ইংল্যান্ড– ০ স্কটল্যান্ড-০
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইংল্যান্ড (England) ও স্কটল্যান্ডের (Scotland) মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বহু পুরনো। ১৮৭২ সালে ফুটবল মাঠে প্রথম বার দেখা হয়েছিল দু’দেশের। সেই ম্যাচের ফলাফল হয়েছিল গোলশূন্য। তার পরেও সবুজ ঘাসের গালচেতে বহুবার দেখা হয়েছে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের। কখনও ইংল্যান্ড জিতেছে আবার কখনও শেষ হাসি তোলা ছিল স্কটল্যান্ডের জন্য। দুই দেশের মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে ইংল্যান্ডই।
সেই কারণেই এবারের ইউরোয় সাক্ষাতের আগে বিশেষজ্ঞরা এগিয়ে রেখেছিলেন হ্যারি কেন-ফিল ফোডেনদেরই। ইংল্যান্ডের দিকে ঝুঁকে থাকার আরও একটা কারণ অবশ্য রয়েছে। ইউরো-বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ড নিয়মিত অংশগ্রহণকারী। সেখানে স্কটল্যান্ড শেষবার বিশ্বকাপ খেলেছে ১৯৯৮ সালে। তার পরে দু’দশকের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও ইউরো বা বিশ্বকাপের দরজা খুলতে পারেনি স্কটল্যান্ড। প্রায় দু’যুগ পরে ইউরোর মূলপর্বে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই হার মানে স্কটল্যান্ড। তাতেও না দমে ওয়েম্বলির ৯০ মিনিটের মহারণে ইংল্যান্ডকে আটকে দিল স্কটিশরা। খেলার শেষে ফুটবলবিশেষজ্ঞদের নখ-দাঁতে ক্ষতবিক্ষত সাউথগেটের ছেলেরা। কেউ বললেন, মাঝমাঠের লড়াইয়ে ইংল্যান্ডকে টেক্কা দিয়ে গেল স্কটল্যান্ড। আবার কেউ বলছেন, ইংরেজ ফুটবলাররা প্যারালাল আর ব্যাক পাসই করে গেল বেশিরভাগ সময়। বলের নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয়ে ফরোয়ার্ড পাস দেখা গেল কম। ফরোয়ার্ড পাস কম হলে বিপক্ষের গোলের দরজা খুলবেই বা কীভাবে!
গোলের সুযোগ যে একেবারেই তৈরি করতে পারেনি ইংল্যান্ড তা নয়। জন স্টোনসের বিষাক্ত হেড স্কটল্যান্ডের পোস্ট কাঁপিয়ে ফিরে আসে। এটাই গোল করার সেরা সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। গোলের জন্য ইংল্যান্ড তাকিয়েছিল অধিনায়ক হ্যারি কেনের দিকে। গতবারের বিশ্বকাপের ‘সোনার বুট’জয়ী তারকা প্রথমার্ধে মাত্র ১০ বার বল টাচ করেন। অথচ এই হ্যারি কেনই বল গড়ানোর আগে একপ্রকার হুমকি দিয়ে স্কটল্যান্ডকে শুনিয়ে রেখেছিলেন, রাশিয়া বিশ্বকাপের থেকেও তিনি আরও পরিণত। চূড়ান্ত ব্যর্থ হ্যারি কেনকে ৭৫ মিনিটে তুলে নিতে বাধ্য হন সাউথগেট। তার পরেও ইংরেজদের আক্রমণে কামড় ছিল না।
২৫ বছর পরে ইউরোর মঞ্চে (Euro Cup 2021) ফের সাক্ষাৎ দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের। ম্যাচের পারদ চড়তে শুরু করে দিয়েছিল অনেক আগে থেকেই। স্কটল্যান্ড সমর্থকরা ভিড় জমান লন্ডনে। ৩ হাজার স্কটিশ সমর্থক ওয়েম্বলির গ্যালারিতে গান গেয়ে, উৎসাহ দিয়ে ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করেন। সংখ্যায় বেশি ইংলিশ ভক্তরাও কম যাননি। খেলা ঘিরে আবেগের স্রোত বইলেও গোলের দেখা মিলল না। ৯০ মিনিটে না ইংল্যান্ড পারল গোল করতে, না স্কটল্যান্ড বল জড়াতে পারল ইংল্যান্ডের জালে। দু’দেশের ১১৫ তম ম্যাচ ঢলে পড়ল ড্রয়ের কোলে। প্রথম পয়েন্ট পেল স্কটল্যান্ড। ম্যাচ ড্র হওয়ায় গ্রুপ ডি-তে সাউথগেটের ছেলেদের সংগ্রহে ৪ পয়েন্ট। ১৯৯৬ সালের ইউরোয় ইংল্যান্ডের সদস্য ছিলেন বর্তমান ম্যানেজার সাউথগেট। ২৫ বছর আগের সেই ম্যাচে ইংল্যান্ড ২-০ গোলে হারিয়েছিল স্কটল্যান্ডকে। সেদিন সাউথগেট জিতেছিলেন। এদিন কোচ হিসেবে জিততে পারলেন না।
ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ডের এবারের লড়াইয়ের আগে থেকেই ফুটবলপ্রেমীদের মনে উঁকি দিচ্ছিল ২৫ বছরের আগের সেই ম্যাচ। কলকাতায় অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে যাওয়া ফিল ফোডেন চুল ডাই করে এবারের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। তাঁর সঙ্গে তুলনায় চলে আসছিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ফুটবলার পল গাসকোয়েন। ১৯৯৬ সালে গাসকোয়েন গোল করেছিলেন স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তাঁর চুলের রংও ছিল অবিকল ফোডেনের মতোই। এদিনের ম্যাচেও সবাই তাকিয়েছিলেন সাদা চুলের ফোডেনের পায়ের দিকে। কিন্তু দিনান্তে দেখা গেল না ফোডেন-ম্যাজিক। খেলার শেষে হ্যারি কেনকে বলতে শোনা গেল, “এটা আমাদের সেরা পারফরম্যান্স ছিল না। কিন্তু আরও এক পয়েন্ট পেয়ে পরের পর্বে পৌঁছনোর দিকে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম। আর এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।”
ইংল্যান্ডের মধ্যে জেতার খিদেও দেখা যায়নি। স্কটল্যান্ড কিন্তু মরিয়া লড়াই করে। প্রতিটি বলের জন্য নিজেদের জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিলেন অ্যাডামস-রবার্টসনরা। ম্যাচ ড্র হলেও এই ফলাফলকে অনেকেই মনে করছেন স্কটল্যান্ডেরই জিত। বীরের সম্মান পাচ্ছেন স্কটিশ ফুটবলাররা। দু’ যুগ পরে ইউরোর মঞ্চে এসে ইংল্যান্ডকে থামিয়ে দেওয়া তো জেতারই সমতুল্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.