের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের নিংড়ে দিতে মরিয়া ছিল সুনীলের ভারত। এশিয়ান কাপে এই নিয়ে পাঁচ বার খেলতে চলেছে ভারত। গতবার গ্রুপ পর্বে তুলনায় সহজ প্রতিপক্ষ পেলেও, এবার সামনে তিন প্রতিপক্ষই কঠিন। তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া, যারা নিয়মিত বিশ্বকাপে খেলে। গতবার শেষ ষোলোতেও উঠেছে। খেলেছে বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা এবং রানার্স ফ্রান্স দু’দলের বিরুদ্ধেই। ফলে লড়াই যে অত্যন্ত কঠিন ছিল সেটা নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই। এটাই ছিল ভারতের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই হারলেও ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড কিন্তু ফুটবলপ্রেমীদের কাছে সম্মান ও সমীহ আদায় করে নিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.