সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মস্কো থেকে তিরিশ মাইল দূরে ব্রনিস্তি নয়, দেখে মনে হতে পারে আর্জেন্টিনার কোনও শহরে বেস ক্যাম্প চলছে মেসিদের! কোচ জর্জ সাম্পেওলি অন্তত ব্যাপারটা সেরকমই করতে চাইছেন! দেশ থেকে প্রচুর সমর্থক যাবেন, তাতে কোনও নতুন ব্যাপার-স্যাপার নেই। কিন্তু সাম্পাওলি পুরো পরিবেশটা এমনভাবে তৈরি করতে চাইছেন যাতে মনে হবে নিজের দেশেই রয়েছেন ফুটবলাররা। শ্যেফদের টিম মস্কোতে মেসিদের পৌঁছনোর আগেই চলে গিয়েছে। আর এবার তিন টন খাবার সঙ্গে করে নিয়ে রাশিয়া যাচ্ছে আর্জেন্টিনা।
ব্রনিস্তিতে কী কী পাওয়া যাবে, মেসিরা যা চাইবেন, সেটা খুব সহজে পাওয়া যাবে কি না, সেটাও কেউ জানে না। তিন টন খাবারের সবটাই ট্র্যাডিশনাল আর্জেন্টাইন ফুড। কনডেনসড মিল্ক থেকে শুরু করে কফি মিশ্রিত ড্রিঙ্ক সবই থাকছে। একটা জিনিস পরিষ্কার, বিশ্বকাপ শুরুর আগে ফুটবলাররা যাতে খাবার নিয়ে কোনওরকম সমস্যায় না পড়ে, তার জন্যই এমন পরিকল্পনা। রাশিয়ার নতুন ধরনের খাবার-দাবার খেয়ে যাতে ফুটবলাররা কোনওভাবেই পেটের সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য যতটা সম্ভব খাবার আর্জেন্টিনা থেকেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তবে এ হেন এলাহি আয়োজনের মধ্যেও একটা জিনিস খটকা লাগার মতো। আমাদের দেশে ক্রিকেটারদের কথা ছেড়েই দিন, ফুটবল অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীকেও হোটেলে থাকার জন্য আলাদা রুম দেয় ফেডারেশন। কিন্তু আর্জেন্টিনার এ হেন বেসক্যাম্পে মেসির জন্য আলাদা কোনও রুম নেই! তাঁকে একই রুমে থাকতে হবে মারাদোনার প্রাক্তন জামাই আগুয়েরোর সঙ্গে! একে মেসি, তার উপর দলের ক্যাপ্টেন। তবুও কোনও আলাদা জামাই-আদর নেই!
এমনিতেই বিশ্বকাপ শুরুর আগেই চোট-সমস্যায় পড়েছে সাম্পাওলির টিম। লিগামেন্টে চোট পেয়ে টুর্নামেন্টের বাইরে চলে গিয়েছেন লানজিনি। তাঁর পরিবর্তে টিমে এলেন এনজো পেরেজ। যদিও একটা কানাঘুষো চলছিল, বার্কো নেওয়া হতে পারে লানজিনির পরিবর্ত হিসাবে। যদিও পেরেজ আর গুইদো পিজারোর মধ্যে লড়াইটা ছিল। পাশাপাশি বার্কোর নামটাও শোনা যাচ্ছিল। এর মধ্যে আবার ইকার্ডির নামটাও ভেসে উঠছিল। শেষ মরশুমে দুরন্ত ফর্মে ছিলেন ইকার্ডি। ইন্টার মিলানের হয়ে ২৯ গোল রয়েছে। তাঁকে টিমে না রাখা নিয়ে প্রবল বিতর্কও হয়েছিল। তবে এক্ষেত্রেও ইকার্ডিকে উপেক্ষিতই রেখে দেওয়া হল। সাম্পাওলি ভরসা রাখলেন পেরেজের উপরই। শেষপর্যন্ত অবশ্য পেরেজকেও নেওয়া হল।
১৬ জুন আইসল্যান্ড ম্যাচের আগে রাশিয়ায় পাঁচদিন প্রস্তুতির সুযোগ পাবেন মেসিরা। প্রস্তুতি ম্যাচে হাইতিকে চার গোলে হারালেও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ম্যাচ বাতিল হয়ে যায়। একটা মহল বলছে, বিশ্বকাপ শুরুর আগে আরও কয়েকটা প্রাকটিস ম্যাচ খেলে নেওয়া উচিত ছিল মেসিদের। যদিও আর্জেন্টিনা শিবিরে সেসব নিয়ে খুব একটা চিন্তা নেই। বরং যেভাবে প্রস্তুতি চলছে, তা নিয়ে বেশ খুশিই সাম্পাওলি।
আর পুরো টিমকে চাঙ্গা রাখার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন স্বয়ং মেসি। বার্সালোনাতে নিজের রেস্তোরাঁয় সবাইকে ডিনার করিয়েছেন। বিশ্বকাপে অর্জেন্টিনার ভাগ্য অনেকটাই মেসির উপর নির্ভরশীল, সেটা নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না।
প্রাক্তন ডাচ তারকা প্যাট্রিক ক্লুইভার্ট যেমন বলছেন, আর্জেন্টিনা টিমের অর্ধেকটাই হল মেসি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “মেসি খুব গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার। সেটা আর্জেন্টিনা আর বার্সেলোনা দুটো টিমের ক্ষেত্রেই। আমার তো মনে হয়, জাতীয় টিমের অর্ধেকটাই হল মেসি। তবে এটাও বলব, আর্জেন্টিনা যে শুধুই মেসির উপর নির্ভর করে থাকবে সেটা নয়। কিন্তু নিজের দিনে ওর পাওয়ারটাই শেষ কথা।”
পাশাপাশি এটাও বলে রাখলেন যে, মনে রাখতে হবে মেসিও একজন রক্তমাংসের মানুষ।এক-আধ দিন ওরও খারাপ যেতেই পারে। সেদিন বাকিদের পুষিয়ে দিতে হবে। না হলে ব্যাপারটা বেশ কঠিন হবে। “ বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই পর্বেও যে ম্যাচে মেসি খেলেনি, সেখানেই সমস্যায় পড়েছে আর্জেন্টিনা। টিমে এমন ফুটবলার নেই যারা খারাপ দিনেও ম্যাচ বের করে দিতে পারবে। সেটা যদি কেউ করতে পারে, একমাত্র মেসিই।” আর এটা শুধুই ক্লুইভার্ট নন, আর্জেন্টিনা কোচ জর্জ সাম্পাওলিও খুব ভাল করেই জানেন!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.