ইংল্যান্ড: ২২৮/৭ (টেলর-৪৫, সিভর-৫১)
ভারত: ২১৯ (পুনম-৮৬ হরমনপ্রীত-৫১)
৯ রানে জয়ী ইংল্যান্ড
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এটাই হয়তো তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। আর এই মঞ্চে নামা হবে না। দলকে আগেও একবার ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্যাঙারুদের দাপটে সেবার আর ট্রফি জেতা হয়নি। তাই এবারই ছিল শেষ সুযোগ। লর্ডসে ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়েছিল ভারতীয় মহিলা দল। ১৯৮৩ নাকি ২০০৩? কোন বিশ্বকাপের স্মৃতি ফিরবে লর্ডসে? ফাইনাল শুরুর আগে থেকে এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছিল। কিন্তু তীরে এসে তরী ডুবেই গেল। বিশ্বকাপের মঞ্চে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ট্র্যাজিক হিরো হয়েই থেকে যেতে হল মিতালিকে। ট্রফি জয়ের সাধপূরণ আর হল না। ভারতের কাছে গ্রুপ পর্যায়ে হারের বদলা চতুর্থবার বিশ্বকাপ ঘরে তুলল ইংল্যান্ড।
১৯৮৩ সালের ২৫ জুনের কপিল দেবের ফাইনালের মতোই এদিন টসে জিততে পারেননি মিতালি। চ্যাম্পিয়নদের মতোই শুরু করার চেষ্টা করেছিলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার। কিন্তু যে দলে ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেট প্রাপক ঝুলন গোস্বামী আছেন, সেই দল কি আর এত সহজে হার মানে? ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করে ১০ ওভারে ২৩ রান দিয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিলেন তিনি। সারা টেলর (৪৫) ও সিভরের (৫১) ৮৩ রানের পার্টনারশিপ ভেঙে দিয়েই বাজিমাত করলেন বাংলার পেসার। তার আগে দুই ওপেনার উইনফিল্ড ও বিউমোন্টের উইকেট তুলে কাজ এগিয়ে রেখেছিলেন রাজেশ্বরী গায়কোয়াড় এবং পুনম যাদব। বল হাতে অভিজ্ঞ ঝুলন কামাল করলে রান তাড়া করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ওপেনার রাউত। ৮৬ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলে ফেরেন তিনি। ব্যাট হাতে ফের জ্বলে উঠেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইতিহাস গড়া হরমনপ্রীত কৌর। ওপেনার পুনম রাওয়াতের সঙ্গে জুটি বেঁধে অর্ধ-শতরান করেন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেও শ্রাবসোলের বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে তছনছ হয়ে গেল ভারতের ট্রফি জয়ের স্বপ্ন। একাই হাফ-ডজন উইকেট তুলে নিলেন তিনি।
ENGLAND WIN #WWC17! pic.twitter.com/O5Lje0mG5h
— Cricket World Cup (@cricketworldcup) July 23, 2017
টু্র্নামেন্টের শুরুতে মিতালির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, টিম ইন্ডিয়ায় তাঁর ফেভরিট কে? ভারতীয় দলকে জয়ের অভিনন্দন জানাতে গিয়ে ভুল করে বসেছিলেন বিরাট কোহলি, রাজীব শুক্লারা। আর এতেই বারবার ফুটে উঠেছিল অবহেলিত মহিলা ক্রিকেটের ছবিটা। যে দেশে বিশ্বের ধনীতম ক্রিকেট বোর্ড রয়েছে, সেখানে এমন অবজ্ঞা কি সত্যিই প্রাপ্য ছিল ঝুলন-পুনমদের? আজ হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর দিতেও লজ্জা পাবেন ক্রিকেটের কর্মকর্তারা। কিন্তু এসব অবজ্ঞা গায়ে মাখেননি মিতালিরা। ড্রেসিং রুমে বসে ভাবেননি, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভারত-পাক লড়াইয়ের মতো কেন তাঁদের একই লড়াই নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়ে না! কেন লর্ডসের ফাইনালের খবর রাখেন না অনেকে? কেন একই পরিশ্রম করে, একই দায়িত্ব পালন করে আজও বিরাট কোহলিদের থেকে কম বেতন দেওয়া হয় তাঁদের? এসব প্রশ্ন থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে পেরেছেন বলেই হয়তো মাঠে সবটুকু ঢেলে দিতে পেরেছেন। না পাওয়ার কষ্টগুলোই, চোয়াল চাপা জেদে পরিণত হয়ে ব্যাটে-বলে বেরিয়ে এসেছে বাইশ
গজে। শেষরক্ষা না হলেও ফাইনালে পৌঁছেই যেন অনেকখানি সম্মান কুড়িয়ে নিলেন। হারানো মর্যাদা মহিলাদের ফিরিয়ে দিলেন মিতালি। ট্রফি না এলেও উপেক্ষিত, অবহেলিত মহিলা ক্রিকেটকে তার যথাযোগ্য সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার অধিয়ানিকা হয়ে উঠলেন যোধপুরের মেয়েটি। যে রাজ্য কন্যা ভ্রুণহত্যায় বাকিদের হার মানায়, সেই রাজস্থানের কন্যেই এখন রাজ দেশবাসীর মনে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.