পিংক বলেও বিরাট কোহলির আরও একটা স্মরণীয় ইনিংস। ভারতীয় পেসারদের অব্যাহত থাকা রাজ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সংগঠন দক্ষতা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতেও রবি শাস্ত্রীর মনে সবচেয়ে বেশি ভিড় করে আসছেন তাঁর খর্বকায় উইকেটকিপার। শুনলেন গৌতম ভট্টাচার্য।
প্রশ্ন: আরও একটা সিরিজ জয়!
শাস্ত্রী: ইয়েস। কী বলটাই না করল আমার পেসাররা। উইকেট মোটেও দারুণ বোলার্স ফ্রেন্ডলি ছিল না। তাতেও কী আগুন দেখলেন? এখনও বুমরা বাইরে বসা। তাতেও এই। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ভারতের সেরা ব্যাটিং লাইন আপকেও এরা চ্যালেঞ্জ করত।
প্রশ্ন: আপনার টিমের সম্পর্কে দেড়-দুই বছর আগেও হেড কোচের প্রশস্তি নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছিল। যখন আপনি বলেছিলেন, এদের মধ্যে সর্বকালের সেরা টিমের মশলা দেখছেন। এখন অনেকেই কিন্তু বলছেন, কোহলির টিমটা সত্যি ভাল।
শাস্ত্রী: আজ বলছেন। তখন যখন আমি বলেছিলাম, কী সমালোচনাটাই না হয়েছিল। আমার কথা হচ্ছে ওটা তো আমার মত ছিল। আমি তো কাউকে বলিনি ভাই আমার ওপিনিয়ন শুনে সমর্থন করো। আমি যেমন জাজমেন্টাল নই। এই পৃথিবীতে যে যার মতো মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। যেমন তিন বছর আগে আমি যখন বলেছিলাম, ঋদ্ধিমান সাহা বিশ্বের এক নম্বর কিপার, সবাই মুচকি হেসেছিল।
প্রশ্ন: ঠিক কোথায় বলেছিলেন মনে করাবেন?
শাস্ত্রী: শ্রীলঙ্কায় বলেছিলাম যখন আমরা একটা টেস্ট ম্যাচ হেরে পরেরটায় ড্র করি। সেকেন্ড টেস্ট ম্যাচে ওর কিপিং দেখে আই গট কনভিন্সড যে বিশ্বে এই মুহূর্তে ওর চেয়ে ভাল কিপিং কেউ করছে না।
প্রশ্ন: পিংক টেস্টে গোলাপি বলে ঋদ্ধির কিপিং নিয়ে কী বলবেন?
শাস্ত্রী: বলব অত্যাশ্চর্য! আমি বলব, ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে যে চল্লিশ বছর আমি প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছি সেই সময়ের মধ্যে ঋদ্ধির চেয়ে ভাল কিপার আমি দেখিনি!
প্রশ্ন: কী বলছেন? মনে রাখবেন আপনি সৈয়দ কিরমানির সঙ্গে খেলেছেন। ধোনিকে দেখেছেন।
শাস্ত্রী: কিরমানি সবচেয়ে কাছে থাকবে ঋদ্ধির। কিরমানি ওয়াজ ব্রিলিয়ান্ট। কিন্তু কিরির একটা অ্যাডভান্টেজ ছিল। কিরি রাজ্য পর্যায়ে ন্যাশনাল টিমের দু’জন বোলার প্রসন্ন আর চন্দ্রশেখরকে নিয়মিত কিপ করার সুযোগ পেয়েছে। কিরি টেকনিক্যালি এত পারফেক্ট ছিল না। ন্যাচারাল ছিল। ঋদ্ধিকে আমি এগিয়ে রাখব। কারণ ও ন্যাচারাল দক্ষতা এবং টেকনিক্যাল পারফেকশন দু’টো নিয়েই এসেছে।
প্রশ্ন: চোট সারিয়ে ফেরা ঋদ্ধি আর পুরনো ঋদ্ধি এক না হতে পারেন, এমন ভয় কখনও পেয়েছিলেন?
শাস্ত্রী: না পাইনি। ফেরার পর প্রথম মিনিট থেকেই ও একই রকম সাবলীল। বলছি না তিন বছর আগে বলেছিলাম। আজ সবাই বলছে। কী কী বল এই টেস্টে বাঁচিয়েছে বলুন তো। টেকনিক্যালি এত নিখুঁত যে এমন কোনও দিন আসবে না যে দিন অনেকগুলো ক্যাচ ফেলল। ঋদ্ধির লেভেলটা হল অ্যালান নট!
প্রশ্ন: এ তো কিপারের স্বপ্নের সার্টিফিকেট।
শাস্ত্রী: ইয়েস ও সেই লেভেলের। মনে রাখবেন এই অধম কথাটা প্রথম বলল।
প্রশ্ন: ঋদ্ধিকে অন্য ফর্ম্যাটে কেন ট্রাই করছেন না?
শাস্ত্রী: অন্য ফর্ম্যাটের দাবি আলাদা থাকে (সতর্ক গলা)। পাওয়ার বেশি দরকার, ফ্লেক্সিবিলিটি, স্ট্রাইক রেট।
প্রশ্ন: ঋদ্ধির তো আইপিএল ফাইনালে সেঞ্চুরি রয়েছে।
শাস্ত্রী: আই নো। বাট দেখা যাক।
প্রশ্ন: ঋষভ পন্থের কী হল? তাঁর ওপর তো চাপ বেড়েই চলেছে।
শাস্ত্রী: ইয়েস চাপ বাড়ছে। কিন্তু পন্থ ফিরবে। ওর মধ্যে প্রচুর ট্যালেন্ট। পন্থের বয়স কম। আর একটু সময় দিতে হবে। আমার মনে হয়, সৌরভও যেমন তিন-চার বছরের একটা বিরতি পেয়ে নিজেকে দারুণ ভাবে ঝালিয়ে নিয়ে ফেরত এসেছিল, পন্থের বেলাতেও তাই হবে।
প্রশ্ন: পন্থের কিপিং?
শাস্ত্রী: কিরণ মোরে ওকে দেখছে। আমি শিওর বেটার কিপার হয়ে ফেরত আসবে।
প্রশ্ন: বিরাট কোহলির সেঞ্চুরি এবার গোলাপি বলেও।
শাস্ত্রী: বিরাট যখন ২০ ব্যাটিং আমি ড্রেসিংরুমে বলে দিয়েছিলাম, এ সেঞ্চুরি করবে। ব্রিলিয়ান্ট ব্যাটিং।
প্রশ্ন: গোলাপি বলের বিরাট-ব্যাকরণটা কী?
শাস্ত্রী: আরও টাইট। আরও স্ট্রেট। আরও সোজা সোজা। কী ইনিংসটাই না খেলেছে বিরাট! অপূর্ব!
প্রশ্ন: পিংক বল নিয়ে কী বলবেন?
শাস্ত্রী: পিংক বল নিয়ে এস জি কোম্পানিকে কিন্তু আরও খাটতে হবে। আমি সৌরভকে খেলার পর বললামও, ওয়েল ডান। দারুণ করেছ। কিন্তু বলটা আরও ভালভাবে ওদের তৈরি করতে হবে। ওরা দু’টো ল্যাকার দিয়েছে। সেই দু’টোই ইনিংস কিছু দূর এগোবার পর চলে যাচ্ছে। গিয়ে গোলাপি থেকে বলটা হয়ে যাচ্ছে কালো। তখন খুব হার্ড হয়ে যাচ্ছে। না করছে সুইং, না স্পিন। আর ব্যাটসম্যান তখন ভাল সাইট করতে পারছে না। অরিজিনাল রংটাই তো নেই।
প্রশ্ন: সৌরভের পিংক ম্যাচ সংগঠন কেমন লাগল?
শাস্ত্রী: আমি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ম্যাচ অর্গানাইজেশন দেখেও বলেছিলাম, খুব ভাল। এবার আরও ভাল লাগল যে ভাবে সিএবি অফিশিয়ালরা জান লড়িয়ে কাজ করেছে। মাত্র এই ক’দিনে এত বড় একটা ম্যাচ অর্গ্যানাইজ করা সহজ কথা নয়। আমার সবচেয়ে চমৎকার লেগেছে স্টেডিয়ামের বাইরে গোটা শহরটাকেও ওরা যে ভাবে গোলাপি রংয়ে ছেয়ে দিয়েছে। এত লোক আজ প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া ম্যাচেও মাঠে ভিড় করেছে। আমি বলব প্রোজেক্ট সুপার সাকসেসফুল।
প্রশ্ন: কলকাতার লোকের কিন্তু একাংশের এখনও ধারণা আপনার সৌরভ সম্পর্কে অ্যাসেসমেন্টে যথেষ্ট উদারতার অভাব থাকে।
শাস্ত্রী: আচ্ছা যে লোকটা দু’হাজার সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেটকে উদ্ধার করল তার ক্রিকেটিং কন্ট্রিবিউশন নিয়ে অশ্রদ্ধা প্রকাশ কি সম্ভব? ও যখন দায়িত্ব নিয়েছিল তার ঠিক আগে কিছু চোর খেলছিল ইন্ডিয়ান টিমের হয়ে। স্পনসর সব বেরিয়ে গিয়েছিল ক্রিকেট থেকে। মানুষের মনে ক্রিকেটারদের সম্পর্কে ঘুরছিল চূড়ান্ত অবিশ্বাস। সেই অবস্থা থেকে যে লোকটা চাকা ঘোরালো তার কন্ট্রিবিউশন অশ্রদ্ধা করব, আচ্ছা আমি কি এতটাই মূর্খ?
ছবি: অচিন্ত্য রায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.