ইংল্যান্ড: ৩৩২ ও ১১৪/২
ভারত: ২৯২
তৃতীয় দিনের খেলা শেষ
দীপ দাশগুপ্ত: ভারত ভাল জায়গায় নেই। ইংল্যান্ড সিরিজে একই কথা লিখতে লিখতে আর ভাল লাগছে না। সকালে খেলা শুরুর আগে মুম্বইয়ের স্টুডিওয় বসে আশিস নেহরাকে বলছিলাম, ভারত যদি ৮০ রানের লিডও ইংল্যান্ডকে দেয়, তাহলেও এই টেস্টটা মনে হয় আমাদের গেল। তার মানে তখন দাঁড়াবে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০-১ আসলে ১২০-১। ৮০-২ আসলে ১৬০-২। রবিবারের খেলার শেষে ঠিক সেটাই দাঁড়িয়েছে।
অথচ ভারত ৮০-র অর্ধেক ৪০ রানে প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে শেষ করেছে। লড়াকু ২৯২ তুলে। তারপরেও কুক-রুট পার্টনারশিপের দাপটে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৪/২ তুলে এখনই মোট ১৫৪ রানে এগিয়ে। হাতে আট উইকেট। অ্যালিস্টার কুককে বিদায়ী টেস্টে যেন বাড়তি মোটিভেটেড দেখাচ্ছে। প্রথম ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করার পর আরও একটা হাফসেঞ্চুরি থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র চার রান দূরে। সবচেয়ে বড় কথা, ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের হাতে আর রিভিউ পড়ে নেই। সাত তাড়াতাড়ি বিরাট কোহলি যে কেন দুটো রিভিউই নিয়ে ফেলল ঠিক বুঝলাম না। বোলারদের পারফরম্যান্সের হতাশায় ক্যাপ্টেনের মধ্যে মরিয়া ভাবের বহিঃপ্রকাশ কি? কিন্তু তাতে দাঁড়াল কী, বাকি উইকেটগুলোর জন্য এখন ভারতকে ফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করে থাকতে হবে।
এসবের মধ্যে মন্দের ভাল একটাই। দ্বিতীয় দিনে যেখানে জাদেজারা শেষ চারটে উইকেট হাতে নিয়ে প্রথম ইনিংসে দেড়শোরও বেশি রানে পিছিয়ে ছিল, সেখানে রবিবার ইংল্যান্ডের লিডটা ৪০-এ নামিয়ে আনতে পেরেছে ভারতীয় ব্যাটিং। যার কৃতিত্ব স্কোর বোর্ডে রবীন্দ্র জাদেজা দেখালেও আমি আসল কৃতিত্বটা দেব হনুমা বিহারিকে। জাদেজা এই টেস্টে অবশ্যই ফ্যান্টাস্টিক। এখনও পর্যন্ত ভারতের হায়েস্ট স্কোরার (৮৬*) ছাড়াও বোলিংয়ে পাঁচ উইকেট। কিন্তু এদিন ওর ব্যাটিং পারফরম্যান্সটা হত না সকালে বিহারি কেরিয়ারের প্রথম টেস্ট ইনিংসে তাড়াতাড়ি আউট হয়ে গেলে। তখন টেলএন্ডারদের নিয়ে কতটা কী করার সুযোগ পেত জাদেজা কে জানে? ওভাল স্কোরবোর্ড কিন্তু বলছে সেভেনথ্ উইকেটে ৭৭ রানের পার্টনারশিপ খেলে বিহারি আউট হওয়ার পর ইশান্ত-শামি-বুমরা মিলে খেলেছে ৪৪ ডেলিভারি। তিনজনের মোট রান ৫। বিহারি সেখানে ডেবিউতেই ১২৪ বলের হাফসেঞ্চুরি (৫৬) না করলে জাদেজা দলকে ২৯২ রানে পৌঁছে দিয়ে ড্রেসিংরুমে অপরাজিত ফিরতে পারত কি না আমি ঠিক সিওর নই।
বিহারির ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় প্লাস যেটা চোখে পড়ল ইংলিশ কন্ডিশনে, নিজের কাজের ‘ক্ল্যারেটি’। যে বলটা ফ্রন্টফুটে খেলার ফ্রন্টফুট খেলেছে। যেটা ব্যাকফুটে খেলার বল ব্যাকফুটে খেলেছে। কেএল রাহুল বা অজিঙ্ক রাহানে যেটা করতে পারেনি। বিহারির সাফল্যের এক নম্বর কারণ যদি হয় ওর জমাট টেকনিক, তাহলে দ্বিতীয় কারণ, কে এল-অজিঙ্কের মতো ওর উপর কোনও পুরনো ব্যর্থতার ব্যাগেজ নেই। যেমন জীবনের শেষ টেস্টে কুক চাপহীন ব্যাট করে চলেছে। ওর আবার ভবিষ্যৎ ব্যর্থতার আশঙ্কা নেই। এ জন্যই বলে সর্বোচ্চ লেভেলের ক্রিকেটে স্কিলের সমানই দরকার মগজের। প্লেয়ারের স্কিলকে পরিচালনা করে মাথা। সেটা কোনও প্লেয়ারের ডেবিউ ম্যাচে যেমন খোলামেলা থাকে। তেমনই মুক্ত থাকে বিদায়ী ম্যাচে। এই জায়গায় ওভালের হনুমা বিহারি আর অ্যালিস্টার কুক একবিন্দুতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ভিডিও সৌজন্যে: দেবাশিস সেন
এবার যে প্রশ্নটা ওঠা স্বাভাবিক, বিহারি-জাদেজাকে কি তবে এই সিরিজে আগে খেলানো উচিত ছিল ভারতের? বিহারির ব্যাপারে বলব, না। কারণ হার্দিক পাণ্ডিয়ার ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্স দিয়েছিল। রবিচন্দ্রন অশ্বিন সম্পর্কেও অনেকটা একই কথা খাটে। কিন্তু আমার মতে আসল প্রশ্নটা হওয়া উচিত, লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টে ভারত যখন ডাবল স্পিনার নিয়ে নামে, তখন কেন জাদেজাকে ছাপিয়ে কুলদীপ যাদবের নাম ভাবা হয়েছিল? অশ্বিনের সঙ্গে লর্ডসে অলরাউন্ডার জাদেজা দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে সু়যোগ পেলে এখন মনে হচ্ছে হয়তো অনেক ভাল হতো।
যাক গে। এখন কী হবে সেটাই আসল। সোমবার তাড়াতাড়ি কুক-রুট পার্টনারশিপ না ভাঙতে পারলে ভারতের এই টেস্ট বাঁচানোও খুব কঠিন। শুধু একটা উইকেটেই চলবে না। পাশাপাশি লাঞ্চের আগে আরও দুটো দরকার। ২৮০ তাড়া করতে হলেও ফিফথ ডে-র উইকেটে মইন আলি কাঁদিয়ে ছাড়তে পারে ভারতীয় ব্যাটিংকে। একা কোহলি তো গোটা সিরিজটা টানল! আর কত দিন?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.