গৌতম ভট্টাচার্য, লন্ডন: বাইরের পৃথিবী ভারতের সেমিফাইনাল বিদায় নিয়ে যতই মতামত বিভক্ত থাক, তিনি রবি শাস্ত্রী নিশ্চিত যে জনতা এ বারে ব্যতিক্রমী এবং তাঁর ছেলেদের সম্পর্কে খুবই সপ্রশংস। হেড কোচের পরামর্শ ভবিষ্যতে তাদের মতো গ্রুপে পয়লা নম্বর হয়ে ওঠা টিমকে যেন দু’টো সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। আজ শেষ কিস্তি।
প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাঁচটা একদিনের ম্যাচ আছে। সেখানে টিম নিয়ে আপনি যাচ্ছেন। আর আপনি জানেন না ধোনি অবসর নিচ্ছেন কি না। এটা হতে পারে?
শাস্ত্রী: এটা নির্বাচকদের দেখার কথা। ধোনির সঙ্গে আগে সিলেক্টররা কথা বলুক না।
প্রশ্ন: এ বার আপনি বিশ্বকাপের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একদিনও প্রেস কনফারেন্সে এলেন না কেন?
শাস্ত্রী: আমার এসে বিশেষ বলার কিছু ছিল না। ওদের পারফরম্যান্স ওয়াজ ডুইং দ্য টকিং। এই যে ফ্যানরাও ব্যর্থতাটা এত ভাল ভাবে নিয়েছেন তারও তো কারণ আছে। ওঁরা দেখেছেন যে টিমটা যখনতখন তিনশো করে জিতছে। আবার যে দুটো ম্যাচে হেরেছে তার একটাতেও তিনশো করেছে। আর একটাতেও প্রায় জিতে গিয়েছিল।
প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ল, ওল্ড ট্র্যাফোর্ড প্রেসবক্সে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল যেটা ভারত-পাক ম্যাচেও কখনও হয় না। প্রথমে কোহলির উইকেটটা যাওয়ার পর। তারপর ধোনির রান আউটের পর। দু’বারই ব্রিটিশ সাংবাদিকদের কী হাততালি।
শাস্ত্রী: আমি আশ্চর্য নই। ইংল্যান্ড সবচেয়ে ভয় পাচ্ছিল আমাদের। আমরা টুর্নামেন্ট থেকে আউট হয়ে গেলে ওদেরই তো সবচেয়ে রিলিভড লাগার কথা।
প্রশ্ন: কিন্তু এই যে টুর্নামেন্ট চার দিন বাকি থাকতে টিম বাইরে চলে গেল, এরপর কী মনে হচ্ছে?
শাস্ত্রী: এটা খুব আনফর্চুনেট যে ফাইনালিস্টরা তিনটে করে ম্যাচ হেরে ফাইনাল খেলছে। আর আমরা দু’টো ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্টের বাইরে। জাস্ট আধঘণ্টা খারাপ খেলায় এত বড় বিপর্যয় ঘটে গেল। এটাই জীবন। এটাই রুক্ষ বাস্তব।
প্রশ্ন: আপনি নিজেও নিশ্চয়ই বিধ্বস্ত?
শাস্ত্রী: বিধ্বস্ত বলব না। আমি জীবনের এতটা কাটিয়ে উঠেছি যে বিধ্বস্ত নয়, হতাশ বলব। খুব হতাশ। খাওয়ার পক্ষে বড় কঠিন পিল।
প্রশ্ন: বিরাট বলেছেন তিনি চান আইপিএলের মতো পরের বিশ্বকাপে দুটো সেমিফাইনাল হোক। গ্রুপ থেকে প্রথম হয়ে ওঠা টিম যাতে অবিচারের শিকার না হয়।
শাস্ত্রী: আমি এটা তো দেশ ছাড়ার আগের প্রেস কনফারেন্সেই বলেছিলাম। নইলে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যায়। এতগুলো ম্যাচ লিগে জিতে ওঠার পর একটা আধঘণ্টার হড়কে যাওয়ার এত বড় মাশুল দিতে হবে? সেটা তো অন্যায়।
প্রশ্ন: নানা সূত্রে শুনছি টিম খুব বিমর্ষ। কেউ কেউ চলেও গিয়েছেন। এঁদের কী বললেন?
শাস্ত্রী: বললাম, মাথা উঁচু করে হেঁটো। গত চার বছর ধরে তোমরা দুর্ধর্ষ ক্রিকেট খেলেছ। ওয়ানডে-তে এক নম্বর র্যাঙ্কিং জিতেছ, টেস্টে পেয়েছ। যেটা খারাপ গেল জাস্ট আধঘণ্টা। কী করবে? বাস্তবের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নাও। একেই বলে প্রফেশনাল স্পোর্ট।
প্রশ্ন: আপনার টিম ঘিরে ইংল্যান্ডে কেমন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখলেন?
শাস্ত্রী: মারাত্মক! কেন আপনারা টের পাননি? ক্রমাগত প্রশংসা হয়েছে আমাদের পারফরম্যান্সের। সেই এইট্টিজে লয়েডের টিমের যেমন প্রশংসা হত। বা অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে যেমন হইচই হত একটা সময়। এটা বিশাল চেঞ্জ। এই টিমই আমরা যখন ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছি তখন আমরা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। অথচ কেউ পাত্তাই দেয়নি।
প্রশ্ন: আপনার ক্রিকেটজীবনে এ রকম কখনও হয়েছে যে আধঘণ্টার ভুলে বিশাল ক্ষতি হয়ে গিয়েছে?
শাস্ত্রী: না এই পর্যায়ের ড্যামেজ কখনও হয়নি।
প্রশ্ন: নিউজিল্যান্ড ম্যাচের ফাঁকে টিভির একটা ক্লিপ ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ঋষভ পন্থ আউট হওয়ার পর কোহলি যেমন আপনার কাছে গজগজ করতে করতে গেলেন। ঋষভের স্ট্রোকটা কি চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে আপনারও মনে হয়েছে?
শাস্ত্রী: ঋষভ দারুণ ট্যালেন্ট। ও নিজেই শটটা খেলে সবচেয়ে বেশি আপসেট হয়েছে। কিন্তু ছেলেটা যতটুকু খেলেছে কী দারুণ খেলেছে। ওই রকম সিমিং কন্ডিশনে ব্যাট করছে ওকে একবারও দেখে মনে হয়েছে? মনে হচ্ছিল উইকেট একদম পারফেক্ট।
প্রশ্ন: ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট কে হবে বলে মনে হয়?
শাস্ত্রী: তিন-চারজন দারুণ পারফর্ম করেছে। রোহিত শর্মা আমার পছন্দ। জেসন রয়ও হয়ে যেতে পারে। ইংল্যান্ড টিমে ও থাকা একটা বাড়তি এজ। জসপ্রীত বুমরা আউটস্ট্যান্ডিং বল করেছে। ইংল্যান্ড জিতলে হয়তো জেসন রয়। তবে আমার পছন্দ তো বললাম। রোহিত।
প্রশ্ন: ফাইনাল কারা জিতবে বলে মনে হয়?
শাস্ত্রী: বলা ডিফিকাল্ট। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে ইংল্যান্ড ফেভরিট। কিন্তু নিউজিল্যান্ডকে আন্ডারডগ ভাবার কোনও কারণ নেই। মনে রাখবেন ফাইনালে ওদের প্রেশার কিন্তু অনেক কম। আর পরিবেশ যদি মেঘলা থাকে, বল যদি সিম করে নিউজিল্যান্ড বোলিং সাইড হলে কে বলতে পারে কী হবে?
প্রশ্ন: খারাপ লাগছে নিশ্চয়ই ফাইনাল যত কাছে আসছে?
শাস্ত্রী: খারাপ তো লাগছেই। ফাইনাল হওয়া উচিত ছিল আমাদের আর ইংল্যান্ডের মধ্যে। কী অদ্ভুত ভাবে সব ঘুরে গেল।
প্রশ্ন: কাপ জেতা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন?
শাস্ত্রী: সেটা বলব না কারণ ইংল্যান্ড দারুণ টিম। যা কিছু হতে পারত। কিন্তু ওটাই প্রপার ফাইনাল হত, আমরা আর ইংল্যান্ড।
প্রশ্ন: টিম ওয়েস্ট ইন্ডিজ রওনা হবে কবে?
শাস্ত্রী: ৩১ জুলাই যাব আমরা। মাঝে তিন-চার দিনের জন্য দেশে ফিরব। তারপর আবার লন্ডন। সেখান থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নতুন সিরিজ। নতুন চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্ন: আপনি তো রোববার লন্ডনেই। ফাইনাল দেখতে আসবেন?
শাস্ত্রী: টিভিতে একটুআধটু হয়তো দেখব। মাঠে যাওয়ার প্রশ্ন নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.