স্টাফ রিপোর্টার: ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি খুব সম্ভবত ভাবতে পারেননি যে তাঁর প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে এমন ‘উপদ্রব’ এসে উপস্থিত হবে! কোথায় পারথে উৎসবের মেজাজ চলছিল ভারতীয় ক্রিকেট মহানায়কের বিয়ের বর্ষপূর্তি ঘিরে। কিন্তু দ্রুতই সেসব হঠে গিয়ে এভাবে মহাবিতর্ক তাঁকে বিঁধে ফেলবে, ভাবতে পেরেছিলেন বিরাট?
সিওএ প্রধান বিনোদ রাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ডায়না এডুলজি তো কোহলিকেই হাতিয়ার বানিয়ে ফেললেন! রাইকে আগুনে চিঠি লিখে সিওএ সদস্য লিখে দিলেন, বিরাট যদি রবি শাস্ত্রীকে কোচ চেয়ে পেয়ে যান তাহলে হরমনপ্রিত কী দোষ করলেন? তিনি কেন রমেশ পওয়ারকে কোচ চেয়ে পাবেন না? বিনোদ রাই বনাম ডায়না এডুলজি সংঘাত নতুন নয়। মি টু বিতর্কে আক্রান্ত বোর্ড সিইও রাহুল জোহরিকে নিয়েও আগে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন দুজন। এবার ভারতীয় মহিলা টিমের কোচ নির্বাচন নিয়েও শুরু কোন্দল। বিস্ফোরক চিঠিতে ডায়না লিখে দিয়েছেন যে, শাস্ত্রীকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কোচ করে দিয়েছিলেন সিওএ প্রধান আর জোহরি মিলে। তাও শুধুমাত্র বিরাটের ইচ্ছেকে প্রধান্য দিয়ে। তাহলে হরমনপ্রিতের বেলায় সেটা করতে অসুবিধে কোথায় হচ্ছে রাইয়ের?
‘মহিলা ক্রিকেটারদের বোর্ডকে ই-মেল করার মধ্যে কোনও দোষ দেখি না। অন্তত হরমনপ্রিত-স্মৃতিরা নিজেদের মতামত সোজাসুজি জানিয়েছে। বিরাটের মতো নিত্য জোহরিকে মেসেজ করেনি। যে ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে আপনারা কোচ পালটে ফেলেছিলেন,’ সিওএ প্রধানকে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন ডায়না। এখানেই তাঁর বোমা বর্ষণ শেষ হয়নি। ‘আমি তখনও আপত্তি করেছিলাম। বলেছিলাম যে
লোকটা (শাস্ত্রী) সময়ে আবেদনই করল না তাকে কী করে কোচ করে দেওয়া হল? অনিল কুম্বলে একজন কিংবদন্তি। কিন্তু ওঁর চরম সম্মানহানি করে স্রেফ খলনায়ক বানিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল। পরিষ্কার বলছি, নিয়মের বাইরে গিয়ে শাস্ত্রীকে কোচ করা হয়েছিল সেদিন। ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত সেদিন শোনেনি বিরাট। কুম্বলেকে কোচ হিসেবে রেখে দেওয়ার কথা কমিটি বলার পরেও শোনেনি। তাহলে এবার কেন হরমনপ্রিতদের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না?’
দেড় বছর আগে গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময় কোহলি বনাম কুম্বলে দাবানলে ভয়ংকরভাবে পুড়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট। এবার রমেশ পওয়ার বনাম মিতালি রাজ বিতর্কেও একই জিনিস ঘটছে মহিলা ক্রিকেটে। সোজাসুজি বললে, টিমেই বিভাজন ঘটে গিয়েছে। হরমনপ্রিত-স্মৃতি মন্দনারা চলে গিয়েছেন পওয়ারের দিকে। মিতালি আবার প্রকাশ্যে অসূয়া দেখিয়েছেন পওয়ার নিয়ে। সিওএ চেয়েছিল, শচীন-সৌরভদের ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি মহিলা টিমের কোচ নির্বাচন করুক। কিন্তু সৌরভরা সরে যাওয়ায় কোচ নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে মঙ্গলবার নতুন অ্যাড হক কমিটি গঠন করে সিওএ। যাতে রয়েছেন কপিল দেব, অংশুমান গায়কোয়াড় এবং প্রাক্তন মহিলা ক্রিকেটার শান্তা রঙ্গস্বামী। এর পরপরই পৌঁছায় ডায়নার আগুনে চিঠি। যেখানে তিনি লিখে দেন, বিনোদ রাই নিজের ইচ্ছেমতো সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বোর্ড সিইও আর জেনারেল ম্যানেজার ক্রিকেট অপারেশনস সাবা করিমের উচিত এসব অবিলম্বে বন্ধ করা।
ঘটনা হল, ডায়নার চিঠির পরপর সিওএ প্রধানও একটা চিঠি লিখলেন। ডায়নাকে একহাত নিয়ে চিঠি পাঠানো হল সব বোর্ড কর্তাদের। রাই লিখে দিলেন, কোহলি-কুম্বলে বিতর্কের সঙ্গে পওয়ার বিতর্কের ফারাক আছে। ‘বিরাট আর কুম্বলের মধ্যে মতান্তর ঘটেছিল। তাই কুম্বলে সরে যায়। কিন্তু টিম থেকে কোনও ই-মেল পাঠানো হয়নি। যা এখানে হয়েছে। টিমের বোঝা উচিত, টিমের ভোটের উপর কোচ নির্বাচন নির্ভর করে না। আর সিনিয়র প্লেয়ারদের মতামতকে সম্মান দেওয়ারই যদি ব্যাপার হয়, তাহলে সবচেয়ে সিনিয়র প্লেয়ার মিতালি রাজের মতকেই বা সম্মান দেওয়া হবে না কেন? আমাদের কি টিমের উন্নতির দিকে আরও মন দেওয়া উচিত নয়?’ লিখেছেন রাই। আর এরপর বিনোদ রাই ও ডায়নার যুদ্ধের নতুন দরজা খুলে গেল। ডায়নাই খুলে দিলেন। দুঃখজনকভাবে তাঁর অস্ত্র হয়ে গেলেন বিরাট কোহলি!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.