রোমারিও: লিওনেল মেসি বনাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল কি দেখতে পাচ্ছেন? আমি দুঃখিত। সেরকম কোনও ভবিষ্যদ্বাণী আমি করতে পারছি না। বিশ্বকাপে ‘এল ক্লাসিকো’ হতে গেলে আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্সকে যথাক্রমে ফ্রান্স এবং উরুগুয়ের কঠিন চ্যালেঞ্জ উতরোতে হবে রাউন্ড অব সিক্সটিনে। সেজন্য ১৮০ মিনিট অথবা ২৪০ মিনিট অথবা ২০টা পেনাল্টি কিকের আগে কিছুই বলা সম্ভব নয়।
রাশিয়ায় নকআউটের প্রথম রাতে এক সেট করে ইউরোপ ভার্সেস লাতিন আমেরিকান লড়াই হবে। যার প্রথমটা ফ্রান্স বনাম আর্জেন্টিনা। যাদের কেউই এ বারের বিশ্বকাপে এখনও ঘাসে সত্যিকারের আগুন জ্বালিয়ে উঠতে পারেনি। যদিও তার মধ্যেই তুলনায় ফরাসিদের গ্রুপ পর্ব অভিযান অনেক ভাল ছিল। ফ্রান্সের খেলাকে এককথায় বলা যায় কার্যকর। গ্রুপে ওরা ‘টপ’ করেছে। কিন্তু যাদের দলে গ্রিজমান, জিরুর মতো ফরোয়ার্ড আছে তাদের তিন ম্যাচে মাত্র তিন গোল করাটা মোটেও যথেষ্ট নয়। এটা ওদের মিডফিল্ডের জন্যও ভাল বিজ্ঞাপন নয়। ওদের আরও ভাল পারফরম্যান্স করার সমস্ত মশলা আছে টিমে। শনিবার ফ্রান্সকে নিজেদের খেলাটাকে অনেক উপরে তুলতে হবে। কারণ টুর্নামেন্টের এই পর্বে সেটাই দাবি করে।
আর্জেন্টিনাকে অবশ্য আরও বড় সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। ওরাও গ্রুপে তিন গোল করেছে। কিন্তু গোল খেয়েছে পাঁচটা। যার মধ্যে ওদের মাঝমাঠ আর ডিফেন্সের চোয়াল ভেঙে ক্রোয়েশিয়া তিনটে ঢুকিয়েছে। যে ডিফেন্স লাইন গ্রুপের প্রতিটা ম্যাচে গোল হজম করেছে সেই পজিশনটা অবশ্যই কোচের প্রবল আশঙ্কার জায়গা। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, আর্জেন্টিনা আজ ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের দিনের মতো ব্যাক লাইনে তিন জন রেখে খেলার ঝুঁকি বা সাহস কোনওটাই দেখাবে না। একইসঙ্গে অবশ্য বলব, তারপরে আর্জেন্টিনা শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ভাল কামব্যাক করেছে। এবং ওদের ওইরকম আরেকটা পারফরম্যান্স শনিবারের নকআউট ম্যাচকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে পরিণত করবে। আগের ম্যাচে মেসির গোল পাওয়াটা আর্জেন্টিনা টিমের পক্ষে সু-ইঙ্গিত। নকআউটে উঠতে যে ম্যাচে জেতা ছাড়া অন্য উপায় ছিল না, সেসময় আর্জেন্টিনার জয়টা ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে নিশ্চয়ই।
পর্তুগাল-উরুগুয়ে লড়াই আবার সাধারণ বিচারে দুই তারকা স্ট্রাইকারের ডুয়েল বলা যায়। রোনাল্ডোর ক্ষমতা আমাদের সবারই জানা। কিন্তু পর্তুগালের শেষ ম্যাচে রিকার্ডো কুরেসমা কী দুর্দান্ত গোলটাই না করেছে! একইভাবে সুয়ারেজের পাশে কাভানি-ও আছে। যেটা রোনাল্ডো বা সুয়ারেজকে আরও ভয়ংকর করে তুলবে। বিপক্ষ ডিফেন্ডাররা ওদের কীভাবে আজ সামলায় সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি। গডিনদের মতো পেপেদেরও কিছুতেই নিজেদের গোলের ২৫ গজের মধ্যে ফাউল করা চলবে না। রোনাল্ডো-সুয়ারেজ, দু’জনেরই কিন্তু এ বারের বিশ্বকাপে ডাইরেক্ট ফ্রিকিক থেকে গোল আছে।
দু’টো দলেরই খেলা দেখে আমার মনে হয়েছে, ওরা লড়াই করতে প্রস্তুত। অস্কার তাবারেজের উরুগুয়ে এধরনের ম্যাচ খেলার জন্য পোক্ত। ওরা মাঝমাঠটায় লোক বাড়িয়ে ভিড় করে তোলে। যেখানে বিপক্ষকে এক ইঞ্চি জায়গা পেতেও লড়তে হয়। মজার ব্যাপার হল, ফের্নান্দো স্যান্টোসের কোচিংয়ে ২০১৬ ইউরো কাপ থেকে পর্তুগালও একই স্টাইলে খেলছে। মাঝমাঠ জমাট রেখে বিপক্ষের সমস্ত চাপ হজম করার ক্ষমতা রাখে ওরাও। পর্তুগাল-উরুগুয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচ হবে। ফলে প্লেয়ারদের মাথা ঠান্ডা রাখা দরকার।
আজকের দু’টো নকআউট ম্যাচেই ব্যক্তিগত ট্যালেন্টের ছড়াছড়ি। তবে চার দলেই অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার থাকলেও আমার আশা, ট্যাকটিক্যাল ফুটবল হবে। গোলের সুযোগ কমই আসবে। হয়তো বিপক্ষের কোনও আচমকা ভুলে সুযোগসন্ধানী গোলটোল দেখব দু-একটা। সে যাক গে। দু’টো লড়াই-ই উত্তেজক হবে। আমি তো শুধু রেফারির ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজার অপেক্ষা করছি!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.