জোসে ব্যারেটো: নামটা ‘এল’ দিয়ে শুরু। ‘আই’ দিয়ে শেষ। যে মাঠে নামলে আমিও একজন নিছক ফুটবলপ্রেমীর মতোই হয়ে উঠি। জানি পরের নব্বই মিনিট এমন সমস্ত স্কিল দেখতে পাব যা আমাকে সম্মোহিত করে রাখবে। এমন সমস্ত মুভ তৈরি করবে যা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে ভাবব ফুটবলটা তো আমিও খেলতাম, কই এ সব তো করতে পারতাম না। এমন সমস্ত গোল দেখব যার রিপ্লে বারবার দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ব। বুঝতেই পারছেন কার কথা বলছি। হ্যাঁ, লিওনেল মেসি। শনিবার শুরু হচ্ছে মেসির বিশ্বকাপ অভিযান। আমি ব্রাজিলিয়ান ঠিকই। কিন্তু শৈল্পিক ফুটবলের প্রেমিক হিসেবে মেসির ম্যাচ নিয়ে কয়েক কোটি ভক্তের মতো আমিও উৎসুক। বয়স যদি ধরা হয় তা হলে হয়তো এটাই মেসির শেষ বিশ্বকাপ। সবাই বলছে প্রত্যাশার চাপে নাকি মেসি পারবে না। কিন্তু চাপ তো প্রতিটা ফুটবলারের উপরই থাকে। আমার মনে হয় এই চাপ এবার মেসিকে আরও ভয়ংকর করে তুলবে।
কেন বলছি? গত কয়েক বছরে দেশের জার্সিতে ব্যর্থতাই মেসিকে মানসিক ভাবে আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলেছে। একটা ফুটবলারের পিঠ যখন দেওয়ালে ঠেকে যায়, যখন সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হতে হাফিয়ে ওঠে, তখনই সেরাটা বেরিয়ে আসে। মেসিকে দেখে মনে হচ্ছে, ও বুঝে গিয়েছে হারানোর কিছু নেই। ডু অর ডাই যাকে বলে। হয় বিশ্বকাপ জিতবে না হয় চিরজীবন শুনবে সেটা দিতে পারেনি দেশকে। এটাও ঘটনা, লাস্ট স্টপে এসে চূড়ান্ত পেশাদাররা নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দেয়। মেসি সহজে হাল ছাড়বে না।
[রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক করে স্প্যানিশ আর্মাডা রুখে দিলেন রোনাল্ডো]
অনেক ফুটবলবোদ্ধারা বলে ক্লাব জার্সির ফর্ম নাকি আর্জেন্টিনার হয়ে মাঠে নেমে মেসি দেখাতে পারে না। আরে ফুটবল যদি এতটাই সহজ একটা খেলা হত তা হলে প্রতি বছরে একটা করে মেসি তৈরি হত। ক্লাবের হয়ে গড়ে একটা ফুটবলার খেলে পঞ্চাশের মতো ম্যাচ। প্রায় প্রতিটা দিন সেই এক দলের সঙ্গে তুমি খেলছ। কোচের স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে ধাতস্থ হতে পারছ। দলের মধ্যে বোঝাপড়া আগাম পড়ে নিয়ে নিজেকে আলাদাভাবে গড়ে নিতে পারছ। আর দেশের হয়ে ছবিটা সম্পূর্ণ উলটো। নতুন স্ট্র্যাটেজি। নতুন সিস্টেম। আশেপাশে ফুটবলাররা সবাই আলাদা। হাতেগুণে বলা যায় বছরে মাত্র ক’টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফুটবলাররা। তা হলে বোঝাপড়াটা হবে কোথা থেকে।
আর্জেন্টিনায় মেসি ক্লাবের মত ছন্দে খেলতে পারে না কারণ প্রতিটা কোচই নিজের সিস্টেম অনুযায়ী খেলে। মেসির সিস্টেম অনুযায়ী দলটা সাজায় না। বার্সেলোনায় যেখানে মেসি খুব সেন্ট্রালি খেলে। আর্জেন্টিনায় বারবার ড্রিফ্ট করতে হয় উইংয়ে। অর্থাৎ গোলের থেকে দূরে সরে যায়। আর্জেন্টিনার নতুন কোচ জর্জ সাম্পাওলি যে সমস্যাটা এসেই ধরেছেন। আমি কয়েকটা ম্যাচ দেখেছি আর্জেন্টিনার। সাম্পাওলি পুরোপুরি সেন্ট্রালি খেলাচ্ছেন মেসিকে। সিস্টেমটা তৈরি করছেন ওকে ঘিরেই। যেখানে পাশে দু’জন ওয়াই়ড প্লেয়ার থাকছে। আর নীচে ক্রিয়েটিভ কাউকে রাখছেন। যাতে মেসিকে বল সাপ্লাইতে সমস্যা না হয়।
[বিশ্বকাপের মরশুমে ব্রাজিলের শহরে আর্জেন্টিনার ছোঁয়া, কেন জানেন?]
এ বার আসি ফুটবলার মেসির বিবর্তনের কথায়। মেসির তো সব সময়ই স্কোরিং ইনস্টিংকট ছিলই। কিন্তু ওর ভিশনও দুর্দান্ত। গত মরশুমে লা লিগার সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের রেকর্ড করেছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে স্কিমার মেসিও দারুণ। গ্রাউন্ড পাস হোক বা ক্রস। প্রতিটাই বসিয়ে দেয় সতীর্থের পায়ে। আবার ফ্রি-কিকগুলোও আগের থেকে ধারালো। ইন্টারনেট ঘেঁটে পড়ছিলাম মেসি নাকি ট্রেনিং গ্রাউন্ডে আলাদা সময় দেয় সেট পিসে। এতেই বোঝা যাচ্ছে মেসি এ বার ওর প্রতিটা অস্ত্রকেই শান দিয়ে রেখেছে।
শনিবার মেসিরা এমন একটা দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে যারা খুব ফিজিক্যাল। ইউরোতে দেখা গিয়েছে আইসল্যান্ড কমপ্যাক্ট একটা দল। যারা সচরাচর শেপ হারায় না। আর এমন একটা দলের বিরুদ্ধে গোল করা সব সময় মুশকিল। তবে ইউরোতে বিপক্ষে তো মেসিকে সামলাতে হয়নি। আর দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মেসিকে আটকাতে গেলে স্পেশ্যাল কিছু চাই। মনে হয় না ওদের কাজটা সহজ হবে।
[সালাহ বিহীন মিশরের বিরুদ্ধে কষ্টার্জিত জয় উরুগুয়ের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.