Advertisement
Advertisement

হেরেও স্বপ্ন দেখতে শিখিয়ে গেল ফুটবলবিশ্বের ‘বাজিগর’ ক্রোয়েশিয়া

ক্রোয়েশিয়ার এই লড়াই স্বপ্ন দেখাবে বহু ছোট দেশকেই।

 Croatia lost but steals the hearts of football-lovers
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 16, 2018 12:00 am
  • Updated:July 16, 2018 12:08 am  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হেরেও যারা জিতে যায় তাদের কী বলে? বাজিগর। হিন্দি সিনেমার এ সংলাপ লুকা মদ্রিচদের জানার কথা নয়। তবে বাজিগরের সমনাম হিসেবে এবার যে কেউ বলতে পারে ক্রোয়েশিয়া। হ্যাঁ, ইতিহাস বলবে ২০১৮ বিশ্বকাপে ফাইনালে হেরেই গিয়েছেন মদ্রিচ, রাকিতিচরা। তবে সেটুকুই তো সব নয়। যেন এই হেরে যাওয়ার ছাই থেকেই ফিনিক্সের উত্থান সম্ভব, সমস্ত ছোট ছোট দেশগুলিকে আজ সে স্বপ্নই দেখিয়ে গেল ক্রোয়েশিয়া।

[  খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে হাতে বিশ্বকাপ, ফুটবল ইতিহাসে বিরল কৃতিত্ব দেশঁর ]

Advertisement

ফিফার তরফে সোনার বল যখন হাতে তুলে দেওয়া হল ক্রোয়েশিয়ার ক্যাপ্টেন মদ্রিচের হাতে, তখন ধীর পায়ে তিনি এগিয়ে গেলেন ক্রোট প্রেসিডেন্টের দিকে। কী বললেন? বললেন, পারলাম না স্বপ্ন সত্যি করতে। ক্রোট প্রেসিডেন্ট বললেন, কে বলেছে! বরং তোমরা স্বপ্ন দেখতে শেখালে গোটা ফুটবলবিশ্বকে। গাল ছুঁয়ে আদর করে দিলেন তাঁর দেশের অধিনায়কের। বাইরে তখন অল্প অল্প বৃষ্টি পড়ছে। প্রেসিডেন্টের চোখেও জল। হ্যাঁ, এ সংলাপ কাল্পনিকই। তবে এ কল্পনায় দোষ নেই। বস্তুত, এই বিশ্বকাপ যখন শুরু হয় তখন কেউ দূরতম স্বপ্নেও ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপের ফাইনালে ভাবেনি। ট্রফির দাবিদার ভাবা তো দূর কথা, গ্রুপ পর্ব টপকাতে পারবে বলেও কেউ বিশ্বাস করেনি। কিন্তু যেখানে ভাবনার সমাপ্তি, সেখানে স্বপ্নের শুরু। ক্রোটরা সেই স্বপ্ন দেখাতে শুরু করলেন গোড়া থেকেই। একে একে বড় দলরা আটকাল মদ্রিচদের কাছে। এমনকী মেসির আর্জেন্টিনাকেও মাটি ধরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরাই। সেদিনই যেন ফুটবল বিশ্বে এক নতুন দেশের জন্ম হয়েছিল, যারা তারকা হয়ে উঠতে পারে।

[  ফাইনালে ট্র্যাজিক হিরো, আত্মঘাতী গোল করে দুঃস্বপ্নের রেকর্ড মান্ডজুকিচের ]

একদিকে যখন খেলোয়াড়রা মাঠে নাছোড় জেদের পরিচয় দিচ্ছেন, তখন ফুটবল উন্মাদনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন ক্রোট প্রেসিডেন্ট কিত্রাভিচ। ভিভিআইপি বক্সে দেশের জার্সি পরে বসার নিয়ম নেই। স্বয়ং মারাদোনাও পরেন না। পুতিনও না। কিন্তু তিনি পরেন। নিয়ম ভাঙতে হবে বলে একবার বক্স ছেড়ে দেশের সমর্থকদের সঙ্গে বসেই খেলা দেখেছিলেন। এদিন অবশ্য পুতিনদের পাশে দেশের জার্সি পরেই বসেছিলেন। কোত্রাভিচ যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, হতে পারে মাত্র ৪২ লক্ষ বাসিন্দা তাঁর দেশের, কিন্তু ফুটবল আবেগ কোনও সংখ্যায় বাঁধা থাকে না। তাই বহু একশো কোটির দেশকেও তাঁরা গোল দিতে পারেন। বস্তুত দিলেনও। দিলেন পরিকাঠামো, আবেগ, লড়াই আর দক্ষতায়। বুঝিয়ে দিলেন, ছোট-বড় আসল কথা নয়, হিসেব বদলে দিতে হয় সংগ্রামের ইতিবৃত্তে। তথাকথিত বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে সে ইতিহাসই রচনা করলেন ক্রোটরা। হয়তো বিশ্বকাপ জেতেনি তারা। তবে এরপর থেকে ক্রোটদের আর কেউ হিসেবের বাইরে রাখবেন না।

[  ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্নভঙ্গ, দ্বিতীয়বার বিশ্বজয়ী ফ্রান্স ]

তবে এ শুধু ক্রোয়েশিয়ার একার অর্জন নয়। বরং ছোট ছোট সব দেশ, যারা বিশ্বকাপের স্বপ্ন বুকে লালন করে চলে, তাদেরও স্বপ্ন দেখাতে শেখাল ক্রোয়েশিয়া। যেন জানিয়ে দিল, পরাজয়ই শেষ কথা নয়। পরাজয় আর পরাভূত হওয়া এক জিনিস নয়। বরং এই হারের ধ্বংসস্তূপ থেকেই উড়ান দেয় নতুন স্বপ্ন। হয়তো সেভাবেই ফিরে আসবে ক্রোয়েশিয়া। হয়তো সেভাবেই উঠে আসবে অন্য কোনও দেশ। আজ যে তরুণী চোখের জল ফেললেন, হয়তো অন্য কোনওদিন আনন্দাশ্রু হয়েই তা লেগে থাকবে সোনালি ট্রফির গায়ে। এই অপেক্ষাটুকুর নামই ভালবাসা, এই ভালবাসার নাম ফুটবল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement