ফ্রান্স-০ সুইজারল্যান্ড-০
প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়: কুড়ি হাজার মাইল দূরে রবিবার গভীর রাতে ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড ম্যাচটা দেখতে বসার আগে মনটা একটু হতাশই ছিল৷ আগের রাতেই রোনাল্ডোর হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখেছি৷ আগের ম্যাচগুলিতেও যে প্রত্যাশা নিয়ে টিভির সামনে বসেছিলাম, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি৷ ভাবছিলাম, আবার একটা একপেশে ম্যাচ দেখব৷
ম্যাচ শুরু হতেই যাবতীয় ভাবনাচিন্তা এক ফুঁয়ে যেন উড়ে গেল৷ চোখের সামনে ১৮ বছর আগের ছবিগুলি যেন বারবার ফিরে আসছিল৷ ১৯৯৮ বিশ্বকাপ দেখতে গিয়েছিলাম প্যারিসে৷ চোখের সামনে দেখেছিলাম তাঁর খেলা৷ আমার মন ভরিয়ে দিয়েছিলেন৷ তিনি জিনেদিন জিদান৷ তাঁরই ছায়া এদিন দেখলাম পোগবার মধ্যে৷ সেই ঠান্ডা মাথা৷ অসম্ভব পরিশ্রমী৷ দুর্দান্ত স্কিল৷ সঙ্গে প্রচণ্ড আগ্রাসী৷ মন ভরিয়ে দিল ফ্রান্সের এই মিডফিল্ডার৷ কেন যে দিদিয়ের দেশঁ আগের ম্যাচে ওকে খেলালেন না আমি অন্তত বুঝতে পারছি না৷ ডিফেন্স থেকে অফেন্স, কী অসম্ভব পরিশ্রমই না করল পোগবা৷ প্রথম দুটি শটের কথা ধরছি না৷ কিন্তু ৬০ মিটার দূর থেকে গোলার মতো ওর বাঁ-পায়ের শটটা যখন ক্রসবারে আছড়ে পড়ল, চমকে উঠেছিলাম৷ পায়ের কী অবিশ্বাস্য জোর! বারটাই কাঁপিয়ে দিল! ঠিক যেন জিদান৷ তিনি তো এরকমই শট মারতেন! শুধু তাই নয়, শুরুতেই সুইজারল্যান্ড ম্যাচের প্রথম আক্রমণ থেকে প্রায় গোল করে বসেছিল৷ কিন্তু সেই পোগবা পরিত্রাতা হয়ে দাঁড়ায়৷
এবারের ইউরো কাপে দেখেছি একপেশে ফুটবল৷ না হলে সাদামাটা৷ এদিন কিন্তু দেখলাম দুই কোচের ট্যাকটিক্সের অসামান্য লড়াই৷ দেশঁ এবং পেটকোভিচ কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি না ছাড়ার যেন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন৷ ফুটবলে ভারসাম্য বলে একটা কথা আছে৷ অর্থাৎ, ডিফেন্স-মিডফিল্ড-অফেন্স, এই তিনটি বিভাগের মধ্যে সমন্বয়টা ভীষণ জরুরি৷ অন্তত ভাল ফুটবল খেলার জন্য৷ এদিন কিন্তু দু’দলের খেলাতেই সেই সমন্বয়টা দেখতে পেলাম৷ অসাধারণ প্রেসিং ফুটবল৷ কেউ কাউকে আধ ইঞ্চি জমিও ছাড়েনি৷ কেউ বল ধরলেই অন্তত দু’জন প্রতিপক্ষের ফুটবলার কাছে চলে আসছিল৷ সঙ্গে কড়া ট্যাকল৷
তারই মধ্যে পোগবার মতো ফুটবলাররা ঝলসে ওঠে৷ সেটাই হয়েছে৷ ক্রসবারে বল না লাগলে তখনই গোল হজম করে সুইসরা৷ কিন্তু তা ছাড়াও পোগবারই একটা শট অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেয় সুইস গোলরক্ষক সোমের৷ সুইজারল্যান্ড গোলের সুযোগ সেভাবে না পেলেও ওরা কিন্তু দুর্দান্ত লড়াই করেছে৷ সত্যি কথা বলতে কী, আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে ম্যাচটা জমে উঠেছিল প্রতিটি মুহূর্তে৷
দ্বিতীয়ার্ধে গ্রিজম্যানের শটটাও দক্ষতার শীর্ষে উঠে বাঁচায় সোমের৷ এবারের ইউরোতে তারকার তকমা পাওয়া পায়েট দ্বিতীয়ার্ধে নামে৷ তারও শট ক্রসবারে লেগে বেরিয়ে যায়৷ এটাও কিন্তু গোল হতে পারত৷ তবে দু’দলের গোলরক্ষকই এদিন ভাল খেলেছে৷ আর ডিফেন্স তো অনবদ্য৷ খুব একটা ভুল করেনি৷ সবথেকে বড় কথা, ডিফেন্ডাররা প্যারালাল হয়নি একবারও৷ এই ধরনের খেলাই তো আমরা দেখতে চাই৷ তবে একটা কথা বলছি, ফ্রান্স কিন্তু বিশ্বফুটবলে আবার ফিরে আসছে৷ মাঝে কয়েক বছর কিছুটা সমস্যায় ছিল৷ এবারের ইউরোতে দেখছি, ওরা নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে৷ সুইজারল্যান্ডও ভাল খেলেছে৷ এমনিতে ওরা বরাবরই লড়াই করে৷ এবারও করছে৷ এবার তো ওরা প্রথমবার নক আউট পর্যায়ে গেল৷ ফ্রান্স তো নক আউটে যাওয়া আগেই নিশ্চিত করেছিল৷ ঘরের মাঠে খেলা হওয়ায় ওরা কিন্তু ফাইনালে যেতেই পারে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.