আঠারো বছরের অভিযান। সেই পথ পরিক্রমায় গতানুগতিকতাকে হেলায় হারিয়েছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্মের হৃদয়পদ্মাসনে জায়গা করে নিয়েছেন অচিরেই। সেই পথ চলা এবার থামার ক্রান্তিলগ্নে। অবসর গ্রহে পা রাখতে চলেছেন সানিয়া মির্জা (Sania Mirza)। পিছন ফিরে কীভাবে দেখছেন তিনি নিজের সোনালি টেনিস কেরিয়ারকে। বোরিয়া মজুমদারের কাছে স্মৃতিচারণ টেনিস সুন্দরীর…
আর কোর্টে নামবেন না, এখনও মন থেকে আমরা ভাবতে পারছি না। কেন খেলা ছাড়ছেন? এই তো সেদিন গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনাল খেললেন। তাহলে গিভ আপ করছেন কেন ?
সানিয়া: আমাকে তো ভাল করেই চেনেন। মাথা উঁচু করে টেনিসকে বিদায় জানাতে চেয়েছিলাম। তাই মনে হল, এটাই অবসরের ঠিক সময়। জানি, এখনও আমার বড় ম্যাচ জেতার ক্ষমতা রয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করেই শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেলেছি। আসলে আমি ওই পর্যায়ে খেলতে পছন্দ করি। এখনও কেন খেলা ছাড়ছি না, এটা শোনার থেকে ‘কেন খেলা ছাড়লেন’ শোনা আমার কাছে অনেক বেশি তৃপ্তিদায়ক। বরাবর আমি কঠিন থেকে কঠিনতর চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেছি। তারজন্য পরিশ্রম, আত্মত্যাগ কম কিছু করতে হয়নি। সেই তাগিদটায় ঘাটতি আসুক চাইনি। তাই মনে হল, এটাই খেলা ছাড়ার আদর্শ সময়।
[আরও পড়ুন: পুরনো হোটেল ছেড়ে নতুন ঠিকানায় রোনাল্ডো, জানেন কত টাকার বিল মেটালেন?]
নিজের এই টেনিস অভিযানকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? ছয়টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম। ৪১টা টানা ডাবলস জয়। বিশ্ব রাঙ্কিংয়ে এক নম্বর। অসাধারণ, অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হবে। যেখান থেকে উঠে নিজেকে এই অবিশ্বাস্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন, স্পেশাল বলে মনে হয় নিশ্চয়ই?
সানিয়া: যদি কেউ আমার কাছে আসে, আর তাঁকে ৩০ বছর আগে আমাদের পরিবার যেমন ছিল সেই অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি, আমি নিশ্চিত, সে অবাক হয়ে যাবে। হ্যাঁ, অবশ্যই এই টেনিস যাত্রা আমার নিজের কাছে খুব স্পেশাল। ছয়টা গ্র্যান্ড স্ল্যামকে যদি ১২ করতে পারতাম, আরও ভাল লাগত। আসলে জেতার ইচ্ছের কোনও শেষ নেই। এটাই স্পোর্টসের মজা। টেনিস আমায় প্রতিনিয়ত শিখিয়েছে। পরিণত করেছে। অনেক প্রাপ্তি জড়িয়ে রয়েছে টেনিসের হাত ধরে। এই টেনিসের মাধ্যমে অনেককে অনুপ্রাণিত করতে পেরেছি, এটা ভেবেও ভাল লাগে। যে জায়গায় আজ আসতে পেরেছি, তার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান টেনিসেরই।
মা হওয়ার পর টেনিস কোর্টে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন। ২৬ কেজি ওজন কমাতে হয়েছে। নিজেকে আত্মনির্ভরতা ও দৃঢ়তার প্রতিমূর্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন। এই তাগিদটা কোথা থেকে পেলেন?
সানিয়া: আসলে ভিতরে ইচ্ছাশক্তি ছিল বলেই আমি পেরেছি। অন্য কোনও কারণ নয়। তবে মা হওয়ার পর কোর্টে ফেরাটা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল আমার কাছে। গোটা বিশ্বের কাছে বিশেষ করে মহিলাদের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছি, মা হওয়া মানেই নিজের কেরিয়ারের শেষ নয়। তা হতে পারে না। বরং এটা নতুন একটা যাত্রা। সন্তানকে সঙ্গে নিয়েও জীবনের সেই লড়াইগুলো জেতা যায়। সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছি। চেয়েছি, প্রতিটি মা যেন একটু উৎসাহ পাক। সেই প্রাপ্তিগুলো আমার আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়। এই কারণে টেনিসকে আঁকড়ে ধরে এতটা পথ চলা।
অনেক মুহূর্ত, অনেক সাফল্য, সেই সাফল্যের কোলাজ নিশ্চয় এখন চোখের সামনে ভাসছে। তারমধ্যে একটা বাছতে হলে কেনটা বাছবেন?
সানিয়া: খুব কঠিন কাজ। খুব কঠিন। তবে এই মুহূর্তে মনে ভাসছে ২০১৫-র উইম্বলডনের কথা। ওটা আমার কাছে একটু আলাদা, স্পেশাল। উইম্বলডন জেতা যেকোনও টেনিস তারকার কাছে ভীষণ দামী একটা মুহূর্ত। সেটাই সেবার করতে চেয়েছিলাম। প্রথমবার উইম্বলডন ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছিল। আর ভারতীয় টেনিসের জন্য সেটা ছিল মাইলস্টোন। ম্যাচটা এখনও আমার চোখের সামনে ভাসে। এক সেটে পিছিয়ে ছিলাম। পরের সেট টাইব্রেকে জিতে সমতা ফিরিয়ে ছিলাম আমরা। তৃতীয় সেটে আবার পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে আমরা কামব্যাক করি। ২-৫ থেকে ৫-৫ করা, সহজ ছিল ন। অসম্ভব সম্ভব হয়েছিল, কারণ নার্ভটা আমরা ধরে রেখেছিলাম। কারণ হল ছেড়ে দেওয়ার মানুষ কখনও ছিলাম না। আজও নই।
[আরও পড়ুন: দিল্লি টেস্ট চলাকালীন কথা কাটাকাটিতে জড়ালেন মার্ক ওয়া-কার্তিক, কিন্তু কেন?]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.