দুলাল দে: দীর্ঘ আট বছরের সম্পর্ক শেষ। আইএসএল থেকে সরে দাঁড়াল ‘আইএমজি’। স্টার-কে সঙ্গী করে এখন থেকে একাই আইএসএল চালাবে রিলায়েন্স। কিন্তু দীর্ঘ আট বছর একসঙ্গে চলার পর আইএসএল থেকে কেন মোহভঙ্গ হল আমেরিকান কোম্পানি আইএমজি-র?
মার্কিন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি যে ভারতীয় খেলাধুলো থেকেই নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে এরকম তো নয়। কেননা, ক্রিকেটে আইপিএল পরিচালনার দায়িত্বে আইএমজি। তবে এই মরশুমে কী হবে নিশ্চিত নয়। এমনকী রিলায়েন্সের সঙ্গে মিলিতভাবে এখনও টেনিসে চেন্নাই ওপেন করছে আইএমজি। ভারতীয় সার্কিটে শুধু খেলাধুলাই নয়, রিলায়েন্সকে সঙ্গী করে বিভিন্ন ফ্যাশন শোয়েরও আয়োজন করছে আইএমজি। তাহলে কী এমন ঘটল, যে ফুটবলে রিলায়েন্সের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল এই মার্কিন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার? কেননা, স্পোর্টস ইভেন্ট ম্যানেজ করার ক্ষেত্রে আইএমজি-র নাম বিশ্বজোড়া। এমনকী আইএসএল শুরুর চার বছর আগের থেকে ভারতীয় ফুটবলের মঞ্চে রিলায়েন্সের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক। তাহলে পঞ্চম আইএসএলের মুখে এসে কেন সম্পর্ক ছিন্ন করল তারা? সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে রিলায়েন্স হয়তো সরকারিভাবে ঘোষণাও করে দেবে আইএসএলে তাদের একলা চলার কথা। আর রিলায়েন্সের হাতে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের পুরো দায়িত্ব চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে আইএসএলের জন্য ব্যারেটোকে প্রচারের মুখ করতে চলেছে রিলায়েন্স। বাঙালি ড্রেসে শুটিং করতে রবিবার কলকাতায় আসছেন ব্যারেটো।
[জাতীয় দলে কেন নেই মেসি? সভাপতির কথায় আরও উসকে গেল জল্পনা]
ভারতীয় ফুটবলের যাবতীয় স্বত্ব অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন কাছ থেকে কিনে নেয় আইএমজি রিলায়েন্স। যদিও তার আগের থেকেই রিলায়েন্সের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা হয়ে যায় আইএমজি-র। ২০১০-এ আইএমজি-রিলায়েন্স ভারতীয় ফুটবলের দায়িত্ব নিলে কী হবে! ভারতীয় ফুটবলের মানচিত্রে আইএসএল শুরু করতে আইএমজি-রিলায়েন্স সময় নেয় আরও চার বছর। কিন্তু পরবর্তী চার বছর গড়াতে না গড়াতেই স্বপ্নভঙ্গ। চুক্তি ভেঙে সরে দাঁড়াল আইএমজি। এবার স্টারকে সঙ্গী করে একাই পথ চলবে রিলায়েন্স। এদিকে ফেডারেশন কর্তারাও এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। পাশ কাটিয়ে বলছেন, “রিলায়েন্সের সঙ্গে আইএমজির ব্যবসায়িক সম্পর্ক। ওদের কেন বিচ্ছেদ হল আমরা জানি না। শুধু কিছুদিন ধরে দেখছি, আইএসএল প্রস্তুতিতে রিলায়েন্স আইএমজি-র লোগো ব্যবহার করছে না।” ফেডারেশন কর্তারা মুখে কিছু না বললেও, সবাই জানেন, মার্কিন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিটি আইএসএলে খুব একটা আগ্রহের কিছু পাচ্ছে না। তাই ৮ বছরের সম্পর্ক ভাঙা।
আইএমজির অনুপস্থিতিতে আইএসএলের প্রস্তুতি একাই শুরু করে দিয়েছে রিলায়েন্স। আর এক্ষেত্রে বাংলার ফুটবল জনতাকে ধরতে ব্যবহার করা হচ্ছে জোস ব্যারোটোকে। যিনি এই মুহূর্তে রিলায়েন্স স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের যে অ্যাকাডেমি রয়েছে, তার কোচিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তাছাড়া বাংলায় এখনও ব্যারেটোর যে মারাত্মক পর্যায়ের জনপ্রিয়তা রয়েছে, তা ভালমতো জানেন রিলায়েন্স কর্তারা। যে কারণে, পঞ্চম আইএসএলে ব্যারেটোর ‘মুখ’-কে ব্যবহার করতে চাইছেন মুকেশ আম্বানির সংস্থা। এটিকে এক সময় ব্যারেটোকে কোনও ভাবেই ব্যবহার না করে ছেড়ে দিলে কী হবে, আইএসএলের প্রচারে সবুজ তোতাকে ব্যবহার করতে চাইছেন খোদ রিলায়েন্স কর্তারা। যার শুটিং রবিবার কলকাতায়। মুম্বই থেকে ব্যারেটো বললেন, “আমাকে ঠিক কীভাবে ব্যবহার করা হবে জানি না। শুধু রিলায়েন্স থেকে বলা হয়েছে রবিবার কলকাতায় পৌঁছে যেতে। শুটিং রয়েছে।”
[ জল্পনার অবসান, নতুন বিনিয়োগকারীর নাম ঘোষণা করল মোহনবাগান]
আইএমজি সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও এফএসডিএলে এখনও পার্টনার হিসেবে রয়েছে স্টার। একটা সময় কথা উঠেছিল, স্টার নিজেরাই এফএসডিএলের অংশীদার হওয়ায় ম্যাচ সম্প্রচার স্বত্ব বাবদ কোনও টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ফুটবলের জন্য কোনও টিভি কোম্পানিই বিশাল কিছু অর্থ বিনিয়োগ করতে রাজি নয়। স্টারের আগে টিভি চ্যানেলের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ টেন স্পোর্টসের। ভারতীয় ফুটবলকে ৩ কোটি টাকা দিয়েছিল তারা। যা আইএসএলের জন্য কিছুই নয়। কিন্তু স্টার থাকায় অন্তত প্রোডাকশন খরচটা দিতে হচ্ছে না। উল্টে বিজ্ঞাপনের টাকাটাও পাওয়া যাচ্ছে। তাই আইএসএল নিয়ে বিভিন্ন হতাশা থাকলেও রিলায়েন্সের সঙ্গেই থাকছে স্টার। কিন্তু যেভাবে এটিকের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে এতটাই অধঃপতন হয়েছে, যে আইএসএল কর্তৃপক্ষও বুঝে পাচ্ছে না, কী ভাবে একটা দল বাংলার মানুষের মন থেকে এভাবে হারিয়ে গেল। তাই বাংলায় আইএসএলে মন ফেরাতে ভরসা এখন ব্যারেটো।
[ লিগ জয়ের আগাম উৎসব শুরু মোহনবাগানে, সতর্ক শংকরলাল]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.