রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: শচীন-পুত্রের ছোটবেলার কোচ তিনি। অথচ ছাত্রের অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় টিমে ডাক পাওয়ার কথা জানতেনই না গুরু সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়!
আগামী জুলাই-আগস্টে শ্রীলঙ্কায় দু’টো চার দিনের ম্যাচে নির্বাচিত হয়েছেন বাঁ হাতি পেসার অর্জুন। যিনি কোচবিহার ট্রফিতে পাঁচ ম্যাচে ১৮ উইকেট পেয়েছেন। যার মধ্যে একটা পাঁচ উইকেটও ছিল। “দেখুন, বোলার হিসেবে অর্জুন কেমন সেটা নিয়ে কখনওই কোনও সন্দেহ আমার ছিল না। আমি ঠিকই জানতাম, একদিন না একদিন ও ডাক পাবে। কিন্তু মজার হল, যেদিন পেল সেদিন আমি জানতেই পারলাম না! আসলে গতকাল রাতেই অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছি আমি। মোবাইল খুলে দেখলাম, শুভেচ্ছাবার্তায় ভরে গিয়েছে।” শুক্রবার দুপুরে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে ফোনে বলছিলেন প্রাক্তন বাংলা তথা জাতীয় দলের পেসার সুব্রত। সঙ্গে যোগ করলেন, “ছোট থেকে ওর মধ্যে দু’টো জিনিস দেখেছি। এক, শেখার ইচ্ছেটা মারাত্মক। অসম্ভব পরিশ্রম করতে পারে। কোচ মাঠে আসার আগেই ওয়ার্ম আপ করে-টরে অর্জুন রেডি হয়ে থাকত। যাতে কোচ চলে এলে সময়টা পুরো কাজে লাগানো যায়। আর দুই, একদম শুরু থেকে প্রচণ্ড জোরে বল করতে চাইত। বলের পেস যাতে ভাল থাকে, সেদিকে নজর দিত। আজ ও এতদিনের পরিশ্রমের মর্যাদা পেয়েছে। ইন্ডিয়া আন্ডার নাইন্টিনে চান্স পেয়েছে। কিন্তু এটা একদিনে হয়নি। প্রচুর সাধনা করেছে অর্জুন।”
আর সুব্রতর গুরুকুলে অর্জুনের প্রথম দিনটা? সেটা আজ মনে পড়ছে না?
“হুম। মনে আছে পুরো,” আবার ছাত্র নিয়ে বলতে শুরু করেন ১৯৯২ বিশ্বকাপে ভারতীয় স্কোয়াডে থাকা সুব্রত। “শচীন নিয়ে এসেছিল। বলল, এটা আমার ছেলে। তোমার হাতে দিলাম, তুমি এবার তৈরি করে দাও,” বলে ফের জুড়ে দিলেন, “দেখুন কোচ হিসেবে আমরা আর কতটুকু কী করতে পারি? বড়জোর দেখিয়ে দিতে পারি। ফাইন টিউনিং করিয়ে দিতে পারি। কিন্তু ক্রিকেটারকে করতে হয় মাঠে। অর্জুনকেও তাই করতে হয়েছে। ওর অ্যাকশন একটু-আধটু ঠিক করে দিয়েছিলাম। আর দেখেছিলাম, বলের গতিটা যাতে ভাল থাকে। পরে একবার ওয়াসিম আক্রমও অর্জুনকে দেখিয়ে দিয়েছিল, কীভাবে কী করতে হবে। কিন্তু আজ ও যে জায়গায় পৌঁছেছে, তার পুরো কৃতিত্ব অর্জুনেরই। আমার নয়।”
পাশাপাশি অর্জুনের ক্রিকেট-গুরু মনে করিয়ে দেন, ছাত্রের মধ্যে কোনওদিনই ‘আমি শচীনের ছেলে’ মার্কা ব্যাপারস্যাপার দেখেননি। “আসলে অর্জুনের বড় হওয়াটাই অন্যরকম। পারিবারিক মূল্যবোধটাই অন্যরকম। খুব ছোটবেলাতেই শচীন ওকে বলে দিয়েছিল, আমি চাই তোমাকে লোকে চিনুক তোমার নিজের পরিচয়ে। আমার পরিচয়ে নয়। ও যে তারকা পুত্র, সেটা কোনওদিন অর্জুনকে দেখে মনে হয়নি। চুপচাপ থাকে। সেলফি তোলা বা স্টার ইমেজ নিয়ে ঘোরা, এসব ওর মধ্যে একদম নেই,” বলতে থাকেন সুব্রত। সঙ্গে যোগ করেন, “গতকালও তো। অর্জুনের চান্স পাওয়ার খবর শুনে শচীনকে লন্ডনে ফোন করেছিলাম। শুনে শচীন বলল, এত হইহই কোরো না। অর্জুন ছাড়াও কিন্তু আরও ষোলোটা ছেলে ইন্ডিয়া আন্ডার নাইন্টিনে চান্স পেয়েছে। ভেবে দেখুন একবার।”
প্রথমে শচীন রমেশ তেণ্ডুলকর নামের এক জীবন্ত কিংবদন্তিকে চোখের সামনে দেখে ক্রিকেট সাধনা চালানো। এবার রাহুল দ্রাবিড়ের ক্রিকেট-সংসার। আসল যুদ্ধ তো তাহলে এ বার থেকে শুরু? শুনে সুব্রত বললেন, “রাহুল কিন্তু এই প্রথম ওকে দেখবে এমন নয়। আইপিএলে এর মধ্যে কোনও একটা টিমের কোচ ছিল রাহুল। সেখানেই নেটে অর্জুনকে বল করতে দেখে মারাত্মক ইম্প্রেসড হয়েছিল। আমাকে এসে বলেওছিল, এ তো দারুণ বল করে। আমি সেদিন বেশি কিছু বলিনি। এবার রাহুল আরও ভাল বুঝতে পারবে।” সুব্রতর সর্বশেষ সংযোজন, “দেখুন, ভবিষ্যতে অর্জুন পারবে কি পারবে না, কত বড় ক্রিকেটার হবে, সে সব কথায় যাচ্ছি না। ছাত্র হিসেবে ওকে আমি একটাই কথা বলতে চাইব। এখন যে পরিশ্রমটা করছে, সেটাই করে যাক। এটুকু বলতে পারি, ঠিকঠাক প্রস্তুতিটা নিচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ওকে খেলতে হবে। কিন্তু গতকালই পুণেতে একটা ম্যাচে ও চার উইকেট নিয়েছে। চুয়াল্লিশ ডিগ্রি গরমে খেলে। ছাত্রের চান্স পাওয়ার কথা পরে জানতে পারি। কিন্তু কোচ হিসেবে সব রিপোর্ট কিন্তু আমার নেওয়া শেষ!”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.