আলাপন সাহা: উমরান মালিকের (Umran Malik) উত্থানের কাহিনীর সাক্ষী তিনি। উমরানকে প্রথম দেখার পরই তাঁর মনে হয়েছিল ছেলেটা অনেক দূর যাবে। বাংলাদেশে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলার ফাঁকে অনুজকে নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন জাতীয় দলে খেলা জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম ক্রিকেটার এবং উমরানের পথ প্রদর্শক পারভেজ রসুল…
উমরানকে এরকম পারফর্ম করতে দেখে প্রচণ্ড আনন্দ হচ্ছে। সেই প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ওকে প্রথমবার দেখেই মনে হয়েছিল অসম্ভব প্রতিভাবান। ভয়াল গতিতে বোলিং করতে পারে। সবচেয়ে ভাল লাগছে এটা দেখে যে, এত কম সময়ের মধ্যে কী সুন্দর নিজেকে ঘষেমেজে নিয়েছে। প্রতিভা অনেকের থাকে, কিন্তু এত কম সময়ের মধ্যে ক’জন নিজেকে এত পরিণত করতে পারে?
উমরান কিন্তু সেটা পেরেছে। নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কী পরিমাণ পরিশ্রম করেছে, কতটা ত্যাগ করেছে, সেটা আমি দেখেছি। খুব বেশিদিন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেনি উমরান। কিন্তু তার মধ্যেই নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে চলে গিয়েছে। টানা দেড়শোর গতিতে বোলিং করেছে। শুধু গতি নয়, একইসঙ্গে কী লাইন লেংথে বোলিং করছে! ও জানে কখন কী করতে হবে। অসম্ভব পরিণতিবোধ না থাকলে এরকম বোলিং করা যায় না। সেটাও আবার আইপিএলের (IPL 2022) মতো মঞ্চে, যেখানে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটাররা খেলে।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদে (Sunrisers Hyderabad) প্রথমে নেট বোলার হিসাবে ও গিয়েছিল। সেখান থেকে এত কম সময়ের মধ্যে নিজেকে এখানে নিয়ে যাওয়া, সহজ ব্যাপার নয়। উমরানের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই কথা হচ্ছে। ওকে শুধু একটাই কথা বলেছি, এই জায়গাটা ধরে রাখতে হবে। আমি জানি ও সেটা পারবে। ভারতীয় ক্রিকেটে উমরান নিয়ে আজ যে পরিমাণ চর্চা হচ্ছে, সেটা দেখে প্রচণ্ড গর্ব হচ্ছে। আমি যখন প্রথম ভারতীয় দলে খেললাম, তখন মনে হয়েছিল আর হয়তো আমাদের ছেলেদের আর কষ্ট করতে হবে না। মনে হয়েছিল, এবার বদলে যাবে আমাদের জম্মু-কাশ্মীর ক্রিকেট। আমরাও বাকি রাজ্যগুলোর মতো সুযোগ সুবিধা পাবে। কিন্তু কোথায় কী? এখনও সেই একইরকম পরিস্থিতি। প্র্যাকটিসের জন্য ভাল মাঠে নেই। ভাল পরিকাঠামো নেই। উনিশশো পঞ্চাশে যে মাঠ ছিল, সেটাই এখন রয়েছে। বিশ্বাস করুন, এতটুকু উন্নতি হয়নি। এখানকার ক্রিকেটারদের কী পরিমাণ কষ্ট করতে হয়, সেটা আমি জানি। অথচ জম্মু-কাশ্মীরেও যে প্রতিভা রয়েছে, সেটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এখানকার ক্রিকেটারদেরও ভারতীয় দলে খেলার ক্ষমতা রয়েছে, আবার প্রমাণিত।
কিন্তু ওরা উৎসাহ পাবে কী করে? আমাদের ক্রিকেট সংস্থা কিছুই করছে না। জানি না ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের কাজটা ঠিক কী? দেখুন আমাদের ওখানে আরও অনেক প্রতিভা রয়েছে। কিন্তু ওদের দেখবে কে? সঠিক পরিকাঠামো, সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কী ওদের উন্নতি হবে? মনে রাখবেন সবাই কিন্তু উমরান হবে না। ও ব্যতিক্রম।
কিন্তু এরকম অনেকে রয়েছে যারা সঠিক পরিকাঠামো পেলে, সুযোগ-সুবিধা পেলে ভারতীয় দলে খেলতে পারবে। কিন্তু সেটাই তো ওরা পাচ্ছে না। জম্মু-কাশ্মীরের একজন জুনিয়র ছেলে কী করে উৎসাহ পাবে সাপোর্ট না পেলে? যার প্রভাব আমাদের ক্রিকেটে পড়ছে। শেষ তিনবছর আমরা কী পারফর্ম করতাম, আর এবার কী করেছি, সেটা দেখলেই বুঝতে পারবেন। এখন শুধু একটাই প্রার্থনা করছি, উমরানে সাফল্যে যেন আমাদের রাজ্যের ক্রিকেটকে বদলে দেয়!
[আরও পড়ুন: IPL 2022: দিল্লির কাছে হেরে প্লে অফের রাস্তা আরও কঠিন করে তুলল কেকেআর]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.