দুলাল দে, রাশিয়া: খুব বেশি সাংবাদিক আসেননি। হাতে গুনে হয়তো বলে দেওয়া যায়, বড়জোর জনা বিশেক। আসলে ক্রোটরা খুব একটা বিত্তবান দেশের নাগরিক নয়। তাই বোধহয় খরচ করে বিশ্বকাপ কভার করতে রাশিয়া আসেনি। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার এক সাংবাদিকের সঙ্গে কাজের সূত্রে আগে থেকেই পরিচয় ছিল। খুব ধীর-স্থির প্রকৃতির লোক। কেন কী জানি, আজ সকালে দেখলাম লুঝনিকি স্টেডিয়ামের পাশে দাঁড়িয়ে অজানা ভাষায় কী সব গড়গড় করে বলে যাচ্ছেন। শরীরী ভাষা বলে দিচ্ছিল যে তিনি বেশ উত্তেজিত। পরে তাঁর মুখে শুনে সত্যিই তাজ্জব বনে গেলাম। কেন? হ্যারি কেন নাকি তাঁর ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিককে বলেছেন, আপনারা মদ্রিচ-মদ্রিচ করছেন করুন। ওকে ঠিকমতো খেলতেই দেব না। ডেনমার্ক, রাশিয়াদের হারানো যায়, ইংল্যান্ডকে হারানো সহজ কথা নয়। বুঝলাম না, সাংবাদিক বন্ধুটি কেনের এমন মন্তব্য পেলেন কোথা থেকে? কেন খুব বুদ্ধিমান। এতদিন ইংল্যান্ড শিবির ঘুরে দেখেছি, আলটপকা করার মতো ফুটবলার কেন নন। তাহলে তিনি এমন সব কথা বলতে পারেন? ক্রোয়েশিয়ার সাংবাদিকটি দেখলাম উত্তেজিত হয়ে বলছেন, কেন নিজেকে কী ভাবছে। ছ’টা গোল করেছে মানে কী সোনার বুট নিয়ে চলে যাবে? আরে বাবা সোনার বুট পেলে, মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো পায়নি। তাই বলে কি তাদের ফুটবল ব্যক্তিত্ব বিশ্ব ফুটবল থেকে কমে যাবে? সত্যি খেলা শুরু হওয়ার আগেই আর এক খেলা শুরু হয়ে গেল লুঝনিকি স্টেডিয়ামে।
দ্বিতীয় সেমিফাইনাল নিয়ে আগাম কিছু বলা মানে মুর্খামি ছাড়া আর কিছু নয়। এই ম্যাচে কে জিতবে সত্যিই বলা কঠিন। ক্রোয়েশিয়া এবার বিশ্বকাপে সত্যিই অসাধারণ খেলছে। আসলে এই দলটা দাঁড়িয়ে আছে লুকা মদ্রিচ, ইভান রাকিতিচের ওপর। এই দু’জন হল দলের মেরুদণ্ড। এদের ওপর নির্ভর করে দলটা চালিত হয়। তারচেয়েও বড় কথা, কেউ এই দলে সুপারস্টার খুঁজলে পাবেন না। মনে হতে পারে, লুকা মদ্রিচ হলেন আসল স্তম্ভ। তাহলে আপনি ভুল করে বসবেন। নাহলে ভাবুন এই দলটার আটজন কিনা স্কোরার। অর্থাৎ ক্রোয়েশিয়ার যে কোনও ফুটবলার গোল করার ক্ষমতা রাখে। নাহলে পরপর দু’টো ম্যাচে তারা ১২০ মিনিট খেলার পর কিনা টাইব্রেকারে ম্যাচের ফয়সালা করেছে। দু’বারই তারা জিতেছে। অর্থাৎ এই ছোট্ট ঘটনায় প্রমাণ হয়ে যায়, ক্রোটদের ছোট করে দেখার কোনও জায়গা নেই। তাছাড়া তারা হারিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। এদের মাঝমাঠটা সত্যিই দারুণ। দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠে রেবিচ-পেরিসিচ। তাই প্রতিপক্ষের ঘুম কেড়ে নিতে এরা সক্ষম হচ্ছে।
ইংল্যান্ডের সমস্যা বলতে একটা জায়গায়, ১১টা গোলের মধ্যে হ্যারি কেন করেছেন ছ’টা। বাকি পাঁচটা গোল অন্যান্যরা করলেও কেনের ওপর দলটা কিন্তু দাঁড়িয়ে। ক্রোটরা আজ কেন-কে সহজে খেলতে দেবে না। ফলে সমস্যায় পড়ে যেতে পারে ইংল্যান্ড। তবে ইংরেজদের রক্ষণ এবার ভালই খেলছে। ওয়াকার, স্টোনস, ম্যাগুয়ের দায়িত্ব নিয়ে খেলছে বলেই ইংল্যান্ড অনেক বেশি আক্রমণে উঠতে পারছে। তাছাড়া ইংল্যান্ড আক্রমণে উঠলে পাঁচজন চলে যাচ্ছে সামনে। বিশেষ করে কেনের সঙ্গে স্টারলিং-এর বোঝাপড়া বেশ ভাল। ফলে ইংল্যান্ডের পক্ষে গোল করা খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। আজ শুধু দেখার, লুঝনিকির দেবতা কার উপর সুপ্রসন্ন হন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.