দুলাল দে, মস্কো: এমনিতেই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ ড্র করে চাপে ব্রাজিল। মঙ্গলবার বিকেলে তাই কোস্টারিকা ম্যাচের প্রস্তুতি চলছিল রীতিমতো জোরকদমে। সেলেকাওদের প্র্যাকটিসে সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু সুইজারল্যান্ড ম্যাচের মতোই ব্রাজিল অনুশীলনের সেই তাল কাটতে বেশি সময় লাগল না। সামান্য একটা বল এসে লাগল নেমারের ডান পায়ে। মাসকয়েক আগেই অস্ত্রোপচার করা সেই ডান পায়ে! আর তারপরই যেভাবে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেলেন তিনি, তা দেখে পরমুহূর্তে যে ভাবনাটা মনের মধ্যে সবার আগে আসবে, নেইমার আবার বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাবেন না তো? তাহলে তো ব্রাজিলের ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’!
বলটা এসে ডান পায়ে লাগামাত্র নেইমার থমকে যান। হাঁটুতে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে থাকা নেইমারকে দেখলে তখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, সুইজারল্যান্ড ম্যাচ ড্র-এর ধাক্কার চেয়ে তাঁর আবার পায়ের যন্ত্রণা বেড়েছে। মাঠে ওই অবস্থায় বেশ কিছুক্ষণ থ মেরে থাকার পর বেরিয়েই গেলেন ব্রাজিলীয় পোস্টার বয়। একা নন। ব্রাজিল ফিজিওর সাহায্য নিয়ে। তারপর একা আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন ড্রেসিংরুমের অন্দরে। টিম ব্রাজিল অবশ্য তারপরেও ভেঙে পড়ছে না। টিম ডাক্তার রডরিগো লাসমার জানিয়ে দিয়েছেন, দু’দিন আগে প্রথম ম্যাচে নেইমারের ডান পায়ের এই জায়গাতেই দশবার মেরেছে সুইসরা। তারপর এদিন প্র্যাকটিসে ঠিক ওখানেই বল লাগায় যত বিপত্তি! তবে আসল কথাটা বললেন ব্রাজিল দলের ফিজিওথেরাপিস্ট ব্রুনো মাজ্জিওত্তি। জানালেন, এই নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। বুধবার সকালের প্র্যাকটিসে তাঁকে বাকি দলের সঙ্গে যেমন দেখতে পাওয়ার কথা তেমনই দেখা যাবে।
শুক্রবার কোস্টারিকা ম্যাচের আগে ব্রাজিল শিবিরে সেরকম কোনও ইনসেনটিভ চালুর কোনও খবর অবশ্য নেই। কিন্তু সেই সাতসকালেও খবর ছিল নেইমার নিয়ে। আর সেটাই টেক্সট মেসেজে জানালেন ফার্নান্ডেজ।
–নেমার ঠিক আছে? সোমবার যে প্র্যাকটিসে এলেন না?
–সব ঠিক আছে। নেইমারের মা নাদিনে ইনস্টাগ্রামে একটা ছবি পোস্ট করেছেন দেখুন। তাহলেই বুঝে যাবেন নেইমার দারুণ মুডে আছে।
আসলে প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর জঘন্য পারফরম্যান্সের পর সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলোতে তাঁকে নিয়ে এমন ট্রোল শুরু হয়ে যায় যে, ভেঙে পড়েছিলেন প্যারিস সাঁ জাঁ স্ট্রাইকার। তাঁকে সামলানোর দায়িত্ব নেন কোচ তিতে। কোচের পাশাপাশি তিতে একজন ভাল মনস্তত্ত্ববিদও। ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন তাই বিশ্বকাপেও জাতীয় দলের সঙ্গে আলাদা করে মনস্তত্ত্ববিদ পাঠায়নি। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, তিতে রোস্তভ থেকে ফেরার সময় বিমানেই অনেকক্ষণ কথা বলেন নেইমারের সঙ্গে। বোঝানোর চেষ্টা করেন, পরের ম্যাচে কোস্টারিকাকে হারালেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এরপরেও যখন মন খারাপ করে নেইমার বসেছিলেন, তিতে
নাকি পরামর্শ দেন, “প্র্যাকটিসে যাওয়ার দরকার নেই। বরং হোটেলের জিমে কিছুটা সময় কাটাও। বন্ধু-আত্মীয়দের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটালেও মুড ফুরফুরে হবে।” সেইমতো সোমবার মার্সেলো-সহ অন্যান্য ফুটবলাররা যখন প্র্যাকটিসে নিজেদের বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন, নেইমার ব্যস্ত ছিলেন জিমে।
নেইমারের মডেল-কাম-অভিনেত্রী বান্ধবী ব্রুনা এই মুহূর্তে ব্রাজিলে শুটিংয়ে ব্যস্ত। তবে নেইমারের মা সোচিতেই রয়েছেন। মা’কে নাকি হোটেলে ডেকে পাঠিয়েছিলেন নেইমার। মা-ছেলেতে অনেকক্ষণ কথা হয়। তারপরেই দেখা যায় হোটেলের পার্লারে ঢুকছেন নেইমার। যখন বেরিয়ে আসেন কোথায় সেই নতুন হেয়ারস্টাইল? যা এবার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দেখে চমকে গিয়েছিলেন তাঁর ভক্তরা! এ তো সেই পুরনো হেয়ারস্টাইলের তারকা। জানা গেল, নেইমারের মা’র নাকি ছেলের নতুন হেয়ারস্টাইল পছন্দ হয়নি। তিনিই নাকি ছেলেকে বলেন, “ওরে তোর এই হেয়ারস্টাইলটা ভাল লাগছে না। তুই বাবা আবার তোর পুরনো হেয়ারস্টাইলে ফিরে যা।” তাতে নাকি বদলে যেতে পারে নেইমারের খারাপ সময়ও! কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেদিনই কয়েক ঘণ্টা পর একই জায়গায় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হল নেইমারকে। আর তাতেই ব্রাজিলের চিন্তা বাড়ল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.