wasim akram destroyed us that day said former england cricketer chris lewis
‘বিধ্বংসী আক্রম সেদিন আমাদের শেষ করে দিয়েছিল’, তিরিশ বছর আগের ফাইনাল নিয়ে নস্ট্যালজিক ক্রিস লুইস
ইংল্যান্ড দুশো রান করুক আর অল্প রানে আটকে রাখুক পাকিস্তানকে, বলছেন প্রাক্তন অলরাউন্ডার।
Advertisement
Published by: Krishanu Mazumder
Posted:November 12, 2022 3:39 pm
Updated:November 12, 2022 10:52 pm
কৃশানু মজুমদার: ”আমি চাই ইংল্যান্ড দুশো রান করুক। আর কম রানে পাকিস্তানকে বেঁধে রাখুক। ওয়ানডের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটাও জিতে নিক ইংল্যান্ড।”
জস বাটলারদের নিয়ে আশার কথা শোনাচ্ছেন তিনি। রবিবার বাটলার-হেলসরা যে মাঠে বিশ্বজয়ের জন্য নামবেন, তিরিশ বছর আগে এই মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডেই তাঁর স্বপ্ন ভেঙেছিল।
ওয়াসিম আক্রম (Wasim Akram) নামের এক বাঁ হাতি বোলার দু’ বলে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে দিয়েছিলেন। প্রথম বলে অ্যালান ল্যাম্ব। ঠিক তার পরের বলেই ক্রিস লুইসের উইকেট নাড়িয়ে দিয়েছিলেন আক্রম। সেই ক্রিস লুইস (Chris Lewis) সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে লন্ডন থেকে বললেন, ”ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হোক, এটা আমার আশা। বাট ইউ ক্যান নেভার বি সিওর। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে (T-20 Cricket) নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। আর প্রতিপক্ষ যদি হয় পাকিস্তান, তাহলে তো কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করাই সম্ভব নয়।” তাঁর থেকে ভাল এই সত্য আর কে জানেন! [আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের সেরা ৯ তারকার নাম ঘোষণা আইসিসির, তালিকায় ভারতের দুই]
একসময়ে গোটা ইংল্যান্ড মনে করত ইয়ান বোথামের উত্তরসূরি হবেন ক্রিস লুইস। জনশ্রুতি বলে, কোনও সফরে গেলে তাঁর সঙ্গে কেউ ঘর শেয়ার করতে চাইতেন না। গায়ানায় তাঁর জন্ম। ১০ বছর বয়সে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ছেড়ে ইংল্যান্ডে চলে এসেছিলেন ক্রিস লুইস।
১৯৯৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে হঠাৎই ন্যাড়া হয়ে গিয়েছিলেন। অনুশীলনে টুপি না পরে নামার মূল্য চোকাতে হয়েছিল তাঁকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রবল রোদে সানস্ট্রোক হয়ে গিয়েছিল লুইসের। তাঁকে নিয়ে অনেক গল্প। ১৯৯২ বিশ্বকাপের সময়ে তাঁর রুমমেট ছিলেন ডেরেক প্রিঙ্গল। একসময়ে তিনি এই প্রতিভাবান ক্রিকেটারকে নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছিলেন। লুইসের চরিত্র সম্পর্কে বলেছিলেন, ”প্রতিভাবান, আত্মপ্রেমী, নিরাশ এবং অসম্ভব রকমের বিনয়ী।” বিশ্বকাপ খেলা লুইসকে জীবনের অন্ধকার দিকটাও দেখতে হয়েছিল। কোকেন পাচারের অভিযোগে ১৩ বছরের জেল হয়েছিল। মুক্তি পেয়েছিলেন সাড়ে ছ’ বছরের মাথায়। ব্যাট করার সময়ে প্রচণ্ড জোরে বল মারতেন তিনি। ভারতের বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ে টেস্ট সেঞ্চুরিও ছিল। এখন সব অতীত। লুইস বলছেন, ”ক্রিকেট এখন আর খেলি না। শরীরে এখন থাবা বসিয়েছে বয়স।”
৯২ বিশ্বকাপের সময়ে তিনি ২৪ বছরের যুবক। মেলবোর্নের সেই ফাইনালের স্মৃতি এখনও টাটকা তাঁর মনে। লুইস বলছিলেন, ”দিনটা স্পষ্ট মনে আছে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রায় ৮০-৯০ হাজার দর্শক উপস্থিত হয়েছিলেন সেদিন। শেষটা খুব হৃদয়বিদারক ছিল আমাদের জন্য। বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার স্মৃতি কি ভোলা যায় কখনও?”
ফাইনালে পাকিস্তানের ২৪৯ রান তাড়া করতে নেমে নিল ফেয়ারব্রাদার আর অ্যালান ল্যাম্ব ৬৯ রান যোগ করে ফেলেন। ১৬ ওভারে দরকার আর ১১০ রান। জেতার সমীকরণ খুব একটা কঠিন ছিল না ইংল্যান্ডের জন্য। ঠান্ডা মাথায় খেলতে পারলে কাপ উঠবে গ্রাহাম গুচের হাতেই।
ঠিক এই সময়ে পাক অধিনায়ক ইমরান খান বল তুলে দিলেন তাঁর সেরা অস্ত্র ওয়াসিম আক্রমের হাতে। ক্রিস লুইস বলছেন, ”বিশ্বকাপ ফাইনালের ছবিটা একার হাতেই বদলে দিয়েছিল ওয়াসিম। অ্যালান আর নিল ফেয়ারব্রাদার বেশ ভালই খেলছিল। আমাদের ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।”
তখনও ক্রিস লুইস, ডারমট রিভ, ডেফ্রিটার্সের মতো অলরাউন্ডারদের ব্যাট করা বাকি। লুইস বলছেন, ”বিধ্বংসী আক্রম পরপর দু’ বলে অ্যালান আর আমাকে ফেরত পাঠিয়ে ম্যাচ নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসে। ফাইনালে নিজের জাত চিনিয়েছিল ওয়াসিম। হোয়েন চিপস আর ডাউন, হি ক্যান প্রোডিউস দ্যাট সট অফ আ কোয়ালিটি।” এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলছিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অলরাউন্ডার।
পাকিস্তানের কিংবদন্তি বাঁ হাতি বোলার পরবর্তীকালে বলেছিলেন, ওই দুটো উইকেট নেওয়ার পরিকল্পনা আগেই করা হয়েছিল। ল্যাম্বকে ফেরানোর পরে অধিনায়ক ইমরান তাঁর সেরা অস্ত্রকে বলেছিলেন, ”ক্রিস লুইস কিন্তু অনুমান করছে তুমি ওকে ইয়র্কার দেবে।”
লুইস বলছেন, ”নব্বইয়ের দশকে রিভার্স সুইং খেলা খুব কঠিন ছিল। আর ওয়াসিম সব অর্থেই রিভার্স সুইংয়ের পতাকাবাহক ছিল। দুটো বলে ওয়াসিম দেখিয়ে দিয়েছিল ওর কোয়ালিটি। অ্যালান যে বলটায় আউট হয়েছিল, সেটা অফে পড়ে ওর অফস্টাম্প নাড়িয়ে দিয়েছিল।পরবর্তী বলটা আমি কাট করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাটে লেগে বল আমার লেগস্টাম্পে আঘাত করেছিল। আমি নিজের মনে মনে বলছিলাম, কী করলে এটা? আসল সময়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তুলে ধরেছিল এক দুর্দান্ত বোলার।”
আক্রমের ওই স্পেলটার প্রশংসা করে সেদিন ধারাভাষ্যকার রিচি বেনো বলছিলেন, ”আমার মনে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ পাকিস্তানের রাস্তায় দারুণ আনন্দে নাচতে শুরু করে দিয়েছে।”
তিরিশ বছর আগের এক টুর্নামেন্টের সঙ্গে এবারের বিশ্বকাপের দারুণ মিল। রবিবাসরীয় ফাইনালে মুখোমুখি সেই ইংল্যান্ড আর পাকিস্তান। এবার পাকিস্তান প্রায় ছিটকে যেতে বসেছিল। ভারত আর জিম্বাবোয়ের কাছে টানা দু’ ম্যাচ হেরে খাদের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল বাবর আজমের দল।
তার পরে উলটপুরাণ। গ্রুপের তিনটি ম্যাচ লাগাতার জিতে, শেষ চারে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালের ছাড়পত্র জোগাড় করে নেয় পাকিস্তান। ৯২ সালেও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লিগের খেলায় ৭৪ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। বরুণদেবের কল্যাণে ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে যায় দু’ দলের মধ্যে। বিপন্ন পাকিস্তান দারুণ ভাবে ফিরে আসে। ফাইনালে আসল সময়ে জ্বলে ওঠে। লুইস বলছিলেন, ”এভাবেও যে বিশ্বকাপ জেতা যায় তা কল্পনা করা যায় না। আই অ্যাম নট সিওর ইউ ক্যান এভার বি লাকি টু উইন আ ওয়ার্ল্ড কাপ। দিনটা সব অর্থেই পাকিস্তানের ছিল।”
এবারের প্রতিযোগিতায় ভারতকে শেষ চারের লড়াইয়ে দাঁড়াতেই দেয়নি ইংল্যান্ড। বাটলার ও হেলসের মারমুখী ব্যাটিংয়ে দশ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় তারা। লুইস বলছেন, ”আমার মনে হয় এবার ইংল্যান্ডের দারুণ সুযোগ রয়েছে। গত চার-পাঁচ বছরে সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ড অন্যতম সেরা দল। পঞ্চাশ ও কুড়ি ওভারের ম্যাচে ওরা দারুণ পারদর্শী। সেটাই প্রমাণ করে চলছে।” বেন স্টোকসদের প্রতিপক্ষ সম্পর্কে প্রাক্তন অলরাউন্ডারের মূল্যায়ন, ”নির্দিষ্ট দিনে পাকিস্তান খুবই বিপজ্জনক প্রতিদ্বন্দ্বী। ক্রিকেটের সব বিভাগেই প্রতিপক্ষকে টেক্কা দিতে পারে।”
রবিবাসরীয় যুদ্ধের আগে ফুটছে পাক-মুলুক। পঞ্চাশ ওভারের মতোই কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া ইংল্যান্ড। পঞ্চাশোত্তীর্ণ প্রাক্তন তারকা ক্রিস লুইসের চোখে ভিড় জমাচ্ছে তিরিশ বছর আগের সব স্মৃতি। কে বলে সময় সব ভুলিয়ে দেয়। সময় তো ফিরিয়েও দেয় অনেক কিছু।